আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা: তসলিম খলিলের আষাঢ়ে গল্প!

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:৪০, রবিবার, ৫ মার্চ, ২০২৩, ২০ ফাল্গুন ১৪২৯

গত ৩ মার্চ শুক্রবার পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাৎসরিক ‘সালানা জলসা’কে। কেন্দ্র করে তাদের ওপর নৃসংশ হামলা চালিয়েছে কয়েকটি উগ্রবাদী সুন্নি সংগঠন। এই হামলায় প্রায় ৮০ টি বসৎবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দুজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। আহমদিয়াদের ওপর দীর্ঘদিন যাবৎ এমন হামলা চলে আসলেও এটিই ছিলো তাদের ওপর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হামলা।

২০১৯ সালেও পঞ্চগড়ে বার্ষিক জলসার সময়ও তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। ২০২১ ও ২২ সালের বাৎসরিক জলসা অনুষ্ঠান নিয়ে একাধিক সুন্নি মতাদর্শের সংগঠন আপত্তি তুলেছিল। তবে প্রশাসনের নিরাপত্তায় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। কিন্তু এবারের হামলা আগের সকল হামলার সীমা ছাড়িয়েছে।  
এবারের হামলো ছিলো কৌশলী ও পরিকল্পিত : 
ধারণা করা হচ্ছে এবার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে, যাতে পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে ওঠে। জানা গেছে,  এবারও হেফাজতে ইসলাম, সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশকিছু সংগঠন শুরু থেকেই আহমদীয়া সম্প্রদায়েরা 'সালনা' জলসাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের পক্ষ থেকে একাধীকবার বৈঠকের পর তারা হামলা করবেন না বলে প্রতিশ্রুতিও দেন।

কিন্তু হামলাকরীরা অত্যন্ত কৌশলে জলসায় হামলার পাশপাশি বসৎবাড়িতে হামলা শুরু করে। ফলে পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে।

হামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তসলিম খলিলের অপচেষ্টা:

এদিকে হামলার একদির পরই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করতে থাকে একটি চক্র। সেই চক্রের অন্যতম তাসনিম খলিল পরদিনই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেন, সরকারের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এই হামলায় উস্কানী দিয়েছে। অথচ আহমেদিয়াদের ওপর হামলার ইতিহাস অনেক পুরনো। যার সঙ্গে  এই সরকারের যোগসাজোস কল্পনা করাও হাস্যকর।

উল্লেখ্য গুজবসর্দার খ্যাত এই ইয়োলো  জার্নালিস্ট তসলিম খলিল,যিনি স্বঘোষিত নাস্তিক এবং সমকামীও বটে।তবে নিজে নাস্তিক হলেও রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে জামায়াত,হেফাজতসহ উগ্রবাদী বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষে কথা বলে আসছেন।আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর যারা হামলা করেছে তিনি সবসময় বিভিন্নভাবে তাদের সমর্থন ও উস্কানি দিয়ে আসছেন।কিন্তু এখন ভোল পাল্টে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাতে আহমদিয়া বা কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ওপর এই হাসমলার সাথে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার যোগসূত্র আবিষ্কার করেছেন,যদিও তার পক্ষে এক কলম প্রমান  বা তথ্য উপস্থাপন করতে সক্ষম হননি।

এমনকি যে সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে তাদের বক্তব্যও তসলিম খলিলের মন্তব্যকে সমর্থন করেনা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা কি বলছেন:

ঘটনার পর পঞ্চগড় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অন্যতম সদস্য ও মুখপাত্র মাহমুদ আহমদ সুমন বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছিলেন, "ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ'র পঞ্চগড় শাখা, সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ,ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটি নিজ নিজ ব্যানারে এবং তাদের সাথে হেফাজত ও জামায়াতসহ কয়েকটি ইসলামী দলের কর্মীরা কয়েকদিন যাবৎ আমাদের সম্মেলন বন্ধের দাবিতে কর্মসূচী দিয়ে আসছিল।গত শুক্রবার ওইসব সংগঠনের কর্মীরা জুমার নামাজের পর রাস্তা অবরোধ করে এবং তৎ পরবর্তীতে  আমাদের প্রায় ৮০ টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ,ভাঙচুর এবং আমাদের মানুষদের ওপর বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়।এতে তৎক্ষণাৎ ১ জন মারা যায় এবং প্রায় ৩০ জন গুরুতর আহত হয়।" ঘটনার দিন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীও একই মন্তব্য করেন।

প্রসঙ্গত আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলা হয় ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত, যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলো বিএনপি।বিএনপি তার সমমনা ইসলামী দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে ক্ষমতায় গেলে আহমদিয়া বা কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা করতে পারেনি।কিন্তু তাদের বিপক্ষে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে লেলিয়ে দিয়েছিল।বিএনপি সরকারের মদদেই সেসময়  জেএমবির বাংলা ভাই নতুন উদ্যোমে  আহমদিয়াদের ওপর হামলা শুরু করে। এমনকী সেই আমলে তাদের অনেক মসজিদও ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়।

সূত্রমতে ২০১৪-১৫ সালে বিএনপি লাগাতার অবরোধের সময় দেশব্যাপী অন্তত ১২টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলায় অন্তত দেড় শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। যার একটি বড় অংশ ছিলো আহমেদিয়া। সরকার বিরোধী আন্দোলনের ফাঁকে আহমদিয়াদের ওপর হামলা ছিলো বিএনপি-জামায়াতের পুরোনো কৌশল। সুযোগ পেলেই তারা এই কাজটি করে। অথচ তাদেরই একটি চক্র পুরো ঘটনাটি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন  ১৮৮৯ সালে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভবের পর থেকেই তারা বিভিন্ন রকম হামলার শিকার হয়েছে।শুধু বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তান সৌদি আরবসহ বহু দেশেই তারা নির্যাতিত হয়েছেন। এবং প্রতিবারই তাদের ওপর হামলা করেছে আদর্শগতভাবে বিপরীত মতাদর্শের ইসলামী দলগুলো। আওয়ামী লীগের মতো মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল আহমদিয়াদের বিষয়ে কখনোই কোন পক্ষাবলম্বন করেনি বা মাথা ঘামায়নি। ফলে সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীর ইন্ধনে  হামলার বিষয়টি অতিকল্পিত বানোয়াট একটি গল্প ছাড়া কিছুই না।  

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একদল লোকের ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে আরেক দলের মিল না থাকতে পারে। কোন গোষ্টি তাদেরকে মুসলমান নাই ভাবতে পারেন, এজন্য ওদের সাথে সামাজিকতা বর্জন বা তাদের মসজিদে অন্যরা নামাজ নাই পড়তে পারে। কিন্তু তাদের ওপর হামলা করার কোন অধিকার নেই। এবং ধর্মীয়ভাবেও এমন হামলার পক্ষে কোন দলিল নেই।

Share This Article


চট্রগ্রাম মেডিকেলের অজ্ঞাত লাশকে শিক্ষার্থীদের লাশ বলে চালানোর চেষ্টা!

শিক্ষার্থীদের পাশে দেশবাসীকে দাঁড়ানোর আহবান ফখরুলের: পাশে দাঁড়িয়েছে কি বিএনপি?

ঢাকা কলেজের ছাত্রের প্রাণহানি, সারা দেশে নিন্দার ঝড়

শিবির-ছাত্রদলের নির্মমতা: চট্টগ্রামে ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয় ১৫ ছাত্রলীগ কর্মীকে

আমরা সরকার পতন করেই ঘরে ফিরবো: গাজীপুর থেকে আগত শিবির কর্মী

কোটা আন্দোলনে জামায়াত-শিবির অনুপ্রবেশ, শিক্ষকদের মারধর

প্রধানমন্ত্রী'র বক্তব্যের মর্মার্থ বিকৃত করলো কারা

দুইজন নিহতের অসত্য দাবি যুক্তরাষ্ট্রের, কড়া প্রতিবাদ বাংলাদেশের

সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে স্বঘোষিত ‘রাজাকার,’ কেমন মেধাবী তারা?

কোটা আন্দোলনে বিএনপির অর্থায়ন, সারা দেশে শিবিরের শক্ত নেটওয়ার্ক

ঢাবি ক্যাম্পাসে যেভাবে জড়ায় ছাত্রলীগ

'রাজাকার' পরিচয় দিতে একবারও লজ্জা হলো না তাদের