পড়াশোনা ঠিক রেখে রাজনীতি করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
![পড়াশোনা ঠিক রেখে রাজনীতি করতে হবে: রাষ্ট্রপতি](/Uploads/Images/News/2023/2/Image-10213-20230226045856.webp)
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দলীয় লেজুড়বৃত্তির ঊর্ধ্বে উঠে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, পড়াশোনার জায়গাটা ঠিক রেখে তারপর রাজনীতি, সমাজসেবা, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে নিজেদের যুক্ত করতে পারেন। কোনোভাবেই লেখাপড়ার ক্ষেত্রে আপস করা যাবে না।
২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ‘ষষ্ঠ সমাবর্তন-২০২৩’ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এবং সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এ আহ্বান জানান। জাবির ষষ্ঠ সমাবর্তনে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
আবদুল হামিদ বলেন, দুর্নীতি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে অন্যতম বড় অন্তরায়। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ইদানিংকালে পত্রপত্রিকা খুললেই দেখা যায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজির নেতিবাচক খবর। নিজেদের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে রাখবেন।
বিশ্ব র্যাংকিংয়ে প্রথম ১০০০ এর মধ্যেও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়ায় রাষ্ট্রপ্রধান হতাশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, উপাচার্য, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেন। তারা রাজনীতির অনুশীলন এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণও করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি প্রত্যাশিত।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শুধু সনদসর্বস্ব শিক্ষা দিয়ে দেশ ও দশের উন্নয়ন সম্ভব না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে বাস্তব জীবনের যোগসূত্র স্থাপন করতে পারলে তবেই সেই শিক্ষা সফল হয়েছে বলা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, উপাচার্য ও শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে শিক্ষাদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মূল এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আর শিক্ষার্থীদের মূল কাজ লেখাপড়া ও জ্ঞান অর্জন।
কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধার সম্প্রসারণ নয়, রাষ্ট্রপতি হামিদ শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষ সাধনেও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, তরুণ সমাজকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নিরন্তর গবেষণা।
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, দখলবাজী-চাঁদাবাজীর কারণে ছাত্র রাজনীতিকে এখন আর মানুষ আগের মতো সম্মানের চোখে না দেখে নেতিবাচকভাবে দেখে।
গ্র্যাজুয়েট ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। দেশের উন্নয়ন ও ইতিবাচক পরিবর্তনে মেধাবী তরুণদের যথাযথ পরিচর্যার জন্য আমাদের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে হবে।
সমাবর্তনে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজরা অবৈধভাবে নিজেদের সমৃদ্ধ করে এবং রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিচারনীতি এবং এমনটি মৌলিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে এক অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। তারা গণতন্ত্রবিরোধী, তারা রাষ্ট্রবিরোধী, জনগণবিরোধী, জাতিবিরোধী, মানবতাবিরোধী আর ঘৃণিত। আপনারা কোনো কারণেই নিজেদের ওই দলের অন্তর্ভুক্ত করবেন না। তাই সবার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, অর্পিত দায়িত্বের প্রতি সর্বোচ্চ সততা, ভালোবাসা, একাগ্রতা ও বিশ্বাস রেখে মানুষকে নিরলস সেবা দিয়ে যাবেন। দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করবেন, ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলবেন। দুর্নীতি মুক্ত, সন্ত্রাস মুক্ত, মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করবেন।