আইএমএফ ঋণের ইতিবাচক দিক ও রিজার্ভের সুষ্ঠু ব্যবহার
বিশ্বের সবচেয়ে সহজ ও স্বস্তিদায়ক ঋণ হলো বিশ্ব ব্যাংক এবং আইএমএফ এর ঋণ। সম্প্রতি আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। এই ঋণের মূল উদ্দেশ্য হবে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সুরক্ষা, প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, আমদানি ব্যয় মিটানো ইত্যিাদি।
জানা যায়, আইএমএফের দীর্ঘমেয়াদি এই ঋণের জন্য বাংলাদেশকে সুদ দিতে হবে মাত্র ২.২ শতাংশ। এসবের জন্য রাজস্ব বাড়ানো, রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি পরিবর্তন, ভর্তুকি কমানোসহ বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।
স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, আইএমএফ প্রস্তাবিত সংস্কারসমূহের অনেকগুলো প্রস্তাব আগে থেকেই বাস্তবায়ন করে আসছে সরকার। এ অর্থে অনেকটাই ইতিবাচক আইএমএফের ঋণ।
এছাড়া সার্ভিকভাবে এই ঋণ আমদানি ব্যয় মেটানো, বাজেট সহায়তা, জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা, কৃষিখাতে সহায়তা, সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যবহার করলে অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে। ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। অন্যান্য অর্থায়নের বাধাও দূর হবে। পাশাপাশি তুলনামূলক কম সুদে আইএমএফের ঋণ পাওয়ায় ঝুঁকি সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি হবে। বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হবে।
এছাড়াও আইএমএফের ঋণ প্রদানে সম্মতি এক ধরনের বার্তা বহন করে। এটি বহুপক্ষীয় অন্য সংস্থাগুলোকে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা সর্ম্পকে আশ্বস্ত করে।ফলে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো প্রতিষ্ঠানও আমাদের বাজেট সহায়তা দিতে উৎসাহিত হবে। ইতোমধ্যে বিশ^ব্যাংক বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে।
রিজার্ভের সুষ্ঠু ব্যবহার :
এক বছর আগে দেশে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বেশি। গত ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমান কমে দাড়ায় ৩৪.২৬ বিলিয়ন ডলার।
জানা যায়, করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকটে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও চরম মূল্য দিতে হয়েছে। দ্বিগুনেরও বেশি বেড়েছে আমদানি পণের ব্যয়। তীব্র মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি করোনায় স্থবির হয়ে পড়েছিলো বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য। তাই বাধ্য হয়ে রিজার্ভ থেকে ব্যয় মেটাতে হয়েছিলো সরকারকে।
যদিও রিজার্ভ যেটুকু খরচ হয়েছে সেটা জনগণের স্বার্থে এবং কল্যাণেই খরচ হয়েছে। যেমন জরুরি প্রয়োজনে খাদ্য কেনা, সার, করোনার টিকা, জ্বালানি তেল কেনা প্রভৃতির জন্য ব্যয় করা হয়েছে।
এছাড়া ডলার নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠন করা হয়েছিল। বাস্তবে রপ্তানিকারকরা স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে রপ্তানিমুখী শিল্প টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল। দিন শেষে এই অর্থ আবার রিজার্ভেই জমা হচ্ছিল।
রিজার্ভ থেকে কিছু অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। কারণ অন্য দেশ থেকে লোন নিলে সুদসহ সেই ডলার পরিশোধ করতে হত। কিন্তু রিজার্ভের ডলার খরচ করায় দেশের টাকা দেশেই রয়ে গেছে।
পায়রা বন্দরে রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতেও রিজার্ভ ব্যয় হয়েছিলো। সেখানে স্থাপিত কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ভাবে কয়লা সরবরাহ করার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে সিমেন্ট, ক্লিংকার, খাদ্যশস্য, ফ্লাইঅ্যাশ, সার, নির্মাণসামগ্রী ইত্যাদি মালামাল পরিবহনে রাবনাবাদ চ্যানেল অনবদ্য ভূমিকা রাখবে। ফলে এ অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর এভাবেই রিজার্ভের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে।