পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল 'রুটিন ওয়ার্ক', নতুন কিছু নয়!

- প্রকাশনা বন্ধের ঘটনায় বিএনপির মন্তব্য
- অপপ্রচার চালাচ্ছেন বিএনপি ঘরানার সাংবাদিকরা
- দিনকাল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত
সম্প্রতি দৈনিক দিনকালের প্রকাশনা বন্ধ নিয়ে সরব মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। নিজেদের রাজনৈতিক 'মুখপত্র' হিসেবে দাবি করা পত্রিকাটির প্রকাশনা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাতিল হলেও তা ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে দলটি; যদিও যেকোনো পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত করার সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া বিদ্যমান 'প্রকাশনা আইন' এ সুষ্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে, যা লঙ্ঘন করে কোনো পত্রিকা যেমন প্রকাশ করা যায় না, তেমনি বন্ধও করা যায় না।
পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধে প্রধানত তিনটি কারণ দেখছে অভিজ্ঞ মহল। প্রকাশক তারেক রহমান একজন দণ্ডিত আসামি, যা প্রকাশক হিসেবে অযোগ্য হয়ে পড়ে। প্রকাশকের দায়িত্ব হস্তান্তর না করেই ছয় মাসের বেশি বিদেশে অবস্থান বা পলাতক থাকা এবং আইনি প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ঠিকানা পরিবর্তন ও অবহিত না করা।
এসব কারণ এবং নিয়মিত প্রকাশনা না করাসহ বহুবিধ কারণে চলতি ও বিগত বছরে বাতিল করা হয়েছে আরও ১০০ পত্রিকার ডিক্লারেশন বা ঘোষণাপত্র। এসব পত্রিকা বন্ধে হইচই না থাকলেও দলের একমাত্র মুখপত্র হওয়ায় 'দৈনিক দিনকাল' নিয়ে কথা বলছে বিএনপিসহ তাদের সমর্থিত কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।
প্রকাশনা বন্ধের ঘটনায় এরই মধ্যে সরকারকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেছেন দলটির নেতারা। অপপ্রচার চালাচ্ছেন বিএনপি ঘরানার সাংবাদিকরাও।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, অনিয়ম পেলে যেকোনো পত্রিকার ঘোষণাপত্র বাতিল করা হয়।এটি সরকারের একটি ‘রুটিন ওয়ার্ক’ যা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সম্পন্ন করে থাকে জেলা প্রশাসন। দৈনিক দিনকালও একই নিয়মে বাতিল হয়। এর জন্য ভিন্ন কোনো আইন প্রয়োগ করা হয়নি। অথচ বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছে বিএনপি।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন পত্রিকাটিকে আইন লঙ্ঘন করে প্রকাশনা অব্যাহত রাখায় 'কারণ দর্শানো'র নোটিশ দেয়, কিন্তু দিনকাল কতৃপক্ষ উপযুক্ত কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হলে গত ২৬ ডিসেম্বর পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিলের 'অফিস আদেশ' জারি করেন ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
২৬ ডিসেম্বর ডিক্লারেশন ও পত্রিকা মুদ্রণের ঘোষণাপত্র বাতিল করলে 'দৈনিক দিনকাল'র পক্ষ থেকে স্থগিতাদেশ চেয়ে 'বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে আবেদন করা হয়। তাদের আবেদনের ভিত্তিতে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত থাকে। মাঝে শুনানি চলে। তবে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলও পত্রিকাটির আপিল খারিজ করে দেয়। ফলে চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয়ে যায় পত্রিকাটি।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে ২১০টি সংবাদপত্র বাতিলের যে তালিকা করা হয়েছিল প্রায় একই ধরণের অভিযোগে কয়েক মাস আগে এর মধ্যে ১০০ পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল করা হয়। এরও আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে প্রকাশিত ১০টি পত্রিকার ঘোষণাপত্রও বাতিল করা হয়েছিল।
সমালোচকরা বলছেন, যেকোনো পত্রিকা প্রকাশনা বা বন্ধের সুনির্দিষ্ট প্ৰক্রিয়া রয়েছে যা সবার জন্যই প্রযোজ্য এবং দৈনিক দিনকালের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু পত্রিকাটি একটি বড় রাজনৈতিক দলের মুখপত্র হওয়ায় সেটি নিয়ে তারা যে ধরণের সমালোচনায় মেতেছেন তা অনভিপ্রেত। আইন লঙ্ঘন করলে এবং তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিলেই যদি সেটি 'বিরোধী দলের কণ্ঠ রোধ'র অভিযোগ আনা হয় তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে যে একই দেশে বিরোধী দলের জন্য ভিন্ন আইন প্রযোজ্য বা প্রয়োজন কি?
অন্যদিকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা বলছেন, দিনকাল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। প্রকাশনা বন্ধের বিরুদ্ধে আপিলও করেছে পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শুনানি শেষে তাও খারিজ করেছে 'প্রেস কাউন্সিল'। আদালত ও প্রেস কাউন্সিলের সিদ্ধান্তেই পত্রিকাটি বন্ধ হয়েছে; এখানে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই।