ভুল তথ্যে নোবেল জয়: ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার জনক ইউনূস নন!

- ড. ইউনুস মোটেই ক্ষুদ্র ঋণের জনক নন বলে দাবি করেন সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান।
- সব ধরনের নীতিমালা মেনে দেশের প্রচলিত আইনে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেছেন উদ্যোক্তারা।
- নিজের মনগড়া আইনে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন ড. ইউনূস।
- ব্র্যাক অনেক বেশি সফল হলেও ‘অদৃশ্য কারণে’ নোবেল পেয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা’।
ড. মহাম্মদ ইউনূস। শান্তিতে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি একজন অর্থনীতিবিদ। তবে মাইক্রোক্রেডিট বা ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা প্রবর্তনের জনক হিসেবে নোবেল পেলেও প্রকৃত অর্থে তিনি এর উদ্ভাবক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশ্বনেতাদের ‘খোলা চিঠি’ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে ড. ইউনুস মোটেই ক্ষুদ্র ঋণের জনক নন বলে দাবি করেন সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান।
একটি বেসরকারি টেলাভিশন টক-শোতে নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘ড. ইউনসূকে নিয়ে যদি ডাহা কোনো মিথ্যা কথা থাকে, তাহলে সেটি হলো মাইক্রোক্রেডিট বা ক্ষুদ্রঋণের উদ্ভাবন। তিনি মাইক্রোক্রেডিটের উদ্ভাবক না। বাংলাদেশে শত শত বছর আগ থেকে মাইক্রোক্রেডিট প্রচলিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও এই কর্মসূচি ছিল’।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সর্বাত্মকভাবে মাইক্রোক্রেডিটের গবেষণা ও প্রচলন করেছেন কুমিল্লায় আখতার হামিদ খান, যা রাষ্ট্রীয়ভাবেও ব্যবহার করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা হিসেবে স্বাধীনতার পর থেকেই মাইক্রোফিন্যান্সের কর্মসূচি ছিল ব্র্যাকের। ড. ইউনূস তো গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসার পরপর’।
ড. ইউনূসের মধ্যে ‘ডার্ক সাইড’ আছে মন্তব্য করে সিনিয়র এই সাংবাদিক বলেন, ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা ব্র্যাকের মতো নয়। কারণ সব ধরনের নীতিমালা মেনে দেশের প্রচলিত আইনে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেছেন উদ্যোক্তারা। কিন্ত নিজের মনগড়া আইনে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন ড. ইউনূস। কাজের দিক দিয়ে ব্র্যাক অনেক বেশি সফল হলেও ‘অদৃশ্য কারণে’ নোবেল পেয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা’।
তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রতিষ্ঠায় অবদানে নোবেল পাওয়া নিয়ে ড. ইউনসূকে মহৎ করার কিছু নেই। তিনি এক ধরনের ভুল তথ্য দিয়েই নোবেল জিতেছিলেন। মাইক্রোক্রেডিটের উদ্ভাবক হলে তিনি কেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে (বার্ড) ওরিয়েন্টেশন নিয়েছেন। বার্ড থেকে জানারও চেষ্টা করেছেন যে- ‘মাইক্রোক্রেডিট কি?’। অতএব মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে পূর্বের কোনো ধারণাই ছিল না তার। এছাড়া অতি সম্প্রতি তার আরেকটি উদ্যোগ ‘সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট’ বা 'সামাজিক ব্যবসা'ও নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশে বহু জমিদার, ব্যবসায়ী, শিক্ষিত লোক নানানভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান করে গেছেন। যেখান থেকে তারা কোনো লাভ নেননি। বরং ড. ইউনূসের ‘সোশ্যাল কনসেপ্ট’ ছিল ফাঁকিবাজি আর বিপজ্জনক। দরিদ্র মানুষের সঙ্গে প্রতারণা আর উচ্চহারে সুদ নেয়ার উদ্দেশ্যেই তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন’।
অন্যদিকে ২০১১ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণের জনক’ ড. ইউনুস নয়। জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, কো-অপারেটিভ ক্রেডিট অ্যাক্ট চালুর ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে মহাজনী ঋণদান প্রথা। উপকৃত হতে থাকেন কৃষকরা। তবে দর্শনগতভাবে সমবায় ও গ্রামীণ ব্যাংকের কিছুটা মিল থাকলেও পদ্ধতিগতভাবে বেশ পার্থক্য রয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের উপকারভোগী শুধুমাত্র ভূমিহীন নারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু সমবায়ের ঋণ নারী-পুরুষ, কৃষক-শ্রমিক, শ্রেণিবর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্যই প্রযোজ্য।
এছাড়া ১৯০৪ সালেই উপমহাদেশে কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি অ্যাক্টের মাধ্যমে সর্বপ্রথম সহজ শর্তে ঋণ দেয়া শুরু হয়। এই অ্যাক্টের বিধানেও কোনো আমানত ছাড়াই ব্যক্তিগত নিশ্চিয়তার ভিত্তিতে ঋণ দেয়ার বিধান ছিল। কিন্তু আশির দশকে অতিরিক্ত সুদে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা চালু করে গ্রামীণ ব্যাংক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নোবেল পাওয়ার পর ড. ইউনূসের কার্যক্রম সবারই জানা। খাতা-কলমে সামাজিক কার্যক্রম দেখালেও তিনি নিজের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করা নিয়েই বেশি ব্যস্ত। মিথ্যে তথ্য প্রদান বা অসদুপায়ে বিভিন্ন ধরনের অ্যাওয়ার্ড নিতে বিদেশিদের সঙ্গে হাত মেলানোর পাশাপাশি গড়েছেন ‘রহস্যজনক’ সখ্যতা, যার ফলশ্রুতিতে অপরাধ করেও মহান ব্যক্তিত্বের ভাবমূর্তি অর্জনের অপচেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।