শিশুটিকে পাবলিক ট্রায়ালে ফেলে দিয়েছে প্রথম আলো!

শিশু সবুজের জীবনে নেমে এসেছে এক ঘোর অমানিশা। ওই প্রতিবেদনের পরে দেশের অধিকাংশ মিডিয়া ক্যামেরা আর বুম নিয়ে হাজির হয় সবুজের বাসায়। একের পর এক মিডিয়া তাদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছে। কোনো দোষ না করেও সবুজ ও তার পরিবারকে অপরাধীর মতো জবাবদিহি করতে হচ্ছে।
স্বাধীনতা দিবসে গত ২৬ মার্চ জাকির হোসেন নাম দিয়ে একটি শিশুর বক্তব্য প্রকাশ করে প্রথম আলো পত্রিকা। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায় ওই শিশুর নাম সবুজ আহমেদ। পত্রিকাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে ভুল সংবাদ পরিবেশন করে। ওই সংবাদ মুহুর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। দেশজুড়ে শুরু হয় সমালোচনা। পাশাপাশি শুরু হয় পাবলিক ট্রায়াল।
প্রথম আলোর ভুলের কারণে শিশু সবুজের জীবনে নেমে এসেছে এক ঘোর অমানিশা। ওই প্রতিবেদনের পরে দেশের অধিকাংশ মিডিয়া ক্যামেরা আর বুম নিয়ে হাজির হয় সবুজের বাসায়। একের পর এক মিডিয়া তাদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছে। কোনো দোষ না করেও সবুজ ও তার পরিবারকে অপরাধীর মতো জবাবদিহি করতে হচ্ছে। তার দায় কি প্রথম আলো এড়াতে পারবে?
সচেতন মহল বলছে, একটি শিশু ও তার পরিবারকে এভাবে হেনস্তা করার দায়ে প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রথম আলোকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়। সাংবাদিকতার কিছু নীতিমালা নিশ্চয়ই আছে। শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফের এই বিষয়ে একটি গাইডলাইনও আছে।
গাইডলাইনের ৬ টি নীতিমালার একটিতে বলা হয়েছে, শিশুদের সাক্ষাৎকার ও প্রতিবেদন করার ক্ষেত্রে, প্রতিটি শিশুর মতামত প্রভাবিত করে এমন বিষয়ের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। আরেকটিতে বলা হয়েছে, অভিভাবকের লিখিত অনুমতি ছাড়া শিশুর সাক্ষাৎকার, ভিডিও বা ডকুমেন্টারি প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে না।
৬ নম্বর নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমন কোনো গল্প বা ছবি প্রকাশ করা যাবে না, যা শিশু তাদের ভাইবোন বা সমবয়সীদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। সর্বশেষ ইউনিসেফের একই গাইডলাইনের আরেকটি পয়েন্টে বলা হয়েছে, কোন শিশুকে কালিমা লেপন করা যাবে না, এমনকি শ্রেণীবিভাগও এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ এমন পরিস্থিতি একটি শিশুকে নেতিবাচক প্রতিশোধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথম আলো যে অপরাধটি করেছে সেটি নীতিমালার সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রথম আলোর প্রতিবেদক শিশুটির ছবি তুলতে পরিবারের কোনও অনুমতিই নেয়নি। এমনকি ওই প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে আলোচনাও করেনি।
দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যম হয়েও প্রথম আলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিমালার রক্ষা করতে পারেনি। বরং শিশু সবুজকে পাবলিক ট্রায়ালের মধ্যে ফেলে দিয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে মনে করে শিশু অধিকার কর্মীরা।