গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ শুরু জুনে

মাতারবাড়ী হবে আঞ্চলিক হাব

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:২৫, বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২ মাঘ ১৪২৯

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে এ বছরের জুন মাসে। এরই মধ্যে দরপত্র ডেকে ঠিকাদার মূল্যায়ন চলছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা কাটিয়ে উঠলে ২০২৬ সালের মধ্যেই সমুদ্রবন্দরের প্রথম ধাপের নির্মাণকাজ শেষ হবে। আর সেই বছরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জাহাজ বা মাদারভেসেল ভেড়াতে চায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

 

বন্দর কর্তৃপক্ষ মনে করে, ২০২৬ সালে সর্বোচ্চ ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো-নামানো হবে এই বন্দর দিয়ে। পার্শ্ববর্তী দেশ, বিশেষ করে ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও নেপালের জন্য এই বন্দর ‘আঞ্চলিক হাব’ হিসেবেই গড়ে তোলা হবে। আর ধাপে ধাপে পণ্য ওঠানো-নামানো বাড়বে এই বন্দরের। গত সোমবার মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের প্রকল্পের স্থান পরিদর্শনে বিশাল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের প্রমাণ মিলেছে। এরই মধ্যে মাতারবাড়ী ঘিরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই সেই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগর থেকে পূর্বদিকে মাতারবাড়ী উপকূল পর্যন্ত পাথরের বাঁধ দিয়ে একটি বেসিন তৈরি করা হয়েছে। বেসিন মানে সাগর থেকে এখানে মাটি ঢুকে যাতে চ্যানেল বা প্রবেশপথের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। ফলে সাগরে বড় ঢেউ থাকলেও এই চ্যানেলে তেমন কোনো ঢেউ থাকে না।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের পাশেই গড়ে উঠেছে দুটি জেটি। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জাপানি কর্তৃপক্ষ সেখানে একটি কয়লা নামানো এবং আরেকটি তেল নামানোর জন্য জেটি নির্মাণ করেছে। সেই দুটি জেটিতে এরই মধ্যে ১১২টি প্রকল্পের সামগ্রী নিয়ে জাহাজ ভিড়ছে। এই দুই জেটির দক্ষিণ পাশেই স্থলভাগ কেটে বানানো হবে একটি ইউ আকৃতির বেসিন। সেখানেই নির্মিত হবে ৭৬০ মিটার দীর্ঘ জেটি। এই জেটিতে একটি সাড়ে ৩০০ মিটার এবং একটি ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ একসঙ্গে ভিড়তে পারবে। আর সঙ্গে লাগানো স্থলভাগে তৈরি হবে মূল বন্দর, ইয়ার্ড ও টার্মিনাল। এজন্য প্রথম ধাপেই ১০৩১ একক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের পরিচালক মীর জাহিদ হাসান বলেন, ‘তিন প্যাকেজে আমরা এই দরপত্র ডেকেছি। এখন জমা পড়া দরপত্রের মূল্যায়ন চলছে। ঠিকাদার নিয়োগ করে আগামী জুনে নির্মাণকাজ শুরু করতে পারব বলে আশা করছি। এরই মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিও গত রবিবার পরিদর্শন শেষে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভুক্ত এই প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়েই শেষ হবে। সংসদীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বীর-উত্তম বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এখন পর্যন্ত যেভাবে বড় প্রকল্পগুলো এগোচ্ছে, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরও একই গতিতে আছে। আমরা আশা করছি, উন্নয়ন অংশীদার জাপান করোনা মহামারির মধ্যে যেভাবে এই প্রকল্প এগিয়ে নিয়েছে, তাতে আগামী দিনেও প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক সংকট হবে না।’

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান বলেন, ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে রিজিওনাল হাব হিসেবে ব্রান্ডিং করতে চট্টগ্রাম বন্দর ধাপে ধাপে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। বিদেশি শিপিং লাইনগুলোকে আমরা চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি জাহাজ চালুর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করছি। পার্শ্ববর্তী দেশের অনেক বন্দরের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অনেক চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। মূলত ২০২৬ সালকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই কাজ এগিয়ে রাখছি।’

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে জাইকা ঋণ দেবে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং বন্দর থেকে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকার দুই হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকার জোগান দেবে।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article