আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:১২, শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০২২, ১৭ আষাঢ় ১৪২৯
ফাইল ফটো
ফাইল ফটো

‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯২১ সালের এই দিনে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ঘটে প্রতিষ্ঠানটির। তৎকালীন ব্রিটিশশাসিত বাংলায় এটিই ছিল একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

পরাধীন দেশের পশ্চাৎপদ এ অঞ্চলের মানুষকে শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ গবেষণা মেলা, আলোচনাসভাসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটশ ভারতের ভাইস রয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। এরপর পূর্ব ভাইস রয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানান ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ বাংলার অন্য নেতারা।

২৭ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ব্যারিস্টার আর নাথানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট।

ওই বছরই ডিসেম্বরে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইনসভা পাশ করে ‘দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০’।

আর ছাত্রছাত্রীদর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। সে সময়কার ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ সরকারের পরিত্যক্ত ভবনগুলো এবং ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনগুলোর সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশ গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠাকালে ৩টি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে এর যাত্রা শুরু হয়। প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন। শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূর্ববাংলার মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর পাশাপাশি শতবর্ষী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পাড়ি দিতে হয়েছে নানা চড়াই-উতরাই। এর মধ্যে প্রশংসার পাশাপাশি তীব্র সমালোচনা, কটাক্ষ সইতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট, শিক্ষকদের মানসম্পন্ন গবেষণার স্বল্পতা। তবে এসব সমস্যা সমাধানে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শতবর্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রথমবারের মতো হয়েছে মাস্টার প্ল্যান; যার মাধ্যমে দূর হবে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগবে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো খাতে। শিক্ষকদের গবেষণার মান বৃদ্ধি ও দক্ষ করে তোলার জন্যও নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ওভারসিস স্কলারশিপ বৃত্তি, ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর সংবলিত আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশের জন্য শিক্ষক অনুদান এবং গবেষণা প্রকাশ কার্যক্রম চলমান রাখা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক চর্চা ও বিকাশ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ‘শতবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার গুণগত মানের পরিবর্তন হচ্ছে না। তাই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব কার্যক্রম গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়। আর এর পেছনে কাজ করে সিনেট, সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিলসহ নানা বডি।

আর এই প্রতিটি কাঠামোর স্বাধীনভাবে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা বাড়াতে হবে। এছাড়াও এই কাঠামোগুলোয় দায়িত্বশীল এবং গঠনমূলক চিন্তার প্রকাশ থাকতে হবে।’

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন : ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা’। এ উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সকাল ১০টায় শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। কর্মসূচি অনুযায়ী (আজ) সকাল ১০টার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল ও হোস্টেল থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শোভাযাত্রা সহকারে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে সমবেত হবেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোর পতাকা উত্তোলন, পায়রা ওড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে থিম সং পরিবেশিত হবে। এরপর বেলা ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘গবেষণা ও উদ্ভাবন : ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা’ শীর্ষক আলোচনাসভা হবে।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলাভবন ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জ্ঞান ও বিজ্ঞানের নিবিড় চর্চা এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠানটির অনবদ্য অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বায়ন ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সর্বাত্মক সহযোগিতাই আমাদের কাম্য।’

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

Share This Article


কেউ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি: প্রধানমন্ত্রী

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

৯৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ: আবেদন যেভাবে

গরম নিয়ে যে দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অফিস

‘৮ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল’

গরমে গতি কমিয়ে ট্রেন চালানোর নির্দেশ

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ভোট ২৯ মে

২১ নাবিক জাহাজে, ২ জন দেশে আসবেন বিমানে

বাজেটে থোক বরাদ্দের প্রস্তাব না করতে নির্দেশনা

প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব ও গাম্বিয়া সফর বাতিল