বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদন, কতটা তথ্য নির্ভর?
![বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদন, কতটা তথ্য নির্ভর?](/Uploads/Images/News/2023/3/Image-11136-20230322055855.webp)
- মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে মৌলিক দুর্বলতা ও ভুল আছে।
- বিরোধীদের অভিযোগ আমলে নিলেও সরকারি কোনো তথ্য গ্রহণ করেনি।
- বরাবরের মতোই এবারও আমেরিকা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।
- প্রতিবেদনটি অতিশয় পক্ষপাতমূলক ও উদ্যেশ্য প্রণোদিত।
২০২২ সালের বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শিরোনামে বার্ষিক এ প্রতিবেদনটি ২০ মার্চ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয় উঠে এসেছে।
মার্কিন প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের বিরুদ্ধে বহু নির্যাতনের ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ রয়েছে। নির্যাতন ও দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি দেওয়ার অনেক অভিযোগ রয়েছে। এসব সদস্যদের চিহ্নিত করা, ঘটনার তদন্ত করা, তাঁদের বিচার ও সাজা প্রদানে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির কথা রয়েছে; যেখানে অধিকাংশ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর মেয়াদে টানা তৃতীয়বারের মতো জয়ী হয়। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকেন। ওই নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ বলে বিবেচিত হয়নি।
মার্কিন প্রতিবেদন প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি দেশের একই সরকার তিন বার নির্বাচিত হওয়া কোন অপরাধ নয়, সেটি সেদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনও যথাযথ তথ্য নির্ভর নয়। মূলত নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ করছে একটি রাজনৈতিক দল, যারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারা বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত তাদের লবিস্টদের চোখেই বাংলাদেশকে দেখেছে। একটি স্বাধীন দেশের নির্বাহী ক্ষমতা সাংবিধানিক কাঠামো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কাজেই সাংবিধানিক ক্ষমতা বা অভ্যন্তরীণ আইনী বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঢালাও মন্তব্য সমর্থনযোগ্য নয়। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে যে প্রতিবেদন তারা দিয়েছে তাও ভুল চশমা পরে এবং ঝাপসা চোখের।
প্রতিবেদনে বিরোধীদের অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে, যা সেই প্রতিবেদনেই উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সরকারের বক্তব্য নেয়া হয়নি। প্রতিবেদন বিরোধী দলের অভিযোগের ভিত্তিতে হওয়ার কথা নয়, তাদের নিজস্ব সোর্সের ভিত্তিতে হওয়ার কথা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের অভিযোগকে যুক্তি হিসেবে গ্রহণ করে তার ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করায় এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অন্যদিকে সমালোচকরা বলছেন, গোটা বিশ্বের মানবাধিকার নিয়ে প্রতিবেদন দেয়া আমেরিকার অভ্যন্তরিণ মানবাধিকার কি সুরক্ষিত? তাদের দেশে প্রতিদিন বন্দুক হামলা হচ্ছে, শত শত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। ইসরায়েলকে দিয়ে ফিলিস্তানিদের হত্যা করা, অন্য দেশের খুনীদেরকে আশ্রয় দেয়াসহ বিশ্বশান্তি বিনষ্টকারীদেরকে মানবাধিকারের সংজ্ঞা মানায় না।
এছাড়া মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে মৌলিক দুর্বলতা ও ভুল আছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। দুর্বলতার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, একটি বন্ধুরাষ্ট্র নিয়ে যখন প্রতিবেদন তৈরি করা হয় তখন তা প্রকাশ হওয়ার আগে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেওয়ার কথা। বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু তারা বিরোধী পক্ষের অভিযোগ আমলে নিলেও সরকার তরফের কোনো তথ্য গ্রহণ করেনি। বরাবরের মতোই এবারও তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। কাজেই রিপোর্টটি অতিশয় পক্ষপাতমূলক, উদ্যেশ্য প্রণোদিত, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।