দুই মেয়েকে হারিয়ে নিঃস্ব মা-বাবা

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:০৭, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৯

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর পাড় ঘেঁষে আবদুল করিমের দুচালা টিনের ঘর। ঘরের ছাউনি-বেড়া ছেদ করে সূর্যের আলো পড়ে ঘরের ভেতরে। দিনে এনে দিনে খাওয়া এই অসহায় পরিবারে মা-বাবার ছিলো দুই কন্যা সন্তান।

কিন্তু নদীর পানি দুই বোনকে টেনে নিয়ে গিয়ে মা-বাবাকে নিঃস্ব করেছে ৭ মাস আগে। এখনো মেয়েদের চেহারা স্বপ্নে উঁকি দেয়। ঘুমোতে দেয় না মা-বাবাকে। সন্তানদের হারিয়ে মা-বাবা পাগল প্রায়। তাদের কথা মনে পড়লেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মা সাবেকুন্নাহার। দুই মেয়ের ছবি বুকে জড়িয়ে বিলাপ করে কাঁদেন বাবা।


 

গত ২২ এপ্রিল সকাল ১০টায় বাঁকখালী নদীর পানিতে খেলতে নেমে আর উঠতে পারেনি দুই বোন (৮ বছর বয়সের তাসফিয়া নূর জোহরা ও ৬ বছর বয়সের জান্নাতুল মাওয়া মিষ্টি)। সোনালী শৈশব কাটিয়ে জ্বলে ওঠার আগেই নিভে গেলো দুই বোনের জীবন। এই ঘটনার পর তছনছ হয়ে গেছে তাদের পরিবার। এমনকি মা-বাবার কথা বলার শক্তিও হারিয়ে গেছে। এখনো মেয়েদের কথা বললেই নিজেদের সামলে রাখতে পারেন না তারা। মা-বাবাকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে তাদের শেষ সম্বল দুই মেয়ে না ফেরার দেশে চলে যাবে তা ভাবেননি কখনও। কান্না আর বুক ফাটা আর্তনাদ বন্ধ হচ্ছে না তাদের। বিদ্যালয়ের সহপাঠী, শিক্ষক, প্রতিবেশিরাও ভুলতে পারছেন না তাসফিয়া নূর জোহরা ও জান্নাতুল মাওয়া মিষ্টির কথা।

তাসফিয়া নূর জোহরা রামু কেন্দ্রীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী। জান্নাতুল মাওয়া মিষ্টি একই বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিকে পড়ালেখা করত। মা বাবার আশা ছিলো দুই মেয়ে লেখাপড়া করে অনেক বড় হবে। গড়বে নিজেদের সুন্দর জীবন। কিন্তু তাদের সব লালিত স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।

পরিবারের দেওয়া তথ্যমতে, ২২ এপ্রিল সকালে বাবা আব্দুল করিম দিনমজুরির কাজে ও মা সাবেকুন্নাহার বাড়ির পাশে কাপড় পরিস্কার করতে ব্যস্ত ছিলেন। তাদের দুই মেয়ে তাসফিয়া ও জান্নাতুল মাওয়া ৭ থেকে ৮ জন শিশুদের সাথে খেলতে গিয়ে বাড়ির পাশে বাঁকখালী নদীতে গোসল করতে যায়। নদী থেকে বালি উত্তোলনের কারণে বেশ কিছু গর্ত তৈরি হয়। পানিতে খেলার এক পর্যায়ে ছোট বোন জান্নাতুল মাওয়া মিষ্টি নদীর গর্তে গভীর পানিতে পড়ে যায়। ছোট বোনকে বাঁচাতে গিয়ে তাসফিয়াও গর্তে পড়ে। অন্য শিশুরা তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এ সময় তাদের চিৎকারে স্থানিয়রা উদ্ধার করে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বুধবার (৩০ নভেম্বর) সেই পরিবারের অবস্থা জানতে সরেজমিনে বাড়িতে গিয়ে কথা হয় আব্দুল করিম ও সাবেকুন্নাহারের সঙ্গে। মেয়েদের কথা জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা সাবেকুন্নাহার। দিনমজুর আব্দুল করিম কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার মেয়েরা লক্ষ্মী ছিলো। কোনোদিন বকা দিতাম না। অভাব অনটনের মাঝেও আমার মেয়েদের কখনো অভাব বুঝতে দিতাম না। সব সময় হাসিখুশিতে রাখতাম। কিন্তু নদীর পানি আমার বুক এভাবে খালি করে আমাকে নিঃস্ব করবে কখনো ভাবিনি। আমি বাড়িতে ছিলাম না। মেয়েরা পানিতে ডুবেছে বলে আমাকে খবর দিয়ে আনে প্রতিবেশীরা। পানি থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বলে আমার তাসফিয়া আর জান্নাতুল মাওয়া আর বেঁচে নেই।

তিনি বলেন, ‘পিতার কাধে সন্তানের লাশ কি যে কষ্টের সেটা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। নিজেদের অসচেতনতার কারণে আর যেন কোন মা-বাবার বুকের ধন অকালে হারিয়ে না যায়।’

রামু কেন্দ্রীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মেঘনা রানী শর্মা বলেন, ‘দুজনই এ স্কুলের শিক্ষার্থী। তাসফিয়া নূর জোহরা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। ৬২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তার রোল নং ছিল ১৭। মেধাবী ও শান্ত ছিল। জান্নাতুল মাওয়া মিষ্টি প্রাক প্রাথমিকে ভর্তি হয়েছিল। নামের সাথে সে ছিল খুবই মিষ্টি। কিন্তু নদীর পানিতে পড়ে এভাবে দুই বোনের অকাল মৃত্যু হবে ভাবইে কষ্ট হয়।’

গত ৫ বছরে তাদের মতো মোট ৬ জন শিশু নদীর পানিতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। পনিতে পড়ে শিশু মৃত্যুর বিষয়ে অসচেতনতাই কারণ হিসাবে মনে করে এ শিক্ষক বলেন, ‘সচেতনতার পাশাপাশি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ইতোমধ্যে প্রতি মাসে বিদ্যালয়ে মা সমাবেশ করে সচেতনার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।’

ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে তাসফিয়া নূর জোহরার সহপাঠি জহুরা ফাওজিয়া জামির সাথে কথা হয়। এ শিশু ভুলতে পারছে না তার সহপাঠির কথা। এক সাথে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া ও খেলা করার কথা বলতেই কান্নায় চোখ মুছে। সে বলে, ‘তাসফিয়া আমার খেলার সাথী ছিল এবং অনেক শান্ত ছিল। আমরা অনেক মজা করতাম। আমাদের বাড়ি নদীর পাড়ে হওয়ায় সে নিজেই আমাদের নিষেধ করতো একা একা নদীতে গিয়ে যেন গোসল না করি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, নদী-খাল কিংবা পুকুরে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ঘটনা লাঘবে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সে লক্ষ্যে আমরাও কাজ করে যাচ্ছি। তবে এসব ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে অভিভাবকদের সচেতনতার বিকল্প নেই। শিশু পানিতে যেন না যেতে পারে সেক্ষেত্রে মা-বাবা কিংবা বড় ভাই-বোনদের নজর রাখা জরুরি।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article


২৩ বছর পর জেল থেকে বেরিয়ে দেখেন পরিবারের কেউই বেঁচে নেই

ফরিদপুরে বাস-পিকআপের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১৪

সাভারে দোকানের এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ ৬

জমকালো আয়োজনে ভোলা থিয়েটায়ের বৈশাখী উৎসব অনুষ্ঠিত

সোনারগাঁয়ে চলছে ৩ দিনব্যাপী বউমেলা

৭ অঞ্চলে তাপমাত্রা ছাড়াল ৪০ ডিগ্রি

ফরিদপুরে বাস-পিকআপভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১১

ট্রান্সকমের বিরোধ: বিক্রি হচ্ছে প্রথম আলো?

অকালে মারা গেলেন ‘আদম’এর নির্মাতা হিরণ

শ্রীমঙ্গলে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পেল সাড়ে ৪ হাজার পরিবার

নিহত অটোরিকশা চালক সবুরের পরিবারকে সিএনজি দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বস্তির ঈদযাত্রা, যানজট নেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে