ক্ষমতায় থাকতে যে দাবিগুলো অস্বীকার করেছিলো বিএনপি!

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:৫১, বুধবার, ১ মার্চ, ২০২৩, ১৬ ফাল্গুন ১৪২৯

২০০৭ সালের অষ্টম সংসদীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে, ২০০৪ সালে চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে প্রথম প্রশ্নবিদ্ধ করে দলটি। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, শিশু ও উন্মাদ ব্যতীত কেউ নিরপেক্ষ নয়। তাই নির্দলীয় ব্যবস্থাকে তারাই প্রথম প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন।

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বিএনপি ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ তুলে ২৭ দফা আন্দোলন করে আসছে। তবে লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে বিএনপির সর্বশেষ শাসনামলে তারা এই দাবিগুলোই অস্বীকার করেছিলো এবং এর বিরোধীতা করেছিলো। তাই প্রশ্ন উঠেছে বিএনপি পুরনায় ক্ষমতায় গেলে কি সত্যিই রাষ্ট্র মেরামত করতে পারবে?

রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ১ম দফায় আছে ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করে বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সংশোধনী গুলো রহিত করতে হবে। অথচ জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণ অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় এসে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়েছিলেন। এছাড়া পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিতর্কিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার কার্যক্রম থেকে দায়মুক্তি দিয়েছিলেন। সেই দলটিই যদি আবার সংবিধান সংস্কারের কথা বলে তাহলে সেটি কতোটা বিশ্বাসযোগ্য হবে?

২য় দফায় বলা হয়েছে, বিএনপি প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা করবে। অর্থাৎ সকল মতের সম্মিলনে জাতীয় সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। অথচ বিএনপির শাসনামলে প্রতিহিংসার রাজনীতির যে ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায়, তা যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশের জন্যই লজ্জাজনক। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মধ্যমে তৎকালীন বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলেছিলো।

৩য় দফায় বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রবর্তন করবে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, এই দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করার পেছনে দলটি নিজেই দায়ী।

২০০৭ সালের অষ্টম সংসদীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে, ২০০৪ সালে চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে প্রথম প্রশ্নবিদ্ধ করে দলটি। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, শিশু ও উন্মাদ ব্যতীত কেউ নিরপেক্ষ নয়। তাই নির্দলীয় ব্যবস্থাকে তারাই প্রথম প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন।

অষ্টম দফায় বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২ সংশোধন করা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দলটির সর্বশেষ শাসনামলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করেই  নিজেদের পছন্দের বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত) এম এ আজিজকে ২০০৫ সালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়।  সেই কমিশন দেড় কোটি ভুয়া ভোটার সংবলিত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে।

দশম। দফায় বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করে, বিচারিক প্রক্রিয়া সংস্কারের লক্ষ্যে বিএনপি একটি জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করবে। অথচা ২০০৯ সালে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে যখন বহুল প্রতীক্ষিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়, বিএনপি-জামায়াত দেশব্যাপী হরতাল–অবরোধের মাধ্যমে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটিয়েছে, যা কিনা বিচার বিভাগের প্রতি তাদের ঔদ্ধত্য ও অপমানজনক অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ।
-------------------------------–-
সুত্র : প্রথম আলোয় প্রকাশিত মিজানুর রহমানের "বিএনপির পশ্চাৎপদ রাজনীতি দিয়ে কি রাষ্ট্র মেরামত সম্ভব?" শীর্ষক
কলাম অনলম্বনে।

Share This Article