যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ‘ভিসা নীতি’ পাল্টে দিল বিএনপির সব সমীকরণ!

- নির্বাচন বানচালে চালাচ্ছে নানান কৌশলও।
- নতুন ‘ভিসা নীতি’ পাল্টে দিল দলটির সব সমীকরণ।
- ভিসা বন্ধেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
- এ কাজটি করেছিল বলে স্বীকার করেন বিএনপি নেতারাই।
- দ্বাদশ নির্বাচন বয়কট না করতে বিএনপিকে পরামর্শ দেয় দেশটি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে টালবাহানার শেষ নেই বিএনপির। সরকারের অধীনে ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্তেও অনড় দলটি। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়েও ধর্ণা দিয়েছে বিদেশিদের দুয়ারে। নির্বাচন বানচালে চালাচ্ছে নানান কৌশলও। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ‘ভিসা নীতি’ পাল্টে দিল দলটির সব সমীকরণ। সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা বন্ধেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে মাঠের বিরোধী দল বিএনপির দীর্ঘদিনের চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তথ্যমতে, ২০১৮ সাল তথা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে একাধিক লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছিল বিএনপি। স্যাংশন কিংবা নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিভিন্ন তদবিরও চালিয়েছিল দলটি। এরই প্রেক্ষিতে মাসে প্রায় ৫০ হাজার ডলার চুক্তিতে লবিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করে ‘ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিস’। আর ব্লু স্টারের সাব-কন্ট্রাক্ট হিসেবে কাজ করে ‘রাস্কি পার্টনার্স’। মার্কিন কংগ্রেস ছাড়াও প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সংস্থার কাছে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দেয়াই ছিল এসব ‘লবিস্ট ফার্ম’র কাজ। একই সঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার'র প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন নিয়োগদাতারা। কিন্তু কোটি টাকা খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ দিলেও শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের করে নিতে পারেনি বিএনপি।
তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে কক্সবাজারের আকরাম হত্যাকাণ্ডের জেরে ২০২১ সালে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে। বিএনপির লবিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র এ কাজটি করেছিল বলে স্বীকার করেন বিএনপি নেতারাই। এমনকি দেশে আরও কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা আসছে বলেও প্রচার-প্রচারণা চালায় দলটি। তবে পরবর্তীতে সরকারের সফল কূটনৈতিক উদ্যোগে বিএনপির মিথ্যাচার বুঝতে পেরে তাদের এড়িয়ে সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, যার ফলে বিগত কয়েক মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করেন।
অন্যদিকে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেব পরিচিত বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারকদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগকে বাধ্য করার জন্য ‘নিষেধাজ্ঞার হুমকি ব্যবহার করারও পরামর্শ দিয়ে চলেছে বলে সম্প্রতি ইংরেজি সাপ্তাহিক 'ব্লিজ' (blitz) তাদের এক প্ৰতিবেদনে উল্লেখ করে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুকেও যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দেয়নি। উল্টো অতি সম্প্রতি দ্বাদশ নির্বাচন বয়কট না করতে বিএনপিকে পরামর্শ দেয় দেশটি।
সর্বশেষ গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার সমর্থনের লক্ষ্যে নির্বাচনে বাধাদান বা সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে নতুন 'ভিসা নীতি' ঘোষণা করে। যার ফলে বিএনপির নির্বাচন বানচাল বা প্রতিহতের স্বপ্নও বিনষ্ট হয়। যুক্তরাষ্ট্র মূলত সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার গুরুত্ব অনুধাবন করে সহিংসতার বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আর এ কারণেই কিছুদিন পূর্বে শেখ হাসিনাকে বিএনপি নেতার প্রকাশ্যে ‘হত্যার হুমকি’ দেয়ার তীব্র নিন্দাও জানিয়েছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বাদশ নির্বাচন ঘিরে আন্দোলনের চেয়ে কূটনৈতিক পাড়ায় বেশি সময় দিয়েছে বিএনপি। তবে মেলেনি কাঙ্ক্ষিত কোনো সুফল। উল্টো ‘নতুন নীতি’ চালু করল দেশটি; যেন দলটির জন্য হিতে বিপরীত হলো। মনে হচ্ছে সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আগের চেয়েও অনেক বেশি গভীর হয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায় তারা। এ লক্ষ্যেই নতুন ‘ভিসা নীতি’ প্রণয়ন করেছে মার্কিন এই রাষ্ট্র। এই নীতিতে সব দলের পাশাপাশি বিএনপিকেও নির্বাচনে আসতে হবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।