ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গঠনে ইসলামের নির্দেশনা

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১১:২৭, শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২২, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৯

কুরআন, সুন্নাহ ও ইসলামি ফিকহের সুস্পষ্ট বিবরণ থেকে এ কথা প্রতিয়মান হয় যে, যদি কোনো মুসলমান অন্য কোনো মানুষকে এমন ক্ষুধায় কাতর অবস্থায় দেখতে পায় যে, তার কাছে ক্ষুধা নিবারণের কোনো ব্যবস্থা নেই, তাহলে তার ওপর অত্যাবশ্যকীয় হলো ওই ব্যক্তির ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থা করা।

 

এটা কোনো নিছক দয়া ও অনুগ্রহ নয়; বরং এটা তার ইমানি দায়িত্ব। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে ‘সে তো বন্ধুর গিরিপথে প্রবেশ করেনি। আপনি বন্ধুর গিরিপথ সম্পর্কে কী জানেন? তা হলো দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে আহার্যদান ইয়াতিম আত্মীয়কে অথবা দারিদ্র্য নিষ্পেষিত নিঃস্বকে’।

(সূরা-বালাদ, আয়াত-১১-১৬)। এভাবে কুরআন কারিম জাহান্নামিদের আত্মস্বীকৃত জবানবন্দিতে তাদের জাহান্নামে যাওয়ার কারণগুলো বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছে ‘তারা বলবে, আমরা মুসল্লিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না, আমরা অভাবগ্রস্তকে আহার্য দান করতাম না’ (সূরা-মুদ্দাছছির, আয়াত-৪৩-৪৪)।

মহানবি (সা.) ও বিভিন্ন হাদিসে এমন ক্ষুধার্ত ব্যক্তির কথা বলেছেন। হজরত আবু মূসা (রা.) বর্ণনা করেন মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যুদ্ধ বন্দিকে মুক্ত করো এবং ক্ষুধার্তকে আহার্য দান করো’ (সহিহ বুখারি, হাদিস-৩০৪৬)।

এমনিভাবে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) রেওয়ায়েত করেন, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যাদের গণ্ডি ও সীমানায় এভাবে লোকজন ঘুম থেকে ওঠে যে, তাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি জঠর জ্বালায় আক্রান্ত তাহলে আল্লাহতায়ালা তাদের থেকে দায়িত্ব মুক্ত’। (মুসনাদে আহমাদ-৪৮৮০)।

হজরত আব্বাস (রা.)-এর সূত্রে আরেক বর্ণনায় মহানবি (সা.) বলেন, ‘সে ব্যক্তি মুমিন নয় যে রাতে উদরপূর্তি করে ঘুমায় আর তার পাশের প্রতিবেশী অনাহারে কাতর’। (বাইহাকি, হাদিস-২০১৬০)।

কুরআন-সুন্নাহর এসব নির্দেশনাবলির ভিত্তিতে উম্মতে মুহাম্মাদির প্রায় সব ফোকাহা কেরাম একমত যে, ক্ষুধিত ব্যক্তিকে আহার্য দান করা যে কোনো ব্যক্তির জন্যই অপরিহার্য। দুর্ভিক্ষ ও আকালের সময় যখন অনেক লোক জঠর জ্বালায় আক্রান্ত হয়ে থাকে, তখন ক্ষুধার্ত লোকদের ক্ষুধা নিবারণে এগিয়ে আসা সচ্ছল লোকদের জন্য ফরজে কেফায়া।

এ সংক্রান্ত ফোকাহা কেরামের কয়েকটি সুস্পষ্ট বিবৃতি উল্লেখ করছি-ইমাম আবু বকর জাসসাস (রহ.) বলেন ‘সম্পদের যে অংশ আদায় করা মালিকের দায়িত্বে অপরিহার্য তা হলো জাকাত। তবে সহমর্মিতা ও দান করার উদ্ভূত পরিস্থিতি দেখা দিলে সেটা ভিন্ন কথা (তখন জাকাতের মতো সাধারণ দান করাও জরুরি)। যেমন নিরুপায়, ক্ষুধিত ও বস্ত্রহীন কিংবা এমন মৃত ব্যক্তি যাকে দাফন দেওয়ার মতো কেউ নেই (আহকামুল কুরআন, খণ্ড-৩ পৃষ্ঠা-১০৬)।

ফিকহে হানাফির বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আলইখতিয়ার’-এ আল্লামা মুসিলী (রহ.) বলেন-যে ব্যক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর, তার জীবন বাঁচানোর মতো আহারের ব্যবস্থা না হলে এমন ব্যক্তির এমন পরিস্থিতি জানে যে কোনো ব্যক্তির জন্য ফরজ, তাকে খাওয়ানো বা আহার্য দিতে পারে এমন লোকের সন্ধান দেওয়া (আলইখতিয়ার লিতা’লিল মুখতার, খণ্ড-৪ পৃষ্ঠা-১৭৫)।

ইমাম গাজালী (রহ.) বলেছেন, মুসলমান যখন দুর্ভিক্ষ বা খরাকবলিত হয়ে পড়ে এবং এভাবে বহু লোক মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে যায় তখন তাদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কর্তব্য। এটা ফরজে কেফায়া। (শিফাউল আলীল, পৃষ্ঠা-২৪২)।

মোটকথা ক্ষুধিত ও বস্ত্রহীন লোককে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা, দুর্ভিক্ষের সময় বিপদাপন্ন ব্যক্তিদের সাহায্য করা প্রত্যেক মুসলমানের শরয়ী ফরজ দায়িত্ব। কেউ যদি তাতে অবহেলা করে অথবা অন্যজনকে এ কাজ করতে দেখে নিজে না করার জন্য পরিতাপ করে না বরং বিদ্বেষ পোষণ করে সে গুনাহগার হবে। এমনকি এ পরিস্থিতিতে মুসলিম সরকার তাকে ফরজ দায়িত্ব আদায়ে বাধ্যও করতে পারে।

Share This Article