জিলহজের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:৪৭, শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০২২, ১৭ আষাঢ় ১৪২৯

উম্মাতে মুহাম্মদির হায়াতকাল খুবই সীমিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘আমার উম্মতের (গড়) আয়ু ষাট থেকে সত্তর বছর, তাদের মধ্যে খুব সংখ্যকই এ বয়সসীমা অতিক্রম করে।’ (তিরমিযি হা/২৩৩১; ইবনে মাজাহ হা/৪২৩৬)।

উম্মতে মুহাম্মাদির প্রতি আল্লাহ তা'আলার অপার অনুগ্রহ যে, স্বল্প সময় ও পরিশ্রমে অধিক সাওয়াব লাভের সুযোগ হিসেবে ইবাদত বন্দেগির বিভিন্ন মৌসুম দান করেছেন। তন্মধ্যে মাহে রমযানের শেষ দশক ছাড়াও আমলে সালেহের মৌসুম হিসেবে জিলহজ মাসের প্রথম দশক সর্বোত্তম। কিন্তু এর গুরুত্ব নিয়ে অনেকেরই তেমন ধারণা নেই। এতে আমরা অনেকেই বঞ্চিত হই বিশাল সাওয়াব থেকে।

জিলহজ মাসের প্রথম দশকের ফজিলত

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজ মাসের প্রথম দশকের ন্যায় উত্তম ও মহান দিন নেই। (সহিহ ইবনে হিব্বান হা/৩৮৫৩; আহমাদ হা/৬১৫৪)।

এছাড়া,

ক. জিলহজ মাস সম্মানিত চারটি মাসের মধ্যে অন্যতম।

খ. এ মাসের প্রথম ১০ দিন মর্যাদাপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ।

গ. ইসলামের ভিত্তি হজ এ ১০ দিনেই সম্পাদিত হয়।

ঘ. এই ১০ দিনে রয়েছে- ফজিলতপূর্ণ আরাফার দিন। যে দিন অসংখ্য জাহান্নামিকে মু্ক্তি দেওয়া হয়।

ঙ. আরাফার দিনের একটি সিয়াম পূর্বাপর দুই বছরের পাপের কাফফারা হয়ে যায়।

চ. আরাফার দিনের দোয়া শ্রেষ্ঠ দোয়া।

ছ. এই দশকের শেষ দিন অর্থাৎ জিলহজের ১০ তারিখে (ঈদের সালাতের পর) মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর নৈকট্য লাভে পশু কোরবানি করে থাকে।

জ. এই দিন মুসলিম উম্মাহর সার্বজনীন আনন্দের দ্বিতীয় দিন।

এ ১০ দিনের বিশেষ আমল

১. সামর্থ্যবানদের হজ পালন (সুরা আল-ইমরান ৯৭; বাকারা ১৯৭; সহিহ ইবনে খুযাইমাহ হা/২৫৯৬)।

২. জিলহজের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে বেশি বেশি তাকবির পাঠ করা (মুসনাদে আহমাদ হা/৬১৫৬)।

৩. জিলহাজের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে কোরবানির আগ পর্যন্ত কোরবানির নিয়তকারী ব্যক্তি চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা (মুসলিম হা/১৯৭৭; আবু দাউদ হা/২৭৯১; তিরমিযি হা/১৫২৩)।

৪. প্রথম ৯ দিন সিয়াম পালন করা (নাসাই হা/২৪১৭)।

৫. আরাফার দিবসে সিয়াম পালন করা (এই সিয়াম পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী মোট দুই বছরের গুনাহের কাফফারা স্বরূপ) (মুসলিম হা/২৮০৩; তাবারানি হা/৫৭৯; সহিহুত তারগিব হা/১০১২)।

৬. ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩-যিলহজ আছর পর্যন্ত (মোট ২৩ ওয়াক্ত) ফরয সালাতের পর একবার তাকবির পাঠ করা। (ইবনে তাইমিয়া, মাজমূঊল ফাতাওয়া ২৪/২২০)

৭. আরাফার দিন বেশি বেশি দোয়া করা। বিশেষত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারি-কা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাঈইন ক্বাদির বেশি বেশি পাঠ করা (তিরমিযি হা/৩৫৮৫; মিশকাত হা/২৫৯৮; সহিহাহ হা/১৫০৩)।

৮. বেশি বেশি জিকির আজকার করা। (সূরা হজ ২৮; বাকারা ১৯৮; আহমাদ হা/৫৪৪৬)

৯. ঈদুল আজহার সালাত আদায় করা। (বুখারি হা/৯৫৬)

১০. ঈদের সালাত আদায়ের পর অহেতুক বিলম্ব না করে কোরবানি করা। (সুরা কাউসার ২; ইবনু মাজাহ ৩১২৩; সহিহুল জামে ৬৪৯০)

১১. পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময়। সাহাবিরা ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ (আল্লাহ তা'আলা আমাদের ও আপনাদের নেক আমলসমূহ কবুল করুন) বলে শুভেচ্ছা জানাতেন। (ফাতহুল বারি ২/৪৪৬)

১২. অন্যান্য দিনের মতো ফরজ নামাজ আদায়ের পাশাপাশি নফল, দান-সাদাকা, তাওবা- ইস্তেগফার, মাসনুন জিকির-আজকার, দোয়া, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরু পাঠ ইত্যাদি নেক আমল অব্যাহত রাখা। আকিদা-বিশ্বাসকে শিরক মুক্ত রাখা এবং ইবাদাত আমলকে বিদআত মুক্ত রাখাও অপরিহার্য।

মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে জিলহজের প্রথম দশকের গুরুত্ব ও ফজিলত অনুধাবন এবং বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দিন। 

Share This Article