শীতকালে পা ব্যথা বাড়লে যা করবেন

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:৪৫, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৯

ডা. মো. সাইদুর রহমান

শীতকালে মানুষের বেড়ে যায় নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা। এর মধ্যে পা ব্যথা একটি। শীতের তীব্রতা যত বাড়ে, তত বাড়ে পা ব্যথা। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে পা, হাঁটু, গোড়ালির ব্যথা খুব সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অন্য সময় নার্ভের স্টিমুলেট বা উদ্দীপ্ত হতে যে পরিমাণ সেনসিটিভিটি বা সংবেদনশীলতার প্রয়োজন হয়, শীতে তার চেয়ে অনেক কম স্টিমুলেটে নার্ভগুলো হাইপারসেনসিটিভ বা অতিসংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এটাই শীতে ব্যথা বাড়ার অন্যতম কারণ।

 

যেসব কারণে এ ব্যথা : আর্থ্রাইটিস শীতকালে বাড়ে। বায়োমেট্রিক চাপ এই সময় কমে যাওয়ার কারণে তাপমাত্রায় পরিবর্তন হয়। ফলে ব্যথা বাড়ে। স্কিয়াটিকা শীতকালে শরীর ব্যথা হওয়ার অন্যতম কারণ। এ নার্ভটি শরীরের মধ্যে সবচেয়ে বড়। এতে চাপ বাড়লেই শরীরে অস্বস্তি হতে থাকে, ব্যথা হয়। শীতকালে এ সমস্যা আরও বেড়ে যায়। কারণ এ সময় শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। এ কারণে মাংসপেশিতে টান ধরে। কারণ পেশি ততটা নমনীয় থাকে না। এদিকে নানা কাজে পেশির ব্যবহার করতে গিয়ে পায়ের পেশিতে টান ধরে, ব্যথা হয়। ফাইব্রোমাইয়ালগিয়া অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না। ফলে বুঝতে পারি না সমস্যাটা কোথায়, কেন হচ্ছে। আর এটি অবহেলা করায় পা থেকে ব্যথা শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মাংসপেশি বা গাঁটে ব্যথা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

বেশি শারীরিক পরিশ্রম ও তাপমাত্রা মাইনাসে আছে- এমন এলাকায় থাকলে শারীরিক চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে আরও বেড়ে যায়। ফলে পায়ে, হাঁটুতে স্বাভাবিকভাবেই ব্যথা হয়। শীতকালে অনেকে পানি কম পান করি। শরীরের চাহিদার তুলনায় পানি কম পান করা মানে শরীরে ফ্লুইডের ঘাটতি। এ সময় মাংসপেশি এমনিতেই আড়ষ্ট থাকে। ফলে পানি কম পান করলে ব্যথা শুরু হয়। বিশেষ করে বয়স্কদের পায়ের ব্যথা বাড়ার কারণ হলো, শীতে হাঁটা-চলার বদলে লেপ-কম্বলের নিচে থাকতে তারা বেশি পছন্দ করেন। আর এ কারণে হাড়ের সংযোগস্থল আরও স্টিফ বা শক্ত হয়ে যাওয়ায় ব্যথার মাত্রাটা বেশি থাকে।

প্রতিকার : কোনো রকম শারীরিক পরিশ্রম না করে শীতে জবুথবু হয়ে বসে থাকা মোটেও ঠিক নয়। এতে জয়েন্ট বা সন্ধির প্রদাহ বাড়ে। ঠা-ায় বাইরে না বের হয়ে ঘরের মধ্যেই হাঁটা-চলা ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এতে সন্ধির স্টিফ বা শক্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। প্রতিদিন আড়াই লিটার থেকে তিন লিটার পানি পান করবেন। পানি কম পান করলে পানিশূন্যতা থেকে প্রদাহ ও ব্যথা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঠা-ায় শরীর অতিরিক্ত তাপ হারালে হাত-পায়ে রক্ত চলাচল কমে এতেও ব্যথা অনেকাংশে বাড়তে পারে। তাই শরীর যাতে অতিরিক্ত তাপ না হারায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গরম সেঁক দিলে ব্যথায় কিছুটা আরাম হয়। কারণ গরম কোনো কিছুর সংস্পর্শে এলে মাংসপেশি শিথিল ও রক্তনালি প্রসারিত হয়। 

ফলে ব্যথা থেকে অনেকটা আরাম পাওয়া যায়। যাদের নিয়মিত আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা ফিজিওওথেরাপি নিতে হয়, তাদের ব্যথা বাড়লে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা বা ব্যায়াম করতে হবে। শীতে ব্যথার ভয়ে কুঁকড়ে থাকলে ব্যথা কিন্তু আরও বেড়ে যাবে। ব্যথা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যথানাশক ওষুধ খেতে পারেন। তবে কোনো ব্যথার ওষুধই দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার বা সেবন করা যাবে না। বেশি ব্যথা এবং অনেকদিন ধরে হচ্ছে- এরকম হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বাইরে বেশি ঠা-া থাকলে ঘরের মধ্যেই অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। মনে রাখতে হবে, শরীর সুস্থ রাখতে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে নিয়মিত ব্যায়াম করুন, ব্যথামুক্ত জীবন গড়ে তুলুন।

লেখক : চিফ কনসালট্যান্ট ও চেয়ারম্যান 

রিএকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার

৪০৭ ফিনিক্স টাওয়ার (ষষ্ঠতলা)

সাতরাস্তা, তেজগাঁও, ঢাকা

০১৭১৬৪৫৩২০৫, ০১৯১৬৭৩৩৪৪৫

বিষয়ঃ গবেষণা

Share This Article