নির্বাচনী কূটনীতিতে চাপমুক্ত সরকার!

বিগত তিনটি নির্বাচনে বিদেশি কূটনীতিকদের যেভাবে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেছে বা যেভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে মাথা ঘামিয়েছেন তার লেশমাত্রও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। ফলে সহযোগী রাষ্ট্রগুলো বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনরূপ চাপ সরকার অনুভব করছে না বললেই চলে। এই সুযোগে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে বেশ নির্বিঘ্নেই নির্বাচনী প্রস্তুতী গ্রহণ করে চলেছে।
ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন আসলেই সরকারের ওপর অন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বা শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রচ্ছন্ন একটি চাপ থাকে। নির্বাচন এলেই বিভিন্ন রাষ্ট্রের কূটনীতিকরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিরও চেষ্টা করেন। তবে এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। নির্বাচনী কূটনীতিতে সরকার মোটামুটি ভারমুক্তই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ওয়ান ইলেভেন পূর্ববর্তী সময় থেকে এ যাবৎ প্রতিটি নির্বাচনের আগেই সহযোগী দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নানান পর্যায়ে নিজেরা বৈঠকে মিলিত হতেন এবং সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে নির্বাচনী সমঝোতায় উদ্যোগী হতেন, এমনকি উভয় পক্ষকে সংলাপে বসতেও চাপ প্রয়োগ করতেন। তবে এবার নৈশভোজ বা সৌজন্য সাক্ষাৎ ব্যতীত নির্বাচন ইস্যুতে দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়ছে না।
বাংলাদেশের নির্বাচনী কূটনীতিতে বরাবরই জাতিসংঘসহ আমেরিকা ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের দিক থেকেই সবচেয়ে বেশি প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করা হয়। তবে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও তাদের তেমন একটা ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যদিও কিছুদিন পূর্বে ভারত শেখ হাসিনা সরকারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দায়সারা তাগিদ প্রদান করে। কিন্ত এ বিষয়ে ধারাবাহিক কোনো মন্তব্য বা পদক্ষেপ গ্রহণ করার তাগিদ দেয়নি। বরং দেশটির উচ্চপদস্থ কয়েকজন কূটনীতিক পরোক্ষভাবে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের প্রশংসা করে একসাথে কাজ করার ও সম্পর্ক সুদৃঢ় করার অঙ্গীকার করে গেছেন, যা অতীতের নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে ঘটেনি বললেই চলে।
অন্যদিকে আমেরিকা ও ভারতের বাইরে বাংলাদেশে রাজনীতি নিয়ে মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে চীন। তবে রাজনৈতিকভাবে কোন দেশের অভ্যন্তরিণ বিষয়ে সরাসরি মাথা ঘামায় না চীন। চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অর্থনৈতিক। আর বিগত কয়েক বছরে চীনের সাথে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠায় বর্তমান সরকারের সাথে চীনের মনোভাব অতীতের চাইতে অনেক বেশি ইতিবাচক বলা যায়।
অন্যদিকে বিগত নির্বাচনগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজ উদ্যোগে লক্ষণীয় সক্রিয় থাকলেও এবার বিএনপির তরফ থেকে তাদের সাথে বৈঠকের আয়োজন ছাড়া তেমন কোনো আলোচনা বা বৈঠক চোখে পড়েনি অন্য কারো সাথেই।সরকারকে উদ্যেশ্য করে নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো মন্তব্য, পরামর্শ বা তাগিদ নেই তাদের। এখন পর্যন্ত তাদের নীরবতাও লক্ষ্যনীয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত তিনটি নির্বাচনে বিদেশি কূটনীতিকদের যেভাবে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেছে বা যেভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে মাথা ঘামিয়েছেন তার লেশমাত্রও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। ফলে সহযোগী রাষ্ট্রগুলো বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনরূপ চাপ সরকার অনুভব করছে না বললেই চলে। এই সুযোগে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে বেশ নির্বিঘ্নেই নির্বাচনী প্রস্তুতী গ্রহণ করে চলেছে।