ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে: আইনমন্ত্রী

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ রাত ০৮:০২, শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২২, ২০ কার্তিক ১৪২৯

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের রিভিউ পিটিশন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। যতক্ষণ পর্যন্ত ওই রিভিউ পিটিশনের শুনানি শেষ ও নিষ্পত্তি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সংবিধানের ৯৬(২) অনুচ্ছেদের ওই স্থানে কিছুই করব না। আমরা আশা করব রিভিউ পিটিশন কিছু দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। সর্বোচ্চ আদালত রিভিউ পিটিশনের রায়ে যেভাবে বলে দেবেন, সেভাবেই ৯৬(২) অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করা হবে।’

 

সংবিধান দিবস উদযাপন উপলক্ষে ‘রিভিজিটিং দ্য হিস্টোরিক্যাল জার্নি অব দ্যা কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী এই কথা বলেন।

শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) ঢাকায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিলিয়া চেয়ারম্যান ও খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।

সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করছি। কোন বুলি আওড়াচ্ছি না। এটা যদি মানুষ বুঝতে পারে তাহলে আমাদের ওপর আস্থা রাখবে। এই আস্থা রাখার পরই আমাদের বাকি কাজটুকু সম্পন্ন করতে পারব। এ কারণে আমাদের এটার (ধর্মনিরপেক্ষতা) জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতির পিতা। তিনি যেটা তখন করতে পারতেন কিন্তু তাকে হত্যা করার পর সেই অবস্থা বাংলাদেশের মানুষের সামনে ছিল না। তাদেরকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে এমন একটা অবস্থার মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো যে সেখানে তারা তাদের মনের কথা বলতে পারত না। এখন এই ভয় ও জড়তা কাটিয়ে তাদেরকে জাগ্রত করতে হবে। এটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে বঙ্গবন্ধুর ৭২’র সংবিধানে ফেরার বিষয়টা আমরা বাস্তবে রূপ দিতে পারব।’


তিনি বলেন, ‘জনগণের ইচ্ছা ও রাষ্ট্রের বাস্তব পরিস্থিতির ওপর সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। আজকে আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটা মেনিফেস্টো ছিল। এই মেনিফেস্টো যাতে কায়েম করা যায় সেজন্যই সরকার গঠন করে এবং তা পরিচালনা করে। যখন সংসদ সদস্য হয়ে কেউ দলের বিরুদ্ধে ভোট দেয় তখন ওই মেনিফেস্টোর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া হল। কিন্তু জনগণ তো সেই ম্যান্ডেট দিয়ে আমাকে সংসদে পাঠায়নি। এ কারণে আমি দলের বিরুদ্ধে যেতে পারি না। যদি দলে বিরুদ্ধে ভোট দেই তাহলে যে ম্যান্ডেট নিয়ে পাস করেছি তার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া হলো। সেই ক্ষমতা কিন্তু জনগণ সংসদ সদস্য হিসাবে আমাকে দেয়নি। সেজন্যই বলছি কারো না কারো কাছে আমাদের জবাবদিহি থাকতে হবে।’

পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে বিচারিক আদালত। এই সাজা বাড়বে কিনা তা হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তির পর জানা যাবে।’

ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম বলেন, ‘সংবিধান প্রণয়নে বঙ্গবন্ধুর ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। কীভাবে দ্রুত দেশকে একটি সংবিধান উপহার দেওয়া যায় সেই বিষয়ে তিনি তড়িৎ পদক্ষেপ নেন। গঠন করে দেন ৩৪ সদস্যের খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি। কারণ ২৪ বছর পাকিস্তানে কোন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়নি। এ কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি দ্রুত সংবিধান প্রণয়নের কাজে হাত দেন। যার ফলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অল্প সময়ে জাতিকে সংবিধান উপহার দেওয়া সম্ভব হয়।’

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামিসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনি জিয়া সবকিছু তছনছ করে দেন। ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র উলটপালট করে দিয়ে ধর্মের নামে রাজনীতিকে উৎসাহিত করেন। শ্রেষ্ঠ রাজাকার গোলাম আজমকে পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে যেন নাগরিকত্ব পায় সেই সুযোগও করে দিয়েছিলেন জিয়া।’

তিনি বলেন, ‘যিনি নাগরিকত্ব চান তাকে সেই দেশের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করতে হয়। সুপ্রিম কোর্ট থেকে যেদিন ওই নাগরিকত্বের রায় দেওয়া হয় সেদিনও গোলাম আজমের আনুগত্য পাকিস্তানের প্রতি ছিল। কোন অবস্থাতেই সে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের দাবিদার হতে পারে না।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘অনেক রাজনৈতিক দল ও কিছু কিছু বুদ্ধিজীবীর পক্ষ থেকে দাবি উঠে যে দাবিগুলোকে কখনোই সংবিধানের নিরিখে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করার কোন কারণ নেই। আমরা প্রায়শ শুনি নির্বাচন হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। যদিও সর্বোচ্চ আদালত থেকে এই সরকার ব্যবস্থাকে সংবিধান পরিপন্থী বলে বাতিল করে দিয়েছে। আমরা মনে করি জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর আস্থা না রেখে কতিপয় অনির্বাচিত ও মনোনীত ব্যক্তিদের উপর আস্থা রাখি তাহলে গণতন্ত্রের মূল যে প্রাণ সেটা হরণ করে দেওয়া হয়।’

অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম জমীর, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর, কমোডর (অব.) ইশফাক এলাহী চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। 

Share This Article