ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কি শুধু বাংলাদেশেই?

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:০৮, মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩, ২১ চৈত্র ১৪৩০

আমরা জানি যে, প্রত্যেকটি আইনের মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করা, শৃঙ্খলা আনয়ন করা এবং প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান বা সংশোধনের ব্যাবস্থা করা। একইভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি বিশেষ আইন (Special Law) যার মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল বা সাইবার অপরাধ সনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক প্রতিকার প্রদান করা।

 

সাইবার অপরাধ দমনের জন্য বাংলাদেশে ২০১৮ সালে করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই আইনের অধিনে গঠিত ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনি নিরাপত্তার স্বার্থে কতিপয় তথ্য উপাত্ত অপসারণ এবং ব্লক করার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবেন যদি উক্ত তথ্য উপাত্ত ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করে। এছাড়াও একটি ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম থাকবে, যারা জরুরি ভিত্তিতে সাইবার অপরাধ দমনে কাজ করবেন।

বাংলাদেশে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ অ্যাক্ট’র গুরুত্বপূর্ণ ধারাসমূহের মাধ্যমে কোন ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডারে বেআইনী প্রবেশ এবং এর ক্ষতি রোধ করার বিধান রয়েছে। যেমন অনলাইনে স্প্যাম শেয়ার করা, হ্যাকিং, কম্পিউটার ভাইরাস ছড়ানো এবং অনলাইনে আর্থিক জালিয়াতি ইত্যাদি।

অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও অবমাননার বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। একই সাথে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও ব্যাবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।

এছাড়া অনলাইনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ইচ্ছাকৃতভাবে অনলাইনে এমন তথ্য প্রচার বা মতামত প্রদানের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশেই ভিন্ন ভিন্ন নামে একই ধারার আইন বলবৎ রয়েছে, যেখানে অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ধরনের অপরাধগুলো ঘটে সেগুলো নজরদারির আওতায় আনতেই এই আইন কার্যকর  রয়েছে প্রায় প্রত্যেকটি দেশে।

প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে সাইবার প্রতারণা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সাময়িকীটি বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে উন্নত দেশগুলোয় অন্যান্য অপরাধের হার তুলনামূলক কম হলেও সাইবার অপরাধের হার ব্যাপকভাবে বাড়তে দেখা গেছে। তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।আর সেকারণে রাষ্ট্রগুলো ভিন ভিন্ন নামে নতুন আইন বা প্রচলিত আইনে সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমনে নতুন ধরা যুক্ত করেছে।কিন্তু সেসব দেশে এমন আইনকে মানুষ নিজেদের সুরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে অভিহিত করে।

এছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে ৩৮ লাখ অনলাইন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে, যা দেশটিতে মোট অপরাধের এক-তৃতীয়াংশ। এখানে ব্লাকমেইলের মতো অপরাধও রয়েছে। দেশটির নিরাপত্তা এজেন্সি এসব মামলা নিয়ে কাজ করছেন।

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের মতোই অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের। ২০২২ সালে দেশটিতে ইন্টারনেটে প্রতারণা ৬৯ শতাংশ বেড়েছে। দেশটিতে ইন্টারনেটে প্রতারণায় গত বছর মোট লোকসান হয়েছে ৪২০ কোটি ডলার, যা ২০২১ সালের তুলনায় তিন গুণ বেশি। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে প্রায় ৩৭ লাখের বেশি, যার বেশিরভাগই সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক এবং যেগুলো  এখনও চলমান।

সবশেষ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে ২০২২ সালে মোট ৪৭ লাখ অনলাইন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে, যা মোট অপরাধের এক-চতুর্থাংশ। দেশটির তথ্য প্রযুক্তি আইনের আওতায় এসব মামলার কাজ চলমান বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করে ব্রিটিশ সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article