সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কাম্য

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:১৯, সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২, ৩ শ্রাবণ ১৪২৯

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের রূপ পরিবর্তন হয়েছে। এবং আমরা দেখছি যে ফেসবুকে ইসলাম, নবীজি, কোরআন শরীফের অবমাননার অভিযোগ তুলে একের পর এক ঘটনা চালানো হচ্ছে। এইযে ঘটনা গুলো ঘটছে সেইগুলোর কোন বিচার হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে এসে আমরা কিন্তু সরকারের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছি। সুতরাং আমরা চাচ্ছি এইসকল ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করা উচিৎ। 

বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এই সকল সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীদের গ্রেফতার করে তাদেরকে বিচার করতে হবে যাতে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা যায় যেন ভবিষ্যতের জন্য এটা উদাহরণ হয়ে থাকে। 

দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৭৬৮তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের  সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পাদিত্য বসু, কবি স্নিগ্ধা বাউল, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
 

বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের রূপ পরিবর্তন হয়েছে। এবং আমরা দেখছি যে ফেসবুকে ইসলাম, নবীজি, কোরআন শরীফের অবমাননার অভিযোগ তুলে একের পর এক ঘটনা চালানো হচ্ছে। অতি সম্প্রতি আমরা দেখলাম যে শিক্ষকদের উপর হামলা চালানো হচ্ছিলো এবং সেটা হচ্ছিলো স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পর্যন্ত সকল স্তরে। এখন এই যে পরিস্থিতি এটা থেকে আমাদের উত্তরণের পথ কতটুকু আছে সেটা আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। আমাদের স্বাধীনতা নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসীন এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী তখন এই ঘটনা ঘটছে সেটা আমাদের অনেক ভাবিয়ে তুলে। এই ধরণের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটে চলছে। কখনো একক ব্যক্তির উপরে আবার সংগঠিতভাবে একটি পাড়া মহল্লা ধরে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিকারী এক অশুভ শক্তির সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের হাজার বছরের সম্প্রীতির ঐতিহ্য এক নিমিষে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপপ্রচারকে সম্বল করে বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ‘ইস্যু’ বানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের মাধ্যমে  দেশকে অস্থিতিশীল করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়। এসব কাজে ধর্মের নামে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং কোনো রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধন নিহিত থাকে।  এইযে ঘটনা গুলো ঘটছে সেইগুলোর কোন বিচার হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে এসে আমরা কিন্তু সরকারের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছি। সুতরাং আমরা চাচ্ছি এইসকল ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করা উচিৎ। 
 

স্নিগ্ধা বাউল বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের মধ্যে সব সময় ছিল কিন্তু সেটা কোন না কোনভাবে বিনষ্ট হয়েছে এবং সেটাকে আমাদের আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা যদি একটু পিছনে ফিরে তাকায় তাহলে দেখতে পাবো যে ১৯৪৭ সালে যে দেশভাগ হয়েছিল সেখানে কিন্তু ধর্মকে ব্যাবহার করেই দেশভাগ করা হয়েছিল। সেখানে ধর্ম ছিল একটি বড় অস্ত্র। সেসময় যারা ক্ষমতায় ছিল তারা সেই অস্ত্রটাকে ব্যাবহার করে ইতিহাসের একটি বেড়াজাল সৃষ্টি করলো। রাতের মধ্যেই মানুষ সীমান্তের এপারে ওপারে চলে গেল, মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হলো। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে সব সময় সম্প্রীতির বন্ধনে ছিলাম। আমার প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ হিসেবে আমার যে দায়বদ্ধতা রয়েছে সেটা কেন আমরা হারালাম? আমি যে ধর্মেরই হয় না কেন, আমি সর্বপ্রথম কিন্তু  মানুষ। আমার সেই বোধটা কোথায় হারালো? আমাদের গণমানুষ কোথায় গেল? তাদের মানবিকতার বোধটা কোথায় গেল? সেটা কেন হারিয়ে গেলো? আমি কেন আমার পাশের বাড়ির মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখছি না। সাম্প্রদায়িক এই আক্রমণগুলো আমাদের জাতীয় সংহতির ওপর বিরাট আঘাত ফেলছে। এই হামলার ফলে বাংলাদেশের মানুষ আরো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে না পারলে বাংলাদেশে মিলেমিশে বসবাসের যে সংস্কৃতি তা বাধাগ্রস্ত হবে এবং মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা হারাবে। আমাদের ভিতরে যে লোভ, সহিংসতা আছে সেটা চিরতরে মুছে ফেলতে হবে। আমাদের জাতীয় আদর্শিক জায়গাটা ধরে রাখতে হবে। আমার এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর এবং সমাধান যদি বের না করা যায় তাহলে কোনভাবেই এই সকল সহিংসতা রোধ করা সম্ভব হবে না। 
আল মামুন বলেন, বাংলাদেশে সম্প্রতি সময়ে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা হচ্ছে সেটা আমারা কখনোই কাম্য করিনি। সর্বশেষ নড়াইলের পর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে এবার লোহাগড়ায় হিন্দু বাড়িতে হামলা ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টের নিচে ধর্মীয় অবমাননামূলক মন্তব্য করার অভিযোগ তুলে তার বাড়িতে হামলা ও আগুন দেয় উত্তেজিত জনতা। একপর্যায়ে তারা ৫-৬টি ঘর ভাঙচুর করে। পরে একটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে দুই রুম বিশিষ্ট টিনের ঘর পুড়ে গেছে। আমাদের সমাজে এক শ্রেণির মানুষ রয়েছে- যারা পবিত্র ধর্মের মূল বাণীকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নানাভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করেন। তারা সাধারণ মানুষের মাঝে পবিত্র ইসলামকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে যুগ যুগ ধরে লালিত সম্প্রীতির বন্ধনকে বিনষ্ট করতে চায়। মানুষের মাঝে বিভাজন তৈরি করতে চায়।  ঘটনাগুলো দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। হামলার ধরন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা। দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে উন্নতি ঘটেছে; সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবকেই ধ্বংস করতে চায় মৌলবাদী জনগোষ্ঠী। আসলে মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ফায়দা লুটছে কেউ কেউ। মৌলবাদী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রচারণায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর প্রচেষ্টা রয়েছে এখনো। আমরা বলি আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কিন্তু ইদানীংকালে অসহিষ্ণুতা দেখা যাচ্ছে তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। এখন উচিৎ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এই সকল সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীদের গ্রেফতার করে তাদেরকে বিচার করতে হবে যাতে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা যায় যেন ভবিষ্যতের জন্য এটা উদাহরণ হয়ে থাকে।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article


যেভাবেই হোক স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাস করবো: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দিলো সরকার

যে কারণে জাহাজে করে দেশে ফিরতে চান না ২ নাবিক

ডাল-ভাত খাওয়াতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন খালেদা জিয়া: শেখ হাসিনা

কেউ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি: প্রধানমন্ত্রী

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

৯৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ: আবেদন যেভাবে

গরম নিয়ে যে দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অফিস

‘৮ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল’

গরমে গতি কমিয়ে ট্রেন চালানোর নির্দেশ

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর