তারেকের পেশাদার রাজনীতি, উল্টো ফল!
![তারেকের পেশাদার রাজনীতি, উল্টো ফল!](/Uploads/Images/News/2023/3/Image-10569-20230307104820.webp)
অনেকে রাজনীতিকে পেশা মনে করলেও এটি মূলত বৃহত্তর পরিসরে মহত্তর একটি কাজ৷ রাজনীতি হলো, ব্যক্তিস্বার্থ ভুলে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী, দেশ, তথা বিশ্বের কল্যাণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা৷সকলে সে চেষ্টাই করেন।তবে ব্যতিক্রম ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি রাজনীতিকে জনগণের জন্য নয়, বরং নিয়েছিলেন পেশা হিসেবে। এতে ফলও এসেছে উল্টো।দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তার ঝুঁলিতে ভালো কিছু জোটেনি। সবই প্রশ্নবিদ্ধ। বলা চলে, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিজের আখের গোছানোই মূল লক্ষ্য ছিল তারেকের। হাত মিলিয়েছিলেন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথেও।
আসুন জেনে নেই তারেকের নানা অপকর্মের তথ্য :
হাওয়া ভবন : ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তারেক রহমানের হাওয়া ভবন দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। মা খালেদা জিয়া শুধু নামে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সব কাজ পরিচালনা করতেন তারেক। এমনকি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তারই ঘণিষ্ঠরা। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দেশের সব কাজে ঘুষ নেয়ার জন্য দেশ-বিদেশে ‘মিস্টার টেন পার্সেন্ট’ উপাধি পান তারেক।
২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২২ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়। ওই হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তি থেকে তারেকের জড়িত থাকার প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। মুফতি হান্নান জানান তারেকের নির্দেশেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। বিএনপি সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসা থেকে নেওয়া ১৫টি গ্রেনেড দিয়ে ওই দিন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের জনসভায় হামলা চালানো হয়। ওই হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে হাওয়া ভবনে একাধিকবার বৈঠক হয়।
দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা: ২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট জঙ্গি সংগঠন জেএমবি সারাদেশে একযোগে ৬৩ জেলার ৪৩৪ স্থানে বোমার বিম্ফোরণ ঘটায়। ওইদিনের ঘটনায় দু’জন নিহত এবং অর্ধশত আহত হন। পরবর্তী সময়ে জেএমবির আরো কয়েকটি বোমা হামলায় বিচারক ও আইনজীবীসহ ৩০ জন নিহত হয়। জেএমবির এসব হামলা মূলত তারেক ও বিএনপি সরকারের প্রত্যক্ষ মদদেই হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
দশ ট্রাক অস্ত্রের চালান: সময়টা ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল। চাঞ্চল্যকরভাবে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দশ ট্রাক অস্ত্রের চালান। তারেকের নির্দেশ ও পরিকল্পনায় এবং লুৎফুজ্জামান বাবরের প্রত্যক্ষ সহায়তায় এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী উলফার জন্য আনা হয়েছিল বলে তথ্য।প্রকাশ পায়।
বিদ্যুৎ খাতে তারেকের দুর্নীতি: শুধু বিদ্যুৎ খাত থেকেই তারেক বিশ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছিলেন। বিদ্যুতের নতুন সঞ্চালন লাইন স্থাপনের ইস্যু বানিয়ে, শুধুমাত্র বিদ্যুতের খাম্বা পুঁতে এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন দুর্নীতির বরপুত্র তারেক রহমান। এই দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে তারেককে ‘খাম্বা তারেক’হিসেবে ব্যঙ্গ করে থাকেন অনেকে।
ঘুষের টাকা বিদেশ পাচার: টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকায় একটি ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম পরিচালনা করে ‘নির্মাণ কনস্ট্রাকশন’কোম্পানির কাছ থেকে তারেক রহমান ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৭ সালের ৩১ মে পর্যন্ত ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা টাকা নিয়ে তা সিঙ্গাপুরে পাচার করেন। অন্যদিকে, হাওয়া ভবনের টেন্ডার বাণিজ্য থেকে ১২০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সৌদি আরবে পাচার করেছেন তারেক। এই অর্থ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ জঙ্গি ও মৌলবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যবহৃত হতো বলেও তদন্তে উঠে আসে। এছাড়া বেলজিয়ামে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার এবং দুবাইতে কয়েক মিলিয়ন ডলার অর্থ পাঁচার করে সেখানে বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছিলেন তারেক।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি: এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এর নামে বিদেশ থেকে থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাত করেছিলেন তারেক ও তার মা খালেদা জিয়া। এ মামলায় দুজনকেই সাজা দিয়েছেন আদালত।
নাইকো দুর্নীতি: কানাডার কোম্পানী নাইকোকে অনৈতিকভাবে সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে বিপুল অংকের টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন তারেক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ কারণে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিলো।
জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর টেলিভিশনে ভাঙা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি দেখানো হয়। তাকে সততার মূর্ত প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হতো। কিন্তু।কয়েক বছরের মধ্যেই দেখা গেল, জিয়া পরিবার হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক। লঞ্চ, টেক্সটাইল মিলস, বিদেশে বাড়ি, ব্যাংক-ব্যালান্স- এগুলো হঠাৎ কোথা থেকে এলো?
সমালোচকরা বলছেন, এ ধরনের দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী রাজনীতির মাঠে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় এলে কখনোই দেশ বা জনগণের কল্যাণ হবে না।এদের ভাঙা স্যুটকেস থেকে কোটিকোটি টাকা ও লঞ্চ- স্টিমার বের হয়ে এলেও দেশের জনগণ থাকতো মঙ্গা পীড়িত।কাজেই এরা পুনরায় ক্ষমতায় এলে নিজেরা লাভবান হলেও অর্থনৈতিকভাবে দেশে বিপর্যয় নেমে আসবে।