উৎপাদন বাড়ছে স্থানীয় গ্যাস কূপে, কমতে পারে ব্যয়বহুল এলএনজি নির্ভরতা

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:৩৪, রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০ পৌষ ১৪২৯

বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে গ্যাস উৎপাদিত হয় ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন কোম্পানিগুলো ও আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলো (ইন্টারন্যাশনাল অয়েল কোম্পানিজ: আইওসি) ২,২৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে। অবশিষ্ট ৪৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আসে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে।

বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে গ্যাস উৎপাদিত হয় ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন কোম্পানিগুলো ও আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলো (ইন্টারন্যাশনাল অয়েল কোম্পানিজ: আইওসি) ২,২৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে। অবশিষ্ট ৪৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আসে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে।

প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান, উন্নয়ন এবং ওয়ার্কওভার উদ্যোগের ফলে চলতি বছর স্থানীয় গ্যাস উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো দৈনিক ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছে। নতুন করে যোগ হওয়া এ সক্ষমতা দেশের স্পট মার্কেট এলএনজি'র নির্ভরতার অর্ধেকের সমান।

জ্বালানি সংকট নিরসনে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নতুন এ সক্ষমতার মধ্যে প্রায় দৈনিক ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজনীয় চাহিদার অপেক্ষায় রয়েছে।

দ্রুতগতিতে কমতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারের অস্থিরতার মুখে, এ বছরের জুলাইতে আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ক্রয় স্থগিত করতে বাধ্য হয় সরকার। শিল্প ও আবাসিক দুই খাতেই কয়েক মাস ধরে ঘাটতি থাকার পর এখন আশার আলো জাগাচ্ছে গ্যাস সরবরাহের এ অগ্রগতি।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, ২০২৩ সালে প্রতিদিন ১৫টি কূপ থেকে আরও ২১৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে।

তাছাড়া জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানা গেছে, তারা আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ অনুসন্ধান, উন্নয়ন এবং ওয়ার্কওভার উদ্যোগের মাধ্যমে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট অতিরিক্ত গ্যাস উৎপাদন করার পরিকল্পনা করেছে।

বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে গ্যাস উৎপাদিত হয় ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন কোম্পানিগুলো ও আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলো (ইন্টারন্যাশনাল অয়েল কোম্পানিজ: আইওসি) ২,২৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে। অবশিষ্ট ৪৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আসে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে কেনা গ্যাসের মাধ্যমে দৈনিক ১০০-১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা মেটানো হতো।

আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম ওঠানামা ও দেশে ডলার সংকট দেখা দেওয়ার পর, রিজার্ভ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে জুলাইতে সরকার স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি স্থগিত করে।

এর পরিবর্তে বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) মার্জিনাল কূপগুলোর ওয়ার্কওভারের কাজকে ত্বরান্বিত করে ও নতুন গ্যাসক্ষেত্রে অনুসন্ধানের মাধ্যমে স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জানান, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে প্রান্তিক গ্যাস কূপের ওয়ার্কওভার এবং অনুসন্ধানের কাজ।

তিনি বলেন, পেট্রোবাংলার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হলো সারাদেশে ৪৬টি কূপ অনুসন্ধান, উন্নয়ন এবং ওয়ার্কওভার করা; ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিদিন ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্রিডে গ্যাস যোগ করা।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "আমরা গ্যাসের সংকট কমানোর জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছি।"

মোট উৎপাদিত গ্যাসের বেশিরভাগই সিলেটের

এই বছরের মধ্যে ৬২ মিলিয়ন ঘনফুটের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ৬টি কূপ খননের কাজ করে স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানিগুলো। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, স্পট মার্কেট ক্রয় স্থগিতাদেশ এই পদক্ষেপকে ত্বরান্বিত করেছে।

এখন পর্যন্ত টবগী-১, সুন্দলপুর, সিলেট-৮, কৈলাশটিলা-৭, বিয়ানীবাজার-১- এই পাঁচটি কূপ খনন সম্পন্ন হয়েছে। কুমিল্লায় শ্রীকাইল-২ কূপ অনুসন্ধানের কাজ শিগগিরই শেষ হবে বলে নথিপত্রের মাধ্যমে জানা গেছে।
   
৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মধ্যে সিলেটে অবস্থিত কূপগুলোর অবদান সবচেয়ে বেশি। সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের (এসজিএফএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, তারা ২০২১ সালের তুলনায় এ বছর অতিরিক্ত ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করেছেন। এতে কোম্পানির চলতি বছরের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬ মিলিয়ন ঘনফুটে।

সিলেটের এই গ্যাস কোম্পানি আশা করছে আগামী বছর জাতীয় গ্রিডে আরও ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হবে।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ২০২৩ সালে কৈলাশটিলা-৮ থেকে ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট, রশিদপুর-৯ থেকে দৈনিক ১০ মিলিয়ন ঘনফুট, এবং দুটি ওয়ার্কওভার করা কূপ থেকে দৈনিক ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করার আশা করছে তারা।

স্পট এলএনজি আমদানির ধাক্কা এড়ানো যেত

কূপের ওয়ার্কওভার ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগের মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষমতাকে ত্বরান্বিত করা গেলে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা এড়ানো যেত বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

এলএনজি ক্রয় স্থগিত করার ফলে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশের শিল্প খাতে ঘন ঘন ব্ল্যাকআউট এবং তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দেয়।

ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম টিবিএসকে বলেন, "বড় বড় গ্যসক্ষেত্র ও মার্জিনাল ফিল্ডগুলো থেকে উৎপাদন বাড়িয়ে শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে থাবা বসানো এ গ্যাস সংকটকে হ্রাস করা যেত। তবে কর্তৃপক্ষ এদিকে মনোযোগ দিচ্ছেন না। বরং তার বদলে এলএনজি আমদানিতে তাদের আগ্রহ বেশি।"

"কিন্তু একটি তাৎক্ষণিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের বড় গ্যাসক্ষেত্র ও মার্জিনাল ফিল্ডগুলো থেকে একই পরিমাণ গ্যাস পাওয়া সম্ভব," বদরুল ইমাম যোগ করেন।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এলএনজি আমদানি করার পেছনে যে চেষ্টাচরিত্র করা হচ্ছে, তার দশভাগের এক ভাগ স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধানে দেওয়া হলে দেশে কোনো গ্যাস সংকট থাকবে না।"

"বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এখন কম গ্যাস ব্যবহার করছে। তবে শীত শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আগামী বছরের এপ্রিলে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে," যোগ করেন তিনি। গ্যাস খননকারীদের এর আগেই দ্রুত কাজ করা উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

চ্যালেঞ্জ থাকবেই

সারা দেশে ২২টি উৎপাদনশীল গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে সিলেটের কৈলাশটিলা সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র; ২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট রিজার্ভ রয়েছে সেখানে। কিন্তু এই গ্যাসক্ষেত্রের দৈনিক উৎপাদন মাত্র ৩২.৮ মিলিয়ন ঘনফুট; যেখানে মার্কিন কোম্পানি শেভরনের মালিকানাধীন বিবিয়ানা ক্ষেত্রটি প্রায় ১১৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করে। অথচ ওই গ্যাসক্ষেত্রের রিজার্ভ ৭৬৩ বিলিয়ন ঘনফুট।

তিতাস গ্যাসক্ষেত্র থেকে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের উৎপাদনও বেশ কম। তাদের দৈনিক উৎপাদন মাত্র ৩৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট, যেখানে মজুদ ১২৯৪ বিলিয়ন ঘনফুট।

১৭০০ বিলিয়ন ঘনফুট মজুত থাকা এসজিএফএল-এর আরেকটি বড় গ্যাসক্ষেত্র রশিদপুরের দৈনিক উৎপাদন কেবল ৪৩.৫ মিলিয়ন ঘনফুট।

দেশে গ্যাসের সংকট কমাতে উৎপাদন ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানাচ্ছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা; অন্যদিকে কূপ ব্যবস্থাপনার ইস্যুর দিকে নির্দেশ করছে কর্তৃপক্ষ।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, কূপগুলো অনেক পুরনো হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে উৎপাদন ত্বরান্বিত করা সম্ভব নয়।

বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ষাটের দশকে কৈলাশটিলা ও রশিদপুরের মতো ভালো মজুদের গ্যাসক্ষেত্রগুলো গড়ে ওঠে।

"আমরা যদি শেভরনের বিবিয়ানার মতো ক্ষেত্রগুলো থেকে দৈনিক উৎপাদন বাড়াতে চাই তাহলে আমাদের এ কূপগুলো পুনরায় খনন করতে হবে," যোগ করেন তিনি।

 

 

Share This Article


নুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ: বিস্ফোরক তথ্য দিলেন সাফাদি

যে কারণে বাংলাদেশের নির্বাচনে আমেরিকার নাক গলানো উচিত নয়: ইন্ডিয়া টুডে’র নিবন্ধ

নোবেল জয়ী ইউনূস : একজন সাদা মানুষের কালো অধ্যায়

গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাঝে অনাস্থা তৈরিতে দায়ী যে দুই সংবাদ মোড়ল

সাংবাদিকতার নামে শিশুকে এক্সপ্লয়েট করা জঘন্য অপরাধ: ড. সেলিম মাহমুদ

দুবাইয়ে আরাভের অঢেল সম্পদের নেপথ্যে কারা

ড. ইউনুসের অর্থপাচার এবং আর্থিক দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধের বিবরণ

খালেদার জায়গা নিতে চান ফখরুল

চমকে দেওয়া পর্যটন রেল

অতি বাম অতি ডানগুলো সব এক হয়েছে: হানিফ

বাংলাদেশ নিজের শক্তিতে দাঁড়িয়েছে

রেডিমেড প্রার্থী, শর্টকাটে এমপি