ড. ইউনূসের নোবেল জয় দরিদ্রদের বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে!

মাইক্রো ক্রেডিটের নোবেল বিজয় বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষদের একটা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে। বেপোরোয়াভাবে এসব প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষের ওপর চেপে বসেছে মহাজনের মতো। তাই এ কথা বলা যায় যে ড. ইউনূসের 'মাইক্রো ক্রেডিট' দিয়ে প্রান্তিক জনগণকে যেভাবে দাসে পরিণত করা হচ্ছে তা আধুনিক সভ্যতার জন্য লজ্জাজনক।
গত ৭ মার্চ নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে সাফাই গেয়ে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয় মার্কিন মুলুকের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে। সেখানে বিশ্বের তথাকথিত ৪০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ড. ইউনূসের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করে তাকে ক্ষুদ্র ঋণের জনক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সেবক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ফলে স্বভাবতই ড. ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা ও এর কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়।
এই বিতর্ক শুধু এই ঋণের ওপর আরোপিত সুদকে কেন্দ্র করেই নয় বরং দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানে এর ভূমিকা নিয়ে নানান প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
তথ্য মতে, ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা বাংলাদেশে একটি অনন্য উদ্ভাবন হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে এবং এই উদ্ভাবনের ‘জনক' হিসেবে ড. ইউনুস নোবেল শান্তি পুরস্কারও পেয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে, যদিও বাংলাদেশে মোট ৭২৯টি এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের সাথে বহুবছর যাবৎ জড়িত, এমনকি গ্রামীণ ব্যাংকের অনেক আগে থেকেই ব্র্যাকসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে আসছে।
তবে ঐসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ কার্যক্রমের সাথে ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রমের বিস্তর ফারাক রয়েছে বলে দাবি করেন অর্থনীতিবিদ্গণ। ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পকে তারা অতীতের মহাজনী প্রথার আধুনিক সংস্করণ বলে থাকেন, যে ঋণ চক্রের বেড়াজাল থেকে বের হতে না পেরে নিঃস্ব হয়েছেন শত সহস্র অসহায় মানুষ।
ড. ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণের কার্যকারিতা ও অবদান নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের কোনও ভূমিকা নেই এবং প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদ্র ঋণ দারিদ্র্যকে অব্যাহত রাখার ব্যাপারে সহায়তা করেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদগণ। এই ঋণের সুদের হার নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে চলছে বিতর্ক।
জানা গেছে, সুদ ও সার্ভিস চার্জের হার মাত্রাতিরিক্ত হওয়া সত্ত্বেও ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ আদায়ের হার শতকরা ৯৫ ভাগ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। অথচ ব্রাক, প্রশিকা ও আশার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কম সুদে ঋণ দিয়েও আদায়ের হার ৭০ শতাংশের বেশি নয়। গ্রামীণের ঋণের সুদের হার বেশি হওয়া সত্ত্বেও আদায়ের এই উচ্চ সাফল্যের পেছনে প্রতিষ্ঠানটির শোষণের ইতিহাসকেই চিহ্নিত করেছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
গ্রামীণের ঋণের কিস্তির জন্য হতদরিদ্র মানুষের শেষ সম্বল বসত ঘরও কেড়ে নেওয়ার অহরহ ঘটনা আছে দেশে।
এছাড়া ঋণ গ্রহীতার শিশু সন্তানকে জিম্মি করে ঋণের সুদ আদায় করার মতো দুঃখজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছে ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক। ঋণ আদায়ের কড়া পদ্ধতি ও এমন শোষণের ভয়েই গ্রামীণের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে আরও অন্য সংস্থা থেকে ঋণ নেয় ঋণ গ্রহিতারা। তাতে দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাইক্রো ক্রেডিটের নোবেল বিজয় বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষদের একটা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে। বেপোরোয়াভাবে এসব প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষের ওপর চেপে বসেছে মহাজনের মতো। তাই এ কথা বলা যায় যে ড. ইউনূসের 'মাইক্রো ক্রেডিট' দিয়ে প্রান্তিক জনগণকে যেভাবে দাসে পরিণত করা হচ্ছে তা আধুনিক সভ্যতার জন্য লজ্জাজনক।