ধর্মঘট নিষিদ্ধের আইন: কি ভাবছেন সাধারণ মানুষ

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:২৪, শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩, ২৫ চৈত্র ১৪৩০

বেআইনি ধর্মঘটের জন্য ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা এবং এ ধরনের ধর্মঘট নিষিদ্ধের বিধান সংবলিত বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। ৬ এপ্রিল অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল–২০২৩ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান। প্রস্তাবিত আইন (বিল) অনুযায়ী, জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার ক্ষেত্রে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করতে পারবে সরকার।

২০০৬ সালের ১১ অক্টোবর পাস হওয়া বাংলাদেশ শ্রম আইনের চর্তুদশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, "শিল্প কারখানা সংশ্লিষ্ট কোনো বিরোধ যদি আদালতের অধীনে নিস্পত্তির অপেক্ষায় থাকে তাহলে সেই বিষয়ে চলা ধর্মঘট সরকার নিষিদ্ধ করতে পারবে।" তবে এবার আইনের খসড়ায় জরুরি পরিষেবাও এই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। নতুন আইনে বিদ্যুৎ, পানীয় জল, টেলিফোন, ইন্টারনেট, অনলাইন সার্ভিস, ই-পরিষেবা, ব্যাংক, বিমা, সব ধরনের কলকারখানায় সরকার এই আইন প্রয়োগ করতে পারবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জননিরাপত্তা বা জনগণের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ সেবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা হওয়ার আশঙ্কা থাকে, এ ধরনের কোনো পরিষেবাও আইনের আওতাভুক্ত থাকবে। জনগণের জন্য অসহনীয় কষ্টের কারণ হচ্ছে বা হওয়ার শঙ্কা আছে এমন পরিষেবা এবং দেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারা দেশ বা দেশের কোনো অংশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আবশ্যকীয় কোনো বিষয়ও অত্যাবশ্যক পরিষেবার আওতাভুক্ত হবে।

এদিকে ‘বেআইনি ধর্মঘট নিষিদ্ধ করতে আইন হচ্ছে’ এই খবর শুনে সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরনের স্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। তারা বলছেন, এই আইনটি আরো আগেই দরকার ছিলো। কথায় কথায় যারা ধর্মঘট ডাকে তারা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি উপলব্ধি করতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক।

এই বিষয়ে কথা হয় রাজধানীতে বসবাস করা চাকরিজীবী রাজু আহমেদ এর সাথে। রাজু আহমেদ বলেন, আমার বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। যখন কোনো দল বা পরিবহন মালিকরা ধর্মঘট দেয় তখন আমার বাসা থেকে অফিসে যেতে খরচ হয় কয়েকগুণ বেশি টাকা। কারণ তখন লোকাল বাস চলে না, অফিসে যেতে হয় প্রাইভেটকার বা সিএনজিতে। এতে করে অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হয়।অনেক সময় কর্মস্থলে যাওয়াই সম্ভব হয়না। তাই বেআইনি ধর্মঘট নিষিদ্ধ হলে আমাদের ভোগান্তি কমবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তী রোগীর এক স্বজন বলেন, বিভিন্ন দাবি আদায়ে ডাক্তার ও নার্সরা মাঝেমধ্যেই ধর্মঘট পালন করে থাকেন। এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হন রোগিরা। টানা ধর্মঘট চলতে থাকলে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুঘটে অনেক আশঙ্কাজনক রোগীর। এছাড়া প্রসূতি ও অপারেশনের রোগীরাও জটিলতায় পড়েন। ফলে অবৈধ ধর্মঘট নিষিদ্ধ করলে এর থেকে নিস্তার পাবেন সেবাপ্রত্যাশিরা।

ব্যাংকে টাকা রেখে বিপদে আপদে কিংবা প্রয়োজনে টাকা উত্তোলন করা গ্রাহকের অধিকার। কিন্তু যখন ব্যাংকে কর্মরতরা ধর্মঘট ডাকেন তখন নিজের প্রয়োজনেও টাকা তুলতে পারেন না ব্যাংক গ্রহকরা। এতে অনেক সময় অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি ভোগান্তিতেও পড়তে হয় অনেকের। বিশেষ করে ব্যাবসায়ীদের দুর্ভোগে পড়তে  হয় সবচেয়ে বেশি। ধর্মঘট নিষিদ্ধের আইনকে যথার্থ বলে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে এমনটিই জানিয়েছেন এক ব্যবসায়ী।

শিক্ষার্থী ও সচেতন অভিভাবকরা জানান, কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই মাঝেমধ্যে নন এমপিও, পদোন্নতি, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ইত্যাদি ইস্যুতে ক্লাস-পরিক্ষা বর্জন করে ধর্মঘটের ডাক দেন শিক্ষকরা। এতে নিয়মিত পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটার পাশাপাশি সেশনজটসহ নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। ফলে অনেক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই জনস্বার্থে ধর্মঘট নিষিদ্ধের আইন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ উল্লেখিত সব খাতেই  প্রয়োজন। পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনটিকে যুগোপযোগী বলেও মত দেন বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article