নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন শিল্পী, লাকিরা

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:১২, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩, ৭ চৈত্র ১৪২৯

২০০৭ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়ি। ভূমিহীন পিতার কাছে হয়ে যান বাড়তি বোঝা। অভাব-অনটন সইতে না পেরে পাশের একটি বাজারে চা-পানের দোকান শুরু করেন। সারা দিন বেচা-বিক্রির পর রাতে বাবার ঘরে কোনোভাবে মাথা গোঁজেন তারা। কিন্তু তার দুঃখের দিন শেষ। এবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন। এখন সেই ঘরের পাশেই তিনি চা ও পানের ব্যবসা শুরু করেন। বাজারের চেয়ে বেচা-বিক্রিও অনেক ভালো হয়। গল্পটি বরগুনার বামনা উপজেলার উত্তরকাকচিড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা শিল্পী রানীর।

 

এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা মোসা. লাকি বেগম। তাদেরও কোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। কখনো কোন সড়কের পাশে কিংবা সরকারি বেরিবাঁধের বাইরে খুপড়ি বানিয়ে থাকতেন তারা। চার মেয়েকে নিয়ে পথে পথে ঘুরতে হয়েছে তাদের। তবে সকল দুঃখ-কষ্টের অবসান হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে। এখন পাকা বাড়িতে মেয়েদের নিয়ে থাকেন তিনি। তিনিও ঘরের সামনে বারান্দায় চা-বিস্কুটের দোকান দিয়ে এখন সংসার চালাচ্ছেন।

শুধু শিল্পী কিংবা লাকিরাই নন- এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৬৪টি পরিবার দুই শতক জমিসহ ঘর পেয়েছেন। অনেকেই এই প্রকল্পকে ঘিরে নানা আয় বর্ধক কাজ করে এখন সাবলম্বী হয়েছেন।

এদিকে, বরগুনা জেলার বামনা উপজেলাকে আগামী ২২ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পূর্ণ ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার (২০ মার্চ) সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অন্তরা হালদার বামনায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার বামনা উপজেলার ৩টি পর্যায়ে মোট ২৫৯টি পরিবারকে গৃহ ও জমি প্রদান করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১ম পর্যায়ে ১৭টি, ২য় পর্যায়ে ৪০টি ও ৩য় পর্যায়ে ২০২টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা পরিষদ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে আরো ৩টি পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান করার মাধ্যমে এ উপজেলা সম্পূর্ণ ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর পেয়ে খুশি এখানকার অসহায় মানুষগুলো। ঘর পেয়ে ভাগ্য বদলে যাওয়া উত্তর কাকচিড়া গ্রামের শিল্লী রানী বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি পথে পথে ঘুরেছি। কোথায় যাবো কি করব- ভেবে পাচ্ছিলাম না। বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি এসে আমি চায়ের দোকান দেই। তবে বাবার কোনো জমি না থাকায় বাঁধের পাশে খুপড়ি ঘরে থাকতে হতো। এখন আমাকে ঘর আর জমি দুটোই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমি সেখানে ছোটখাটো চায়ের ব্যবসা করছি। এখন আমি অনেক সুখে আছি।

বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর উপহার দিয়েছেন। এ কারণে এখন বামনা উপজেলায় আর কোনো গৃহহীন মানুষ নেই। এর পরে ‘খ’ শ্রেণির ঘরগুলো দেওয়া হবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হবিবুর রহমান বলেন, ২২ মার্চ বরগুনা জেলার বামনা উপজেলা গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন আমাদের কাজ হবে তাদের আয় বর্ধক কাজের ব্যবস্থা করা।

Share This Article