বিএনপির গুলশান কার্যালয়ের সামনে যুবদলের পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ রাত ০৮:৫২, রবিবার, ৫ মার্চ, ২০২৩, ২০ ফাল্গুন ১৪২৯
  • যুবদলের পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়ম।
  • বিভিন্ন অনিয়ম ও অসঙ্গতি তুলে ধরে এ বিক্ষোভ করেন পদবঞ্চিতরা।
  • আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পদপ্রাপ্তদের পদ বাতিল করে ত্যাগী ও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কর্মীদের মূল কমিটির অন্তর্ভুক্ত করার দাবি।
  • নবগঠিত কমিটিতে সীমাহীন দুর্নীতি, পদবাণিজ্য, নিষ্ক্রিয় অযোগ্যদের পদায়ন এবং ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন ও পদবঞ্চিত করা হয়েছে।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন যুবদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা।

রোববার (৫ মার্চ) দুপুরে বিভিন্ন অনিয়ম ও অসঙ্গতি তুলে ধরে এ বিক্ষোভ করেন তারা। নিষ্ক্রিয় ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পদপ্রাপ্তদের পদ বাতিল করে ত্যাগী ও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কর্মীদের মূল কমিটির অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা।

পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ, যুবদলের নবগঠিত কমিটিতে সীমাহীন দুর্নীতি, পদবাণিজ্য, নিষ্ক্রিয় অযোগ্যদের পদায়ন এবং ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন ও পদবঞ্চিত করা হয়েছে। যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এমন দুঃসময়ে দলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে যারা টাকা দিয়েছে এবং অন্য অনৈতিক সুবিধা দিয়েছে, বাসার বাজার করে দিয়েছে কিংবা তাদের দোকানের কর্মচারী তাদের পদ দিয়েছেন। দলের এমন দুঃসময়ে যেখানে ত্যাগী, সাহসী ও যোগ্যকর্মীদের পদায়ন করা প্রয়োজন। সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবেই দলটিকে দুর্বল করে দিয়েছে।

তাদের অভিযোগ, সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান ভুইয়া পিংকু, ইমাম হোসেন, নুরুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ দিপু, মাসুমুল হক মাসুম দলের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। শুধু অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে তাদের পদায়ন করা হয়েছে।

প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ভাতিজা পিংকু ফরিদপুরে ‘মুজিব শতবর্ষে’ সব অনুষ্ঠানে স্পন্সর করে প্রধান অতিথি হিসেব অংশ নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান নিষ্ক্রিয়। সভাপতির কাছের লোক হিসেবে তাকে পদ দেওয়া হয়েছে। সহ-সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মিশু আট বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তাকে অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়া হয়েছে।

খন্দকার মাহবুবুর রহমান মাহী সভাপতির ব্যক্তিগত কাজের লোক। এ কারণে তাকে পদ দেওয়া হয়েছে। সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাহবুব ওরফে কসমেটিকস মাহবুবকে বড় অংকের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পদ দেওয়া হয়েছে।

তারা দাবি করেন, ঘোষিত কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক জাহিদ হাসান কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থেকেও শুধু আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে প্রবাস থেকেও পদ পেয়েছেন।

jagonews24

সামসুজ্জোহা সুমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে ক্যাফে ক্যাম্পাস নামে রেস্টুরেন্টের মালিক। ব্যবসার কাজে ১০ বছর ধরে দলীয় কর্মকাণ্ড করেন না। টুকু মুন্নার কমিটির পর সক্রিয় হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে যেখানে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে যেতে পারেন না সেখানে সুমন ছাত্রলীগের সহযোগিতায় ব্যবসা করে আসছেন ১০ বছর ধরে। শুধু টাকার বিনিময়ে তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।

কাতারপ্রবাসী মামুনকে অর্থের বিনিময়ে সহ-সম্পাদক করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক জোবায়দুর রহমান জনি এক যুগ ধরে দলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নেই। তাকেও আর্থিক সুবিধার কারণে পদ দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-আইন, তানভির হাসান সোহেল, জিল্লুর রহমানদের অতীতের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। তাদের সরাসরি যুবদলে পদ দেওয়া হয়েছে।

নাজমুল হুদা রাজু, আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মাল্টিমুড গ্রুপের কর্মচারী। তাকেও পদ দেওয়া হয়েছে। আমানুল্লাহ বিপুল সভাপতির অর্থের যোগানদার হওয়ায় তাকে পদ দেওয়া হয়েছে।

ইউনুস আলী রবি, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ আইন সম্পাদক হয়েছেন। সে এখনও বরিশাল উত্তর জেলা ও মুলাদী উপজেলা বিএনপির সদস্য।তাকেও অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়া হয়েছে। নাজমুল হুদা রাজু আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ব্যক্তিগত কর্মচারী। তাকেও পদ দেওয়া হয়েছে।

দলের পদপ্রাপ্ত নিষ্ক্রিয় নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কামরুল হাসান তালুকদার, খলিলুর রহমান, এনএম আব্দুল্লা উজ্জ্বল, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, আয়ুব খান, মুরাদ খান, শাখাওয়াত হোসেন চয়ন, মাইনুদ্দিন রুবেল, মিজানুর রহমান শিশির, জাহিদ হাসান, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, খন্দকার মাইনুদ্দিন খোকন, রফিক আহমেদ ডলার, রুহুল আমিন বাবলু, দুলাল হোসেন, মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, মজিবুর রহমান সবুজসহ শতাধিক পদপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

সৈয়দ শহিদুল আলম টিটুকে সদস্য করা হয়েছে। আশির দশকে সভাপতি টুকুর সঙ্গে ঢাবি ছাত্রদলের সদস্য ছিল। সভাপতির বন্ধু, এ বিশেষ পরিচয়ে তাকেও পদ দেওয়া হয়েছে।

হুমায়ুন কবির শিপন নবগঠিত কমিটির সদস্য। অতীতে কোনোদিন রাজনীতি করেনি। সাধারণ সম্পাদক মুন্নার বন্ধুর ভাই। একারণে তাকে সদস্য করা হয়েছে। মাসুদুল হক নামের পাবনার এক ইউনিয়ন যুবদল কর্মীকে সদস্য করা হয়েছে অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে।

প্রিন্স আহমেদ এমরান যুবদল সেক্রেটারির মুন্নার কাজিন, সেই পরিচয়ে তাকে সহ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। কে এম সানোয়ার আলম, সহ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক একটি পেস্টিসাইড কোম্পানি বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে খামার বাড়ি এলাকায় চাকরি করেন। কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে পদ পেয়েছেন।

বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বলেন- অনৈতিকভাবে পদায়ন করা এসব অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের যুবদলের নতুন কমিটি থেকে বাদ দিয়ে দলের দীর্ঘদিনের রাজপথের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

আজকের বিক্ষোভ মিছিলে সাবেক যুবদল যুগ্ম সম্পাদক আলী আশরাফ, যুগ্ম সম্পাদক কামাল উদ্দিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান দুলাল, আতিকুর রহমান আতিক, সামসুর রহমান, মাহতাব আলম, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর তাহের বাবু, রিয়াদ হোসেন উজ্জ্বল, সাবেক সদস্য শাহজাহান কবির শাহীন, সৈয়দ আবেদিন প্রিন্স, রাসেল মিয়া।

ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি তারেক উজ জামান, জাকির হোসেন খান, আশরাফুর রহমান বাবু, শোয়েব খন্দকার, হুমায়ুন কবির, সাজ্জাদ হোসেন উজ্জ্বল। যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহাগ, এবিএম মহসিন বিশ্বাস। সাবেক সহ-সাধারণ আনোয়ার জাহিদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কোয়েল হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল হাসান হাওলাদার, সাবেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক-ইয়াকুব রাজু, সাবেক সহ সম্পাদক খন্দকার রিয়াজ, মাজেদুল ইসলাম মাসুম, রবিউল হাসান আরিফ, জিল্লুর রহমান কাজল, অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান রিয়াদ, অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান মামুন ও আবু জাফর রিপন উপস্থিত ছিলেন।

বিষয়ঃ বিএনপি

Share This Article