'হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল বলেই ১০ ডিসেম্বর বিএনপির প্রিয়'
মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে ১০ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর আলবদর বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ শুরু করে জানিয়ে এই তারিখে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ডাকার সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই দিনে বুদ্ধিজীবী হত্যার মিশন শুরু হয়। এ কারণেই এই তারিখ বিএনপির এত প্রিয়।
আজ রোববার চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
ভাষণের শুরুতেই দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বসাধারণের উদ্দেশে স্থানীয় ভাষায় সম্ভাষণ করেন। বলেন, ‘ওনারা কেন আছোন, গম আছননি?’ এ সময় নেতাকর্মীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ বক্তব্যে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর নাকি তারা ঢাকা অচল করে দেবে। ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে এ দেশে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মিশন শুরু হয়েছিল। ১০ ডিসেম্বর সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকে পাকিস্তানিরা ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদের হত্যা করা হয়। অর্থাৎ এই দিনে বুদ্ধিজীবী হত্যার মিশন শুরু হয়। এ কারণেই এই তারিখ বিএনপির এত প্রিয়।’
বিএনপি-জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধীদের দল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগপ্রধান বলেন, ‘ওদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। ওরা যাতে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জামায়াত-বিএনপিকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আপনারা ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করবেন।’
শেখ হাসিনা কথা বলেন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির পঞ্চম সংসদ নির্বাচন নিয়ে, যেটি বর্জন করে আওয়ামী লীগসহ সে সময়ের বিরোধী দলগুলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু বাংলার জনগণ তা মেনে নেয়নি, তাকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছিল।’
‘ভোট চুরি করেছিলেন বলেই খালেদা জিয়া ও বিএনপি ভোটে আসতে ভয় পায়’ বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তারা আসলে গণতন্ত্রকে ভয় পায়, গণতান্ত্রিক ধারায় ক্ষমতায় যেতে চায় না। ভোটে জিতবে না বলেই তারা এমন কাউকে চায়, যারা নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে।’
বিএনপি আওয়ামী লীগের লাখো নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এদেশে জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করেছিলেন। তিনি বলেন, বিএনপির দুই গুণ, ভোট চুরি আর মানুষ খুন।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তার দল কল্যাণে কাজ করে, দেশের জন্য কাজ করে। কিন্তু বিএনপির কাজ হলো মানুষ খুন করা, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা, লুটপাট ও অর্থপাচার করা, মিথ্যা কথা বলে বিভ্রান্ত করা। তারা মানুষের শান্তি চায় না।
তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) মানুষের শান্তি চায় না। তারা ক্ষমতায় থেকে লুটপাট করেছে, জিয়াউর রহমান যখন মারা যান তখন ৪০ দিন পর্যন্ত শুনেছিলাম জিয়াউর রহমান নাকি কিছু দিয়ে যাননি ভাঙা একটা স্যুটকেস ছাড়া। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেই হাওয়া ভবনের নামে এত টাকা কই পেলেন? ভাঙা স্যুটকেসে কী জাদু ছিল?’
জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে টাকা এসেছে এতিমের জন্য। সেই টাকা এতিমের হাতে আর যায়নি। সব নিজেরা পকেটস্থ করেছে।
‘২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মামলা হয়েছে আর সেই মামলায় ১০ বছরের সাজা হয়েছে। টাকা চুরি করেছে বলেই সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তার (খালেদা জিয়া) ছেলে একটা তো মারা গেছে। যে অর্থ পাচার করেছিল, সিঙ্গাপুর থেকে কিছু অর্থ আমরা উদ্ধার করে আনতে পেরেছি। আরেকজন এখন লন্ডনে বসে আছে। ২০০৭ সালে কেয়ারটেকার সরকারের কাছে আর কোনো দিন রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়েছিল। এখন সেখানে রাজার হালে থাকে আর দেশের ভেতরে যত বোমাবাজি, খুন-খারাবি, নাশকতা পরিচালনা করে।’
বিএনপির অতীতের আন্দোলনে প্রাণহানির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ারা পারে মানুষ হত্যা করতে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা মানুষ হত্যা করেছিল, এজন্যই পাকিস্তানি দোসর বিএনপি-জামায়াত মিলে মানুষ হত্যা করেছে। বাসে আগুন, লঞ্চে আগুন দিয়ে তারা মানুষ হত্যা করেছে। চারদিকে অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছে তারা, তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, অনেকে আহত হয়েছেন।’
রিজার্ভের পতন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন ক্ষমতায় আসি তখন রিজার্ভ ছিল মাত্র পাঁচ বিলিয়ন ডলার। আমরা রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছিলাম। আমরা বাংলাদেশে বিনামূল্যে টিকা দিয়েছি। রিজার্ভের টাকা মানুষকে দিয়েছি, ওষুধ কিনেছি, ভ্যাকসিন কিনেছি। দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। করোনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করিয়েছি। জনগণের কথাই আমরা ভাবি, তাদের কল্যাণেই কাজ করি।’