আমনে ভাসছে দেশ: বিঘা প্রতি কৃষকের মুনাফা ১৮ থেকে ২১ হাজার টাকা!

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ রাত ০৮:৪৪, রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১৫ মাঘ ১৪২৯

চলতি আমন মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি ও অতিবর্ষণের ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছিলো তার পুরোটাই কেটে গেছে এবছর আমনের বাম্বার ফলনে। শুধু তাই নয়, গত বছর বন্যায় কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছিলো তাও পুষিয়ে যাচ্ছে এবারের আমনের ফলনে।

 

দেশের কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, এ বছর সারাদেশে ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও উৎপাদন হয়েছে ৫৯ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে; অর্থাৎ প্রায় ৫৬ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আমনের চাষাবাদ হয়েছে। গড় ফলন হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ১১৯ টন।আর তা থেকে
চাল উৎপাদন হয়েছে ২.৬৭ টন।

অন্যদিকে গড়ে বিঘা প্রতি কৃষকের খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদন হয়েছে ২২ থেকে ২৪ মন। প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ শ টাকায়। সে হিসেবে প্রতি বিঘায় কৃষকের লাভ হয়েছে ১৮ থেকে ২১ হাজার টাকা।

যদিও দেশের বিভিন্ন জেলায় আরো কম দামে ধান বিক্রির খবর পাওয়া গেছে যেখানে কৃষকের মুনাফা কিছুটা কমেছে তবে সার্বিক অবস্থা বলছে কৃষক এবার লাভবান হয়েছে।  

কেন এই বাম্পার ফলন?

কৃষকদের দুর্দশার কথা চিন্তা করে সরকার ১৬ হাজার আমন চাষীকে বীজ ও সার দিয়েছিলো ৷ বিশেষ প্রণোদনা এবং বন্যার পলিতে জমি উর্বর হওয়ায় আমন চাষের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়৷ সেই কারণেই আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের৷

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাম্পার ফলনের খন্ড চিত্র:

সুনামগঞ্জ :  হাওড় অধ্যুষিত এ জেলায় আমন আবাদ হয় না। তবে এবার এ জেলাতেও বাম্পার ফলন হয়েছে ৷
এ জেলায় আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮১ হাজার ১০০ হেক্টর। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আবাদ হয়েছে ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে।
বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৬ মণ ধান হয়েছে ৷ তবে ট্রাক্টরে হাল দেওয়া, সেচ, মেশিনে ধান কাটা এবং মাড়াইয়ে ডিজেল ব্যবহার করায় খরচ বেশি হলেও বন্যামুক্ত বাম্পার আমন ফলন পেয়ে কৃষকরা অনেক খুশি।

বরিশাল : বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৬ লাখ ৯৯ হাজার ১১২ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। গত বছর একই পরিমান  জমিতে আমন আবাদ করে চাল উৎপাদন হয়েছিল ১৫ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ টন। এবার বাম্পার ফলন হওয়ায় চাল উৎপাদন গত মৌসুমের চেয়ে আরও বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

রাজশাহী : এবার বরেন্দ্র অঞ্চলে (রাজশাহী-নওগাঁ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরে) রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি। বাস্তবে আবাদ হয়েছে আরো বেশি। আবাদের পরিমাণ ৪ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমি। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৩ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। আবাদ বেশি হওয়ায় চালের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়বে।

বগুড়া: বগুড়ার আঞ্চলিক কৃষি দফতরের রেকর্ড অনুযায়ী ৪ জেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া কৃষি অঞ্চলে এবার  গড়ে হেক্টর প্রতি আমনের ফলন হয়েছে ৩ দশমিক ৩৮ মেট্রিক টন।  নতুন আমন ধান কোথাও ১২০০ কোথাও ১৩০০ বা ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ:  এবার এ অঞ্চলে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭২ হাজার হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৭৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে।

কুমিল্লা: আমন উৎপাদনে কুমিল্লায় নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন এখানকার কৃষকরা। এবছর ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে কুমিল্লার আমন চাষিরা জানান, এবারে আমনের বাম্পার ফলনে তারা যতটা খুশি তারচেয়ে বেশি খুশি হবেন যদি সরকারিভাবে ধান ক্রয়ে দর বাড়ানো হয়।

মৌলভীবাজার: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্যমতে, এ বছর মৌলভীবাজার জেলায় ১ লাখ ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষাবাদে ধান উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৬৩ মেট্রিক টন।

দিনাজপুর : গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের ফলন হয়েছে অতিমাত্রায় ভালো, যা কি-না কৃষকের কল্পনাতেও ছিল না। এবার দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় প্রায় পৌনে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। বাজারে দামও ভালো। ১১০০ টাকার মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৩০০ টাকায়।

নেত্রকোণা :  নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫ শত ৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৫ হেক্টর জমি। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৬২ হাজার ৫ শত ৯৬ মেট্রিক টন। প্রতি মণ ধান ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হওয়ায়  খুশি কৃষকরা।

কুষ্টিয়া : এবার জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ হাজার ৮৯৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৮৮ হাজার ৯১৯ হেক্টর, যা সামান্য বেশি।

নাটোর :  এ জেলায় ৭২,৬৫৭ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, তবে ৭৩ হাজার ৪৩৩ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে।

নওগাঁ :  এ বছর জেলায় ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। নওগাঁর বাজারে ধান প্রতি মণ ১২০০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

জয়পুরহাট : জেলাটিতে চলতি ২০২১-২২  মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ৬৯ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমির বিপরীতে চাষ হয়েছে  ৬৯ হাজার ৫শ ৩৫ হেক্টর জমি । এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ ফলনশীল জাতের ৬৩ হাজার  ৬০০ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ৫ হাজার ২৩৫ হেক্টর ও স্থানীয়  জাতের রয়েছে এক হাজার ৭০০ হেক্টর। এতে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে  প্রায় ৩ লাখ  মেট্রিক টন চাল। গত বছর এতে চাল উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ৫ শ ৮২ মেট্রিক টন।

ময়মনসিংহ: এ জেলায় চলতি মৌসুমে আমন আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে। এতে  ৭০ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাগেরহাট : চলতি আমন মৌসুমে ২৬ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত আরো ১০ অর্থাৎ ৩৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে।

বিষয়ঃ খাদ্য

Share This Article


সবকিছু ছাপিয়ে রাজনীতিতে ভারত ইস্যু : দুকূল হারাতে পারে বিএনপি!

সরকার পতন আন্দোলন থেকে সরে কর্মসূচি নিয়ে দ্বিধায় বিএনপি

ভারতীয় পণ্য বর্জন যে কারণে স্থায়ী হবে না!

আগুনে ছুড়ে ফেলা রিজভীর শালটি ভারতের নয়, দেশীয় খাদি শাল

গণতন্ত্রের ডাক শুনেছেনা কেউ : ধীরে ধীরে একা হয়ে পড়ছেন কেন ইউনুস?

ড. ইউনূস ও তার স্ত্রীর নামে আলিশান বাড়িসহ দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের খোঁজ!

বিনা চিকিৎসায় মারা যান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রথম ঋণগ্রহীতা সুফিয়া খাতুন

নোবেল জিতে বাংলাদেশকে কি দিয়েছেন ইউনূস?

ড. ইউনূস নিজেই যখন লবিস্ট!

পর্যাপ্ত বিনিয়োগ সংগ্রহ করতে না পারায় প্রথম স্ত্রী রুশ তরুণী 'ফরোস্টেনকো’কে ডিভোর্স দেন ইউনূস!

অর্থনীতিবিদ হয়েও শান্তিতে কেন নোবেল পেলেন ড. ইউনুস?

ড. ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’