উপরে ওঠার সিঁড়ি পরিশ্রমীদের জন্য: প্রধান বিচারপতি
![উপরে ওঠার সিঁড়ি পরিশ্রমীদের জন্য: প্রধান বিচারপতি](/Uploads/Images/News/2023/2/Image-10207-20230225133600.webp)
‘বায়ান্ন আর একাত্তর শিখিয়েছে কীভাবে বিজয়ী হতে হয়’
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘পৃথিবীর প্রায় সব পরিবর্তনের পেছনে ছিল তরুণ সমাজের অবদান। ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দেবে এই তরুণরাই। উপরে ওঠার সিঁড়ি তাদের জন্য যারা পরিশ্রমী।’
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ষষ্ঠ সমাবর্তনে বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বায়ান্ন আর একাত্তর শিখিয়েছে কীভাবে বিজয়ী হতে হয়। অল্পতে হতাশ হলে চলবে না। দেশকে আরো সমৃদ্ধশালী করার দায়িত্ব তোমাদের। একাত্তরের রক্তের প্রতিদান দিতে হবে। ব্যর্থতায় আতঙ্কিত না হয়ে কাজের প্রতি একাগ্র হয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে যাবে।
তিনি আরো বলেন, অসংখ্য মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে তোমরা ডিগ্রি অর্জন করেছ। এখন মেহনতি মানুষের প্রতি তোমাদের ঋণ পরিশোধের পালা। জনগণকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। নিজের যোগ্যতা প্রমাণের এখনই সময়। মহান কিছু করতে হলে খেটে খাওয়া মানুষকে ভালোবাসো। দেশের প্রতিটি ইঞ্চি কাজে লাগায়। আজ যারা ডিগ্রি অর্জন করেছেন, সততা এবং একনিষ্ঠতার সঙ্গে পরিশ্রম করে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখবেন। ব্যক্তিগত স্বার্থের চাইতে মানুষের প্রতি সেবার বিষয়টি সবার আগে বিবেচনায় নিতে হবে।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশার নীতিবিরুদ্ধ যেকোনো কাজ হতে বিরত থেকে অর্থহীন বিষাক্ত দলাদলী থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
শিক্ষকদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা শুধু গ্রেড বা পরীক্ষা পাশের জন্য শিক্ষাদান করবেন, এটি প্রত্যাশিত নয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আপনাদের সংযোগ কেবল শ্রেণিকক্ষের পাঠদান কিংবা পরীক্ষা গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সেজন্য পেশাগত এবং ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সততা, নিষ্ঠা আর উন্নত নৈতিক মূল্যবোধের প্রগাঢ় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের স্বপ্ন কোনোভাবেই যেন পিষ্ট না হয়।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ব্যক্তিস্বার্থ মানুষকে অমানুষে পরিণত করতে প্ররোচিত করে। আর প্ররোচিত করে অর্থলোভী হতে, দুর্নীতি করতে, অর্থ পাচার করতে এবং মানবিকতাবোধ ধ্বংস করতে।
দুর্নীতিবাজরা অবৈধভাবে নিজেকে সমৃদ্ধ করে এবং রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিচারনীতি এমনকি মৌলিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে। তারা গণতন্ত্রবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী, জনগণবিরোধী, জাতিবিরোধী, মানবতাবিরোধী আর ঘৃণিত। আপনারা কোনো কারণেই নিজেদের ঐ দলের অন্তর্ভুক্ত করবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে মৌলিক জ্ঞানচর্চা এবং মুক্তবুদ্ধি অনুশীলনের চর্চা বজায় রাখা চাই। এক্ষেত্রে শিক্ষকতার পাশাপাশি আপনাদের ভূমিকা রাখতে হবে।
এর আগে বেলা পৌনে ৪টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তনের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বক্তব্য দেন। পরে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ১৬ জন শিক্ষার্থী স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন। এ বছর ১৫ হাজার ২২৩ জন শিক্ষার্থী সমাবর্তন পাচ্ছেন।