আঁধার কাটছে না বিএনপির, ‘পর্দার আড়ালে’ খালেদার সংলাপ!

- সংলাপে শুধু খালেদা জিয়াই নন; তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বোন সেলিনা ইসলামও যুক্ত রয়েছেন।
- নেতাদের দ্বন্দ্বে পথহারা পথিকের মতো চলছে তৃণমূল।
- খানিকটা আলোর পথ খুঁজছেন দীর্ঘদিন অন্ধকারে থাকা বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা।
দ্বন্দ্ব আর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অনেকটাই খারাপ সময় যাচ্ছে বিএনপির। নেতাদের দ্বন্দ্বে পথহারা পথিকের মতো চলছে তৃণমূল। দ্বিধা বা সংশয় থাকায় নিজেদের মধ্যে সংঘাতেও জড়াচ্ছেন অনেকে। তবুও খানিকটা আলোর পথ খুঁজছেন দীর্ঘদিন অন্ধকারে থাকা বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা। এর মধ্যেই সামনে আসে ‘পর্দার আড়ালে’ খালেদা জিয়ার সংলাপ ইস্যু। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। নানা প্রশ্ন জাগছে নেতাদের মনেও। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা না করা নিয়ে মন্ত্রীদের নানামুখী বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সামনে এসেছে এসব প্রশ্ন।
তথ্যমতে, বিভিন্ন মাধ্যমে সরকার পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে খালেদা জিয়ার। আগামী নির্বাচন, বিদেশ যাওয়াসহ বিভিন্ন ইস্যুতে চলছে আলোচনা। তবে এ ব্যাপারে অন্ধকারে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। কেননা একেবারে উচ্চ পর্যায়ে খুবই গোপনীয়তার সঙ্গে চলছে যোগাযোগ।
তবে বর্তমানে খালেদা জিয়ার 'রাজনীতি করা' ইস্যুতে বিএনপি নেতাদের মাঝে উৎসাহ দেখছেন বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। কেননা 'খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন' মানে নির্বাচন ইস্যুতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সংলাপের প্রয়োজনেই হয়তো সরকারের তরফ থেকে এমন সংকেত এসেছে। তবে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে নেতা কর্মীদের মাঝে উৎসাহ মিললেও তৎপরিবর্তিতে তথ্যমন্ত্রীর কথায় কিছুটা ভাটা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেছেন, সার্বিক বিবেচনায় রাজনীতি করার মতো অবস্থায় নেই খালেদা জিয়া। ফলে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে। সরকারের নতুন কোনো ফাঁদে পড়ার আতঙ্কও দেখা দিয়েছে।
সংলাপের বিষয়ে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সংলাপ চলছে বলে তাদের কাছে খবর রয়েছে। এই সংলাপ মূলত নির্বাচন ইস্যুতে খালেদা জিয়াকে সাময়িক রাজনীতি করার অনুমতি দেওয়া নিয়ে চলছে। বিষয়টি প্রথমে গুঞ্জন হিসেবে ছড়ালেও এখন অনেকেই বিশ্বাস করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নেতা বলেন, সংলাপে শুধু খালেদা জিয়াই নন; তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বোন সেলিনা ইসলামও যুক্ত রয়েছেন। এই দুজনই খালেদাকে কারাগার থেকে ফিরোজায় আনার পর গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখনও বিএনপি ছিল অন্ধকারে। এই সাক্ষাতের কথা কিছুই জানতেন না বিএনপি নেতারা। এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও রয়েছে।
দলটির কেউ কেউ মনে করছেন, শর্তযুক্ত জামিনে খালেদা জিয়াকে বাসায় রাখার বিষয়টি অপমানজনক দৃষ্টিতে দেখছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। আর এ কারণেই এখন খালেদা জিয়ার আপসহীন বৈশিষ্ট্যের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না বিএনপি নেতারা। যেকোনো সময় খালেদা জিয়া নিজের মন পরিবর্তন করতে পারেন বলে মনে করছেন তারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় গোপনে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন খালেদা জিয়া। যোগাযোগ না রাখলে দণ্ডিত হয়েও এতদিন বাসায় থাকতে পারতেন না তিনি। এখন নতুন করে আবার সংলাপের বিষয় শোনা যাচ্ছে। সংলাপ নিয়েও খালেদা জিয়ার ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বারবার বলেছেন, খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়ার যে শর্ত রয়েছে সেই শর্তে কোথাও নেই যে, তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না। তবে এটাও বলেছেন, যে অসুস্থতার কারণে তাকে জামিন দেয়া হয়েছে অসুস্থ ব্যক্তি যদি রাজনীতি করেন সেটি সরকার দেখবে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, খালেদা জিয়া যেহেতু বিশেষ বিবেচনায় নিজ বাসভবনে থাকার অনুমতি পেয়েছেন, কাজেই তার রাজনীতি করার অধিকার নেই। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও একই কথা বলেছেন। ফলে এক পা এগিয়েও দু-পা পেছনে যেতে হচ্ছে দলটিকে।