শাটডাউন হতে পারে শ্রীলঙ্কা: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কা শাটডাউনের সম্মুখীন হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল ওয়েরাসিংহে। তার দাবি, শিগগিরই স্থিতিশীল সরকার গঠন না হলে গোটা শ্রীলঙ্কা শাটডাউন তথা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির নিউজনাইট প্রোগ্রামে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান আর্থিক ও জ্বালানি সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় পেট্রোলিয়ামের জন্য পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে ‘অনেক অনিশ্চয়তা’ রয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল ওয়েরাসিংহে। কারণ আন্তর্জাতিক বেলআউট প্যাকেজ পাওয়ার বিষয়ে অগ্রগতিও একটি স্থিতিশীল প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে।
জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েক মাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না।
এই সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতিতেই গত এপ্রিল মাসে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নন্দলাল ওয়েরাসিংহে। তিনি বলছেন, স্থিতিশীল প্রশাসন ছাড়া কীভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সরবরাহ করা যায় সে সম্পর্কে তিনি ‘কোনো পথ দেখতে পাচ্ছেন না’।
নন্দলাল ওয়েরাসিংহে বলছেন, ‘আমরা সম্ভবত চলতি মাসের শেষ অবধি ডিজেলের অন্তত তিনটি চালান এবং পেট্রোলের একটি বা দু’টি চালানের জন্য অর্থায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। তবে এর বাইরেও, এই দেশের জন্য অপরিহার্য পেট্রোলিয়াম অর্থায়নের জন্য আমরা পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করতে সক্ষম হবো কি না তা নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি তা না হয়, তাহলে গোটা দেশ বন্ধ (শাটডাউন) হয়ে যাবে। তাই আমার এমন একজন প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিপরিষদ দরকার, যারা (প্রয়োজনীয় সকল) সিদ্ধান্ত নিতে পারেন... আর এটি ছাড়া, সকল মানুষ কষ্ট পেতেই থাকবে।’
অবশ্য স্থিতিশীল সরকার পেলে শ্রীলঙ্কা খুব শিগগিরই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে বলেও আশাবাদী নন্দলাল ওয়েরাসিংহে। তিনি বলছেন, একবার একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে, শ্রীলঙ্কা এই সংকট থেকে ‘তিন বা চার বা পাঁচ মাসের মধ্যে’ বেরিয়ে আসতে পারে।
বিবিসি বলছে, শ্রীলঙ্কায় চলমান অর্থনৈতিক সংকট এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমতহীনতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকেও দেশটির সম্ভাব্য নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে তেমন কোনো সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়েছেন নন্দলাল ওয়েরাসিংহে নিজেই।
শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের ভাষায়, ‘কোনো রাজনৈতিক পদ গ্রহণে আমার কোনো আগ্রহ নেই।’