প্রসঙ্গ র‌্যাব: পুরনো নাটকের নতুন মঞ্চায়ন ডয়চে ভেলে'র!

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:১৮, বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩, ২২ চৈত্র ১৪৩০

আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় দেশের এলিট বাহিনী র‌্যাবের পুরনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জার্মানিভিত্তিক গণমাধ্যম 'ডয়চে ভেলে'। ৩ এপ্রিল টেকনাফের একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে পুন:প্রচার করে র‌্যাবকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সংবাদ প্রকাশ করে গণমাধ্যমটি। পুরনো ঘটনাকে নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করায় সংবাদ মাধ্যমটির উদ্যেশ্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।

 

সংবাদ বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৮ সালের পুরনো প্রকাশিত ইস্যু নতুন করে সামনে আনা উদ্দেশ্যমূলক। এছাড়া ডয়েচে ভেল'র প্রতিবেদনটিও ত্রুটিযুক্ত।  প্রতিবেদনটিতে সাংবাদিকতার সঠিক নীতি-নৈতিকতা অনুসরণ করা হয়নি। প্রতিবেদনে অভিযুক্ত পক্ষের আত্মপক্ষ সমর্থনে তাদের সাক্ষাৎকার বা মতামত গ্রহন করা হয়নি।একতরফাভাবে  বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাক'র প্রতিনিধিসহ ভুক্তভোগী পরিবারের মতামত প্রচার করা হয়েছে, যা সাংবাদিকতার নীতি বহির্ভূত।

এক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে ক্রস ফায়ারে অংশগ্রহণ করেছে বলে দাবি করা দুজন অজ্ঞাত ব্যক্তির 'ছায়া ছবি' প্রদর্শন করে তাদেরকে সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করেছে, যারা ক্রস ফায়ারের নামে অনৈতিক হত্যাকান্ড বা গুমের সাথে জড়িত ছিল বলে দাবি করে। কিন্তু তাদের দাবি কতটুকু নির্ভুল বা সত্য তা যাচাই না করেই অনুমানের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। সমালোচকরা বলছেন, প্রতিবেদনটি দেখে মনে হয়েছে দুজন ব্যক্তিকে র‌্যাব কর্মকর্তা সাজিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া তাদের অভিযোগের বিপক্ষে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান র‌্যাব'র কোনো বর্তমান বা সাবেক কর্মকর্তার মতামত বা সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়নি, যা একপেশে, দুর্বল ও নীতিবিরুদ্ধ সাংবাদিকতার পরিচায়ক।

ডয়েচে ভেল'র উক্ত প্রতিবেদনে অজ্ঞাত র‌্যাব কর্মকর্তা পরিচয়ে হাজির করা সদস্য কতৃক কথিত 'পরিকল্পিত ক্রসফায়ার'র যে চিত্র  আঁকা হয় সেটিও ভুল বলে দাবি করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন 'ক্রস ফায়ার'র যে কল্পিত চিত্র দেখানো হয়েছে সেটি মোটেই বাস্তব সম্মত নয়, কেননা এতে নিজেরাই আহত বা নিহত হবার ঝুঁকি থাকে, এমনকি সামান্য ভুলে আশেপাশের সাধারণ মানুষও আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। কাজেই একটি পেশাদার প্রশিক্ষিত বাহিনীর পক্ষে এমন কাঁচা 'পরিকল্পনা চিত্র' অঙ্কন গ্রহণযোগ্য নয়।

এছাড়া র‌্যাব জন বিচ্ছিন্ন, টহল দেয়া সহজ, ক্যামেরামুক্ত স্থানে 'ডেথ অপারেশন' চালায় বলে যে দাবি করা হয়েছে তাও সঠিক নয় বলে দাবি করেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা । তিনি বলেন, র‌্যাবের কথিত 'ক্রস ফায়ারে'র একাধিক ঘটনা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে, যা ওই প্রতিবেদনে দাবিকৃত কমেরামুক্ত এলাকায় 'পরিকল্পিত হত্যাকান্ড'র দাবিকে মিথ্যা প্রমাণিত করে।

তিনি বলেন, পরিকল্পিত হত্যকাণ্ডের কোনো ভিডিও বা অডিও ফাঁস হবার কথা নয়, যা একরামুল হক হত্যাকান্ডে ঘটেছে। কাউকে হত্যা করার সময় তার হাতে মোবাইল দিয়ে তার পরিবারের সাথে শেষ কথা বলার সুযোগ দান, এসব চলচ্চিত্রে ঘটে, বাস্তবে নয়।

উল্লেখ্য, ডয়চে ভেলের ৩ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ বিশ্লেষকরা বলছেন,  র‌্যাব কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল করার নজির রয়েছে, কিন্তু উক্ত প্রতিবেদনে অজ্ঞাত দুজন ব্যক্তিকে র‌্যাব পরিচয়ে তাদের দ্বারা যে একপেশে ও ঢালাও অভিযোগ আনা হয়েছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে, তা একেবারেই সাংবাদিকতা নীতিমালা বিরুদ্ধ এবং দুর্বল চিত্রনাট্যও বটে। এছাড়া সন্ত্রাসসহ অপরাধ দমনে এই বাহিনীর যে ভূমিকা সর্বজন স্বীকৃত তাও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।কাজেই এটিকে নিঃসন্দেহে একটি পক্ষপাত দুষ্ট ও উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদন বলা যায়।

Share This Article