যে কারণে আই এমএফএর ঋণ পেল না শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান
করোনা মহামারী ও পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে যখন টালমাটাল অবস্থা চলছিল তখন সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ চেয়ে আবেদন করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। তবে এদের মধ্যে শুধু বাংলাদেশের আবেদনই পাশ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ কার্যালয়ে ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী বোর্ডের সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।তবে বাকি দুই দেশকে ঋণ দিতে এখনও সম্মতি দেয়নি সংস্থাটি।তাই প্রশ্ন আসছে বাংলাদেশ ঋণ পেল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান কেন পেলোনা?
আইএমএফ জাতিসংঘ কর্তৃক অনুমোদিত স্বায়ত্তশাসিত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তারা বিভিন্ন দেশের মুদ্রামানের হ্রাস-বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত দেশগুলোকে ঋণ বিতরণ করে থাকে। তবে শর্তানুযায়ী, এর জন্য নির্দিষ্ট সময়ে সুদ সমেত এই অর্থ পরিশোধের সক্ষমতাও থাকতে হয়। আর এখানেই যত বিপত্তি। বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারলেও সংশয় রয়েছে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে।
আইএমএফের ঋণ পেতে দেশের জিডিপি, রিজার্ভ, প্রবাসী রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণকে বিবেচনা করা হয়। আশার কথা হচ্ছে এই পাঁচটি খাতেই আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি রয়েছে বাংলাদেশের। বিপরীতে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার এ খাতগুলোর অবস্থা শোচনীয়।
আইএমএফের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি ৪১৬ বিলিয়ন ডলার। আর শ্রীলঙ্কার জিডিপি মাত্র ৮২ বিলিয়ন ডলার। এই হার পাকিস্তানের ৩৪৮ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৩৪ বিলিয়ন ডলার। শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ১.৫ বিলিয়ন ডলার। এই হার পাকিস্তানের ২২.৮১ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি আয় ৫২.৮ বিলিয়ন ডলার, যা পাকিস্তানের ২২.৫ বিলিয়ন ডলার। এবং শ্রীলঙ্কার এই হার ৮.৫ বিলিয়ন ডলার৷
একই সাথে বাংলাদেশকে প্রতিবছর বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধ করতে হয় দুই বিলিয়ন ডলার, শ্রীলঙ্কাকে করতে হয় সাত থেকে আট বিলিয়ন ডলার। এই হার পাকিস্তানের ৯ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ওপর দুই দেশের তুলনায় অর্থনৈতিক বিচারে সব দিক দিয়েই এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।একই সাথে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগ থেকেই রিটার্ন আসে।কাজেই এখানে ঋণ খেলাপির কোনো শঙ্কা নেই।এছাড়া ঋণ পরিশোধে কখনোই ডিফলটার হয়নি বাংলাদেশ।তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ঋণ পেলেও পায়নি শ্রীলংকা ও পাকিস্তান।