গণমাধ্যমের বিস্তারে যা করেছেন শেখ হাসিনা

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ০২:০৯, শনিবার, ৪ মার্চ, ২০২৩, ১৯ ফাল্গুন ১৪২৯

গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। দেশের নানা সংকট ও শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের স্তম্ভের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অগ্রগতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগগুলো ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই গণমাধ্যমের উন্নয়নে কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারই একমাত্র সংবাদপত্রকে ‘শিল্প’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

 

শেখ হাসিনার সরকারের প্রথম মেয়াদ (১৯৯৬-২০০১) প্রথমবারের মতো বেসরকারি টিভি চ্যানেল ‘একুশে টিভি’ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে দেশে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন 'ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া যুগ'র সূচনা হয়। এরপরে 'শেখ হাসিনা সরকার' ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই 'তথ্য অধিকার আইন' প্রণয়ন করে এবং তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করে। যুগান্তকারী এ উদ্যোগের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে চাহিদা অনুযায়ী তথ্য পাওয়ার একটি আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়।  আইনটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশের মিডিয়াভুক্ত পত্রপত্রিকার সংখ্যা সাতশোর বেশি। এদের মধ্যে দৈনিক পত্রিকা ৫৬০টি। রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশাপাশি বিটিভি ওয়ার্ল্ড, বিটিভি চট্টগ্রাম ও সংসদ টেলিভিশন সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ১২টি আঞ্চলে সম্প্রচার করছে বাংলাদেশ বেতার। সরকার এ পর্যন্ত ৪৫টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, ২৭টি এফএম বেতার ও ৩১টি কমিউনিটি বেতারকে লাইসেন্স প্রদান করেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সাহায্যে কম খরচে সম্প্রচার করায় এ অঙ্গনকে শক্তিশালী করেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ করলে এ সুবিধা আরো বাড়বে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমকে আরো গণমুখী করতে জাতীয় অনলাইন নীতিমালা অনুসরণে এ পর্যন্ত ৮৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং দেশের প্রতিষ্ঠিত ৯২টি পত্রিকার অনলাইন নিউজ ভার্সনকে অনুমোদন দিয়েছে। এসব অনলাইন নিউজ সার্ভিসের নিবন্ধন তদারকি এবং আরও অনলাইন গণমাধ্যম অনুমোদন দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এসব অনলাইন গণমাধ্যম দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে ‘স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন’।

সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ দেশের গণমাধ্যমের শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। গণমাধ্যমকে শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করতে এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া খাতে শৃঙ্খলা ও দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘জাতীয় সম্প্রচার আইন’ প্রণয়ন করা হচ্ছে। এছাড়া ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা ও লাইসেন্সিং রেগুলেশন ২০১০, বেসরকারি এফএম বেতারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১০, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৪ এবং জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭ (২০২০ সালে সংশোধিত) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

পেশাগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি-বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে সহায়তার লক্ষে রাজধানীতে ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ তলাবিশিষ্ট তথ্যভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়া প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া-উভয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকগণ তাদের নিজেদের কর্মস্থলে চাকুরির অনিশ্চয়তায় ভোগেন, যা স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য হুমকি। তাদের চাকুরির এ অনিশ্চয়তা দূর করতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় প্রণয়ন করতে যাচ্ছে 'গণমাধ্যমকর্মী (চাকুরির শর্তাবলি) আইন' যা বর্তমানে অনমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বর্তমান সরকারের আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ‘সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠন। সরকারি অনুদানে পরিচালিত এ ট্রাস্ট-এর আওতায় ২০১১-১২ সাল থেকে ৫,২৬৩ জন অসচ্ছল দারিদ্র্যপীড়িত সাংবাদিককে ১৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি সাংবাদিক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৩ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ট্রাস্টকে ২০২০-২১ অর্থবছরে অনুদান হিসেবে ১০ কোটি টাকা প্রদান করেন, যা বর্তমানে প্রদান করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্র্রনিক মিডিয়াগুলো সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে টকশো, আলোচনা, বিতর্ক-এর মতো সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়। রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এমনকি সাধারণ মানুষ সরাসরি সম্প্রচারিত এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করেন। তারা এসব অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের সেন্সর ছাড়া সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ পান। এ ধরনের স্বাধীন মতপ্রকাশে সরকার কখনও হস্তক্ষেপ করে না। এতেই প্রমাণিত হয় আওয়ামীলীগ সরকারই দেশের গণমাধ্যম বান্ধব সরকার।

Share This Article