মেসি কত টাকা দান করেন?

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:৪৬, বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭ পৌষ ১৪২৯

লিওনেল মেসি। সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন। বলাবাহুল্য এই মুহূর্তে তার নামই সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তোলার পর দারুণ সময় পার করছেন এই সুপার স্টার।

 

খ্যাতি, সাফল্যে ক্রমে নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেও আর্জেন্টিনার রোজারিওতে বেড়ে ওঠা মেসি ঠিকই মনে রেখেছেন ছেলেবেলার কথা। ১১ বছর বয়সে হরমোন সমস্যা দেখা দেওয়ার পর কঠিন সময় পার করেছেন তিনি। অনেকে বলেন, সেই সময়ের অদম্য মনোবল মেসির পরবর্তী জীবনে পাথেয় হয়েছে।

মেসি শুধু একজন ভালো ফুটবলারই নন, মানবিক ও হৃদয়বান মানুষ। খেলার মাঠে মন পড়ে থাকলেও হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন দরিদ্র মানুষের কষ্ট। কষ্ট লাঘবে তাদের পাশে দাঁড়াতে কোনোকালেই কার্পণ্য করেননি তিনি। আর করবেনই-বা কেন? তিনি নিজে দেখেছেন দারিদ্র্যের ভয়াল রূপ। লড়াই তিনিও করেছেন দারিদ্র্যের সঙ্গে। আজ তিনি বিজয়ী। কিন্তু ভুলে যাননি অতীত। আর সে কারণেই যখন যতটা পেরেছেন করেছেন অন্যের দুঃখ দূর।

শুধু ফুটবল খেলার মাধ্যমেই নয়, ব্যবসা ও বিজ্ঞাপন থেকেও মেসি আয় করেন অঢেল অর্থ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, ২০২২ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত মেসির মোট সম্পত্তি বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬,২৭৫ কোটি টাকা। এ হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আয় করা অ্যাথলেট তিনি।

মেসি বর্তমানে খেলেন পিএসজির হয়ে। এই ক্লাব থেকেই প্রতি বছর তিনি আয় করেন সাড়ে ৩ কোটি ডলার। এ ছাড়াও অ্যাডিডাস, বাইজু, পেপসি, বিটগেট, লেইস, হার্ড রকসহ বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন থেকে আয় করেন অর্থ। গত জুনে তিনি হার্ড রক ইন্টারন্যাশনালের প্রথম শুভেচ্ছা দূত হন। এখান থেকেও তিনি মোটা অঙ্কের আয় করেছেন।

মেসি শুধু আয় করেন না, ব্যয়ও করেন দরিদ্রদের সেবায়। ২০০৭ সালে তিনি গড়ে তোলেন মেসি ফাউন্ডেশন। ইউনিসেফ-এর সঙ্গে মিলে কাজ করে এই ফাউন্ডেশন। তারা ঝুঁকির মুখে থাকা শিশুদের নিয়ে কাজ করে। এই সংস্থা আর্জেন্টিনার রোগাক্রান্ত শিশুদের স্পেনে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।

২০১০ সালের ১১ মার্চ  ইউনিসেফ-এর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিযুক্ত হন মেসি। মূলত শিশুদের অধিকার রক্ষাই ছিল তার অন্যতম কাজ। এ বিষয়ে মেসিকে সাহায্য করে বার্সেলোনা। মেসি তার সাবেক ক্লাব নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজের স্টেডিয়ামের ভেতরে ক্লাবের যুব প্রকল্পের জন্য একটি শয়নাগার এবং নতুন ব্যায়ামাগার তৈরি করে দেন।

২০১৩ সালে মেসি জন্মভূমি আর্জেন্টিনার রোজারিওতে একটি শিশু হাসপাতালে ৬ লাখ ইউরো অনুদান দেন। এই অর্থ ব্যয় হয় ভিক্টর জে ভিলেলার শিশু হাসপাতালের অনকোলজি ইউনিটের পুনঃসংস্কারের কাজে। সেইসঙ্গে ডাক্তারদের প্রশিক্ষণের জন্য এবং ভ্রমণের জন্যেও এই অর্থ ব্যয় করা হয়।

ইউনিসেফ জানায়, ২০১৭ সালে মেসির দেওয়া টাকায় সিরিয়া যুদ্ধে এতিম হওয়া ১৬০০ শিশুর জন্য গড়ে তোলা হয় স্কুল। ২০১৯ সালে কেনিয়ার নাগরিকদের জন্য খাদ্য ও পানি বাবদ মেসি ব্যয় করেন ২ লাখ ১৮ হাজার ডলার। তার গড়া মেসি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বুয়েনেস এইরেসের অনগ্রসর শিশুদের সুস্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করেন মেসি। এমনকি তার নিজের বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিদের উপহার আনতে নিষেধ করেছিলেন মেসি। তখন প্রয়োজনে তার ফাউন্ডেশনে দানের অনুরোধ জানিয়েছিলেন এই আর্জেন্টাইন তারকা।

ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে মেসির এক বিবৃতিতে বলা হয়, যখন আমি একটি শিশুর মুখে হাসি দেখতে পাই, যখন সে ভাবে আশা রয়েছে, যখন তারা খুশি হয়, এটা আমাকে প্রতিদিন রোমাঞ্চিত করে। এ কারণেই আমরা লিও মেসি ফাউন্ডেশন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে যে শক্তি ও উৎসর্গ থাকতে হয়, সেই একই শক্তি ও উৎসর্গ নিয়ে শিশুদেরও খুশি করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।

২০১৯ সালে লিউকেমিয়ার চিকিৎসায় উন্নতির জন্য সাহায্য করতে মেসি ফাউন্ডেশন জোসেপ ক্যারেরাস লিউকোমিয়া ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগ দেয়। সেখানেও নিয়মিত অর্থ দান করেন মেসি। পরের বছর  করোনাভাইরাস সংকটের সময়, মেসি কাতালুনিয়ার একটি হসপিটাল ক্লিনিক এবং আর্জেন্টিনার অন্য একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে ভাগ করে ১.১ মিলিয়ন অর্থ অনুদান দিয়েছিলেন। সহায়তা পেয়ে হসপিটাল ক্লিনিক তাদের টুইট বার্তায় লিখেছে: ‘লিও মেসি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ক্লিনিকে একটি অনুদান দিয়েছেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, লিও, আপনার প্রতিশ্রুতি এবং সমর্থনের জন্য।’


একই সময়ে, মেসি বার্সেলোনা ক্লাবের স্টাফদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে নিজ বেতনের ৭০ শতাংশ দান করেন যাতে স্টাফদের সম্পূর্ণ বেতন দেয়া যায়।

তথ্যসূত্র: গোল.কম, মেসি ফাউন্ডেশন, বার্সেলোনা ফাউন্ডেশন, ইউকিপিডিয়া, মেসি.কম

বিষয়ঃ ফিফা

Share This Article