উপহারের ঘরে বদলে গেছে ১৮৮ পরিবার

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:৫৬, বুধবার, ১ মার্চ, ২০২৩, ১৬ ফাল্গুন ১৪২৯
  • মাথা গোঁজার এক টুকরো ভূমি উপহার পেয়েছে  ১৮৮ পরিবার।
  • হাসি ফুটিয়েছে তাদের মুখে।
  • পাকা-পরিচ্ছন্ন ঘরে থাকার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

জীবন বদলে গেছে শার্শা উপজেলার ভূমিহীন ১৮৮ পরিবারের সদস্যদের। সারা জীবনের চেষ্টায় যারা মাথা গোঁজার মতো এক টুকরো ভূমির মালিক হতে পারেননি, তারা আজ সম্পদশালী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। যখন আশ্রয়হীনের মতো ভূমিহীনরা গাছতলায়, ফুটপাতে বা অন্যের ছাদের নিচে পশুপাখির মতো বসবাস করতেন তারা আজ স্বাবলম্বী হতে শিখছেন। এটা সম্ভব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরকে কেন্দ্র করে।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ার পর তারা আজ স্বাবলম্বী, ঘরের পাশে গড়ে তুলেছেন সবজির মাচা, গরু-ছাগল পালনের জন্য করেছেন গোয়াল ঘর। খালি জমিতে বেগুন, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির আবাদ করছেন। এ সবুজের সমাহার জানান দিচ্ছে, তারা ঘর ও ভূমি পেয়ে স্বাবলম্বী হতে শিখছে। আজ তাদের পরিবারের সদস্যদের মুখে অনেক পাওয়ার হাসি যেন ঝিলিক দিচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, এই ঘর হাসি ফুটিয়েছে তাদের মুখে। নিজের একটি পাকা-পরিচ্ছন্ন ঘরে থাকার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নিরাপদ ও মজবুত স্থায়ী ঘর পাওয়া মানুষগুলোর একসময় ছিল না নিজস্ব কোনো স্থায়ী ঠিকানা। খাসজমি কিংবা অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে ভাঙা ঘরে থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করতেন তারা। তবে বর্তমান সরকারের এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করায় বাসস্থান ও নানাবিধ ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে তাদের জীবনমান।

শার্শা উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে ৯ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে উলাশী বাজারের পার্শ্ববর্তী খালধারে আশ্রয়ণের সারি সারি ঘর, যা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এখানে গড়ে উঠেছে ভূমিহীনদের বসতি। আর খালধারে গড়ে উঠেছে সবুজের সমাহার। রয়েছে হাঁস-মুরগি আর গবাদিপশু পালনের সুব্যবস্থা। এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে খেলছে শিশু-কিশোরের দল। পুরুষরা ছুটছেন দৈনন্দিন কাজে। নারীদের কেউ কেউ ব্যস্ত হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলের কাজ নিয়ে আর নিজ আঙ্গিনায় গড়ে তোলা সবজি বাগানের পরিচর্যা নিয়ে। ছিন্নমূল মানুষের যেন এক খণ্ড শান্তির নীড়। এই নীড়েই সুখের স্বপ্ন গড়েছেন সহায়-সম্বলহীন একদল নারী-পুরুষ। খালধারের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা রাসেল আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই পল্লীতে ১৭টিসহ উপজেলায় ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়িতে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ১৮৮। আরো ৭৬টি স্বপ্নের নীড় রয়েছে নির্মাণাধীন।

তাদের জীবনের শুরুটা ভূমিহীন হলেও এখন তারা আর ভূমিহীন নয়। মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের বসবাসের জন্য শুধু ঘর নয়, সরকারি দুই শতক জমিও দিয়েছেন। এতে তারা হাঁস-মুরগি গবাদিপশু পালন ও সবজির বাগানসহ নানা উপায়ে স্বাবলম্বী এ মানুষগুলো। শিক্ষার ছোঁয়াও লেগেছে তাদের মধ্যে। আশ্রয়ণে বসবাসরত শতাধিক ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। উলাশী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০০ গজের মধ্যেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। ফলে এ আশ্রয়ণে শিক্ষার প্রভাবও পড়েছে। এতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছেলেমেয়েরা শিক্ষারও সুযোগ পাচ্ছে।

উলাশী আশ্রয়ণে দেখা গেছে ছোট পরিসরে আদর্শ ছিমছাম সারি সারি ঘর। এসব ঘরে বাস করা মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মানবেতর জীবনমান থেকে মুক্তি পেয়ে এখন তারা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন-যাপন করছেন।

উলাশী আশ্রয়ণের বাসিন্দা জসিম হোসেন জানান, আগে আমরা অন্যের জায়গায় ছোট ভাঙা ঘরে থেকে ৩টি শিশু সন্তান নিয়ে শীত-বৃষ্টি মৌসুমে লড়াই করে অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করতাম। সরকার আমাদের নতুন ঘর দেওয়ায় এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি। আগের মতো কষ্ট আর নেই। একই কথা জমিলা, জয়নব বিবি, সালেহা খাতুন, দীন মোহাম্মদ ও আজিজুর রহমানের।

শুধু স্থায়ী ঠিকানাই নয়, একটি বাড়ি একটি আশ্রয় বদলে দিয়েছে তাদের জীবন। নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছে যাপিত জীবনের। বদলে গেছে প্রকল্পের আশপাশের দৃশ্যপট। বাড়ির চারপাশে বেড়ে উঠছে সবুজ বেষ্টনী, পালা হচ্ছে গবাদিপশু। খোলা হয়েছে নিত্যপণ্যের দোকান। দুই বছরে সবুজের সমারোহে ভরিয়ে দিয়েছেন তাদের বাড়ির আঙ্গিনা। মৌসুমি সবজি ও দেশি ফলের গাছ বেড়ে উঠছে তাদের ঘরের পাশে। ভাড়ার রিকশাভ্যান চালক থেকে মৎস্য ব্যবসায়ী হয়েছেন জসিম হোসেন। যে টাকা ভাড়া দিতেন সে টাকা ভবিষ্যতের জন্য সবাই মিলে সঞ্চয় করছেন। অনেকে নিজেদের সুবিধামতো ঘরের সাথে পাওয়া জমিতে নানা ধরনের স্থাপনাও তৈরি করে নিয়েছেন। তিনি ভ্যান রিকশা চালানো ছেড়ে এখন মাছ ব্যবসায়ী হয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু জানান, ইতোমধ্যে যারা ঘর পেয়েছেন তারা স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-যাপন করছেন। এছাড়া করোনাকালে এসব দরিদ্র মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। একইসাথে কোনো ভূমিহীন, গৃহহীন যেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে বঞ্চিত না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন অত্যন্ত আন্তরিকভাবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে এ উপজেলায় প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের যাচাই-বাছাই করে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসেবে গৃহনির্মাণ করে দিয়েছেন। ফলে ঠিকানাবিহীন মানুষগুলো রঙিন ঘরে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

তিনি আরো জানান, তাদেরকে স্বাবলম্বী করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসছে।

বিষয়ঃ উন্নয়ন

Share This Article