জাতীয় পার্টিতে নতুন মেরুকরণ

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৫৯, সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২২, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৯

লক্ষ্যে পৌঁছতে নির্ধারিত ছকেই হাঁটছেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধী দলের নেতা এরশাদপত্মী রওশন এরশাদ। সবশেষ বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরানোর চেষ্টা, রওশনপন্থীদের বহিষ্কার করাসহ দলে রওশন যে কোনঠাসা অবস্থায় ছিলেন সেখান থেকে অনেকটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে দলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ওপরও নজর তাদের। জিএম কাদেরের তরফ থেকে ‘নিষেধ’ সত্ত্বেও গতকাল রওশন এরশাদকে অভ্যর্থনা জানাতে জাতীয় পার্টির বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদের তিনজন কো-চেয়ারম্যান গিয়েছিলেন শাহজালাল বিমানবন্দরে। দলটির তিন-চারজন শীর্ষ নেতা ছাড়া বাকিরা বিভিন্ন মাধ্যমে রওশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি অবস্থায় দেশে ফিরেই ঐক্যের ডাক দিলেন রওশন এরশাদ। তার পাশে চেয়েছেন জাতীয় পার্টি থেকে সরে গিয়ে আলাদা দল গঠন করা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (জাতীয় পার্টি-জেপি), নাজিউর রহমান মঞ্জু (জাতীয় পার্টি মঞ্জু) ও কাজী জাফরের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদেরও। রওশন জানিয়েছেন, জিএম কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করে চলমান দ্বন্দ্বের সমাধান করতে চান। তবে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো জোট হবে না বলেও বক্তব্যে স্পষ্ট করেন রওশন।

জাতীয় পার্টির ত্রি-খণ্ডিত অংশকে একত্রিত করতে রওশন এরশাদ যে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, তা ইতিবাচক বলে মনে করছেন দলের অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি গতকাল রাতে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রওশন এরশাদ যদি চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরকে মান্য করেন, তাহলে অভিভাবক হিসেবে রওশন এরশাদও প্রাপ্য সম্মান-শ্রদ্ধাটুকু পাবেন।’ জাতীয় পার্টির এই নেতা আরও বলেন, ‘তিনি (রওশন) দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করার কথা বলেছেন। এটাও ইতিবাচক।’ জাতীয় পার্টিতে বিভক্তি নেই বলে দাবি এই নেতার।

এদিকে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ রবিবার রাতে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রওশন এরশাদের নেতৃত্বেই চলবে জাতীয় পার্টি।’

রওশনবিরোধী নেতাদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘কারও ভয়ের কিছু নেই। রওশন এরশাদ আমাদের মা। দলের নেতাকর্মীরা তার কাছে সন্তানের মতো। তিনি দল থেকে কাউকে বাদ দেবেন না। তিনি বিরোধিতাকারীদের ক্ষমা করে দেবেন। দলের কোনো ক্ষতি বা বিভক্তি তিনি কখনোই চান না।’

রওশনপন্থীদের অপর এক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, ‘জিএম কাদেরও রওশন এরশাদের কাছে ছেলের মতো। জিএম কাদের যাই বলে থাকুক, তিনি জিএম কাদেরকে দল থেকে বাদ দেবেন না।’

রওশন ঘনিষ্ঠ আরেক নেতা জানান, ‘যতদিন জিএম কাদেরের ওপর থেকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা না ওঠে, ততদিন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলের হাল ধরবেন রওশন এরশাদ। জিএম কাদেরের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে তিনিই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। এখন এই আলোচনাই চলছে। উভয়পক্ষ একমত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে।’

সূত্র জানায়, দলের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন শীর্ষ নেতার মধ্যস্থতায় কয়েকটি শর্তে জিএম কাদেরের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ার পর রওশন ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্ত নেন উল্লেখ করে রবিবার ঢাকা টাইমসে ‘কী চমক দেখাবেন রওশন, জিএম কাদেরপন্থীদের সঙ্গে সমঝোতার গুঞ্জন’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়। সূত্র বলছে, ওই অনানুষ্ঠানিক সমঝোতাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিতেই জিএম কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ধাকায় জিএম কাদের বৈঠকে যোগ দিতে না পারলেও অন্য শীর্ষ নেতারা অভ্যন্তরীণ ওই বৈঠকে অংশ নেবেন। জিএম কাদেরের মতামত নিয়েই চূড়ান্ত করা হবে সিদ্ধান্ত। ওই বৈঠকে রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হতে পারে। আর এর মধ্য দিয়েই পুনরায় দলের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার পথেই হাঁটছেন রওশনপন্থীরা।

থাইল্যান্ড থেকে রবিবার দুপুরে ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ, পুত্রবধূ মাহিমা সাদ ও মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় ফেরেন রওশন এরশাদ। শাহজালাল বিমানবন্দরে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তারা রওশনকে সংবর্ধনাও দেন। এ সময় বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, এসএমএম আলম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, নাসরিন জাহান রত্না, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা, সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মিলন, সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যার অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান টিটু, সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নূরু, মনোয়ারা তাহেরা মানু, আমেনা হাসানসহ রওশনপন্থী নেতাকর্মীরা।

এছাড়া রুস্তুম আলী ফরাজী বিমানবন্দরে রওনা দিলেও ‘অসুস্থতার কারণে’ জাহাঙ্গীর গেট থেকে ফিরে যান।

এরপর বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বক্তব্য দেন রওশন এরশাদ। পরে চলে যান হোটেল ওয়েস্টিনে। আপাতত সেখানেই থাকবেন তিনি।

রওশনঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, দলের যে তিনজন কো-চেয়ারম্যান বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন, তারা হোটেল ওয়েস্টিনে গিয়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। জিএম কাদেরপন্থী অনেক নেতাকর্মীও রওশনের সঙ্গে দেখা করতে ওয়েস্টিনে আসার কথা। এদের মধ্যে সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান, সালমা ইসলাম ও একেএম সেলিম ওসমান রয়েছেন বলে জানা গেছে। কয়েকজন সংসদ সদস্যও রয়েছেন।

সূত্র বলছে, রওশন যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, তাতে সাড়া দিয়ে জিএম কাদের রওশনের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ পথচলা শুরু না করলে ধীরে ধীরে একা হয়ে পড়তে পারেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত জিএম কাদেরের দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার ওপর আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকতে পারে বলেও দলের কোনো কোনো নেতা আশঙ্কা করছেন। যদিও রওশন এরশাদের সঙ্গে সমঝোতায় রাজি নন দলের শীর্ষ সারির নেতা ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি ইতোমধ্যেই চট্টগ্রামে চলে গেছেন।

সূত্রগুলো বলছে, রওশন এরশাদ ব্যাংককে বসে দল পরিচালনার জন্য যে ছায়া পরিষদ প্রস্তুত করেছেন, তা শেষ মুহূর্তে আবারও ঝালাই করে নেওয়া হচ্ছে। রবিবার রাতেও হোটেল ওয়েস্টিনে এ সংক্রান্ত একাধিক বৈঠক হয়েছে।

রবিবার রাতে জিএম কাদেরপন্থীরাও পৃথক বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে।

একাধিক সূত্র জানায়, রওশনপন্থীদের সব প্রস্তুতিই প্রায় সম্পন্ন। যে কোনো সময় রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হতে পারে। বড় দায়িত্ব পেতে পারেন সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। যিনি বর্তমানে জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান। তার স্ত্রী সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রত্নাও রয়েছেন এই সারিতে।

রওশনপন্থীদের দাবি, দলের মোট ২৬ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে জিএম কাদেরসহ চারজন এমপি ছাড়া আর কেউ তার (জিএম কাদের) সঙ্গে নেই। এ কারণে তিনি চাইলেও বিরোধী দলীয় নেতা, উপনেতা ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের পদে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন না।

তবে জিএম কাদেরপন্থীরা বলছেন, দল জিএম কাদেরের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। তার নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। দলে জিএম কাদেরের বিকল্প নেই।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ নভেম্বর চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে যান রওশন এরশাদ। চিকিৎসা নিয়ে গত ২৫ জুন দেশে ফিরে বাজেট অধিবেশনে যোগ দেন। এরপর আবার ৫ জুলাই ব্যাংককে যান তিনি। এরপর গতকাল দুপুরে দেশে ফেরেন তিনি।

Share This Article


কোনো মেজরের বাঁশির ফু-তে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি : প্রধানমন্ত্রী

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে জাহাজের মালিকপক্ষের নতুন ঘোষণা

মেট্রোরেল চলাচলের সময় এক ঘণ্টা বাড়ল

স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতিকে পুতিনের শুভেচ্ছা

সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ

স্বাধীনতা ঘোষণার পাঠক কখনও ঘোষক হতে পারে না: ওবায়দুল কাদের

স্বাধীনতা দিবসে যান চলাচলে ডিএমপির নির্দেশনা

বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ সমাবেশ ভুয়া, এরা পাকিস্তানের দালাল : কাদের

জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভুটানের সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সংসদীয় কূটনীতিকে কাজে লাগাতে হবে : স্পিকার

‘আমরা খাওয়া বাদ দিয়ে দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিয়েছি’

পশ্চিমাঞ্চলের ১৪ হাজার টিকিট বিক্রি শেষ ৩ ঘণ্টায়