১০১ দেশের দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ পাচ্ছেন বাংলাদেশীরা

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ০১:২২, মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১৫ ফাল্গুন ১৪২৯

‘৫৭টি দেশের বাইরে সেই দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণের পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চলমান রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে আরো ৪৪টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ১০১টি দেশ রাখা হয়েছে, যেটি মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। এসব দেশের নাগরিকরা চাইলে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিতে পারবেন। 

বাংলাদেশীদের জন্য দ্বৈত নাগরিকত্বের পরিসর আরো সম্প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে সরকারি চাকরিতে থাকা ব্যক্তিরা এ সুযোগ নিতে পারবেন না। এর আগে নিজ দেশের পাশাপাশি ৫৭ দেশের নাগরিকত্ব নেয়ার সুযোগ মিলত। সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরো ৪৪টি দেশ। সব মিলিয়ে এখন এ সুবিধার আওতায় আসছে ১০১টি দেশ। অর্থাৎ এসব দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করা কোনো বাংলাদেশী চাইলে দেশেও নাগরিকত্ব অব্যাহত রাখতে পারবেন। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিকালে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।


দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগকে নানাভাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিবাসন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকে অবৈধভাবে দেশ থেকে অর্থ পাচার করেন। অনেকে নিরাপদ ও উন্নত জীবনের কারণে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেন। তবে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে দেশে বিনিয়োগের সুযোগও রয়েছে। যদিও এ সুযোগ খুব কমই গ্রহণ করেন বাংলাদেশীরা।

অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক অস্ট্রিয়াভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ইমিগ্রান্ট ইনভেস্ট’-এর তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ৪৯ শতাংশ দেশ দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন দিয়ে থাকে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ক্যারিবীয়, তুরস্ক, স্পেন অন্যতম। এসব দেশে অভিবাসীরা মূলত উন্নত জীবন, সামাজিক নিরাপত্তা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো বৃহৎ সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে থাকেন। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, দ্বৈত নাগরিকত্বের মাধ্যমে চার ধরনের সুযোগ নিয়ে থাকেন অভিবাসীরা। এগুলো হলো ভ্রমণ, স্বাস্থ্য, ব্যবসা ও পেশাগত উন্নয়ন এবং পরিবারের ভবিষ্যৎ উন্নত জীবন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে—কোনো বাংলাদেশী যদি বিদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে, তাহলে সে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চলমান রাখতে পারবে। কোন কোন দেশের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে, সেটি একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে ইউরোপ-আমেরিকাসহ মোট ৫৭টি দেশ ছিল। কানাডা, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানের মতো দেশ ছিল।’

মাহবুব হোসেন বলেন, ‘৫৭টি দেশের বাইরে সেই দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণের পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চলমান রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে আরো ৪৪টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ১০১টি দেশ রাখা হয়েছে, যেটি মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। এসব দেশের নাগরিকরা চাইলে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিতে পারবেন। তালিকায় নতুন করে যুক্ত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশের ১৯টি, আমেরিকা মহাদেশের ১২টি, ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ১২টি এবং ওশেনিয়া মহাদেশের একটি দেশ রয়েছে।’

দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধায় যুক্ত হওয়া আফ্রিকা মহাদেশের ১৯টি দেশ হলো মিসর, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, আলজেরিয়া, সুদান, মরক্কো, ঘানা, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, তিউনিসিয়া, সিয়েরা লিয়ন, লিবিয়া, কঙ্গো, লাইবেরিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরিত্রিয়া, গাম্বিয়া, বতসোয়ানা, মরিশাস। আমেরিকা মহাদেশের ১২টি দেশ হলো আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, সুরিনাম, পেরু, একুয়েডর, চিলি, উরুগুয়ে, গায়ানা। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ১২টি দেশ হলো কিউবা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, হাইতি, বাহামা, জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, ডমিনিকা, সেন্ট লুসিয়া, বার্বাডোজ, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন, গ্রেনাডা এবং সেন্ট কিটস ও নেভিস। এছাড়া ওশেনিয়া মহাদেশের একমাত্র দেশ ফিজি।


প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও আফগানিস্তানে অবশ্য দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অর্থাৎ এসব দেশ তাদের নাগরিকদের অন্য দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব নেয়ার কোনো সুযোগ রাখেনি। বিশেষত ভারতের মতো দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও নাগরিকত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। কোনো ভারতীয় নাগরিক মার্কিন নাগরিকত্ব নিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তার নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যায়। এর পরও ভারতীয় পাসপোর্ট ত্যাগ করে হলেও প্রবাসে খুঁটি গাড়ছে দেশটির ধনী নাগরিকরা।

বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়া সবচেয়ে সহজ। যদিও এর সঙ্গে অর্থ পাচারের বিষয়টিরও সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও অর্থায়ন বিশেষজ্ঞদের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই)। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে শুধু পণ্য আমদানি ও রফতানির মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমেই বছরে অর্থ পাচার হচ্ছে ৬৪ হাজার কোটি টাকা।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘দুবাইয়ে ৪৪৯ বাংলাদেশীর হাজার প্রপার্টি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সিএডিএস) সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি জানায়, বাংলাদেশে তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে প্রপার্টি কিনেছেন ৪৫৯ বাংলাদেশী। ২০২০ সাল পর্যন্ত তাদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি প্রপার্টি ক্রয়ের তথ্য পাওয়া গেছে, কাগজে-কলমে যার মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার।

নাগরিকত্বের সুযোগ নিয়ে ইউরোপের অনেক দেশেও অবৈধ উপায়ে সম্পদ ও অর্থ পাচার করার অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে। লন্ডনের অভিজাত এলাকায় প্রপার্টির শীর্ষ বিদেশী ক্রেতা হওয়ার সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে । লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় অন্তত অর্ধশত বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারের বাড়ি কেনার সুনির্দিষ্ট তথ্যও রয়েছে। অভিবাসনসংক্রান্ত সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান লন্ডনভিত্তিক অ্যাস্টনস সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের বিভিন্ন এলাকার বিদেশী প্রপার্টি ক্রেতাদের জাতীয়তাভিত্তিক একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ওই তালিকায় দেখা যায়, প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের বিদেশী প্রপার্টি ক্রেতাদের তালিকায় বাংলাদেশীদের অবস্থান নবম। ২০২০ সালের ওই নয় মাসে সেখানে ৯৮টি লেনদেনের মাধ্যমে বাংলাদেশীরা প্রায় ১২ কোটি ২৯ লাখ পাউন্ড মূল্যের প্রপার্টি কিনেছেন। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এসব লেনদেনে গড় ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ লাখ পাউন্ড বা প্রায় ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। এছাড়া দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের স্থানান্তরের মাধ্যমে অবৈধভাবে কাজ দেয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি সম্পদ বিক্রি করে অর্থ নিয়ে যাওয়ার মতো অভিযোগও রয়েছে বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে বলেই তারা দ্বৈত নাগরিকত্ব নিচ্ছে। যারা শাসক দলের লোক, তারা মনে করে কোনো কারণে যদি ক্ষমতা চলে যায়, তাহলে তাকে দেশের বাইরে চলে যেতে হতে পারে। আবার যারা বিরোধী দলে আছে; তারাও অনিরাপত্তায় ভোগে। যেকোনো সময় জেলে যেতে হতে পারে। তাই তারা নিরাপদ জায়গায় যেতে চায়। ব্যবসায়ীরা মনে করেন তাদের অনেক টাকা রয়েছে, যেকোনো সময় তাদের ওপর চাপ আসতে পারে। তাই তারাও নিরাপদ জায়গায় অর্থ রাখতে চান। আর সাধারণ মানুষের ছেলেমেয়েরা বিদেশে পড়ালেখা করলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে অভিভাবকরা তাদের আর দেশে আসতে বলেন না। তারাও বিদেশে বসবাস শুরু করেন। উন্নত দেশগুলোয় অভিবাসনটি স্থায়ীভাবে হয়ে থাকে। এতে দেশের ওপর, সুশাসনের ওপর, ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থাহীনতাই প্রকাশ পায়। এটি আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

Share This Article


ইমরান খানের দলকে নিষিদ্ধ করছে পাকিস্তান সরকার

দেশে দেশে কোটা ব্যবস্থা

আমি মারাও যেতে পারতাম: ট্রাম্প

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, নিহত আরও ১৪১ ফিলিস্তিনি

প্রাণে বেঁচে ঈশ্বরের কাছে ট্রাম্পের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছর ৩০২ বন্দুক হামলার ঘটনা

গাজায় গণহত্যার জন্য ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র দায়ী: মাহমুদ আব্বাস

ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে: এফবিআই

পশ্চিমের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই ইংরেজির বিস্তার উত্তর কোরিয়ায়

হামলার ঘটনায় বাইডেনকেই দায়ী করছেন ট্রাম্পের সমর্থকরা

আমেরিকায় এমন সহিংসতার স্থান নেই, এটা ক্ষমা করা যায় না: বাইডেন

ডান কানে গুলিবিদ্ধ ট্রাম্প