যার নামে কক্সবাজার, সেই ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স যে বাড়িতে বিশ্রাম নিতেন

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৪৮, শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২, ১৩ কার্তিক ১৪২৯

১৭৮৪ সালের আগে ভারতবর্ষ ও মিয়ানমারের মাঝখানে ছোট একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল, যার নাম আরাকান। এ সময় বর্মি রাজা বোধপায়া আরাকান দখলের জন্য অভিযানের দায়িত্ব দেন তার ছেলে যুবরাজ থাডো মিনসোকে। বর্মি যুবরাজ থাডো মিনসো সহজেই পরাজিত করেন আরাকান অধিপতিকে। আরাকান দখল করার পর বর্মিরা রাখাইনদের অত্যাচার করতে লাগল। তখন হাজার হাজার রাখাইন নাফ নদী পার হয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন বর্তমানের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, কক্সবাজার, হারবাং এলাকায় উদ্বাস্তু হিসেবে এল। এই রাখাইন উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্যই ব্রিটিশ কূটনীতিক হিরাম কক্সকে পাঠানো হয়েছিল পালংকীতে।

 

তাকে পালংকীর মহাপরিচালক নিযুক্ত করা হয়। ক্যাপ্টেন কক্স এখানকার নানা সমস্যা সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান, শরণার্থীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করেন। তিনি পালাংক্রির দুর্গম জঙ্গলি এলাকায় রোহিঙ্গাদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে এলাকাটি আবাদ হয়। বর্তমান কক্সবাজারের রামুতে নিজের বাসস্থান ও অফিস নির্মাণ করেন তিনি। এলকার প্রয়োজনে সার্বিক দিক বিবেচনা করে কক্স সাহেব একটি বাজারও স্থাপন করেন তখন।

জানা গেছে, বিশ্বসেরা পর্যটন স্পট আজকের কক্সবাজার নামটি ব্রিটিশ আমলের সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নাম থেকে এসেছে। বার্মা রাজা বোধাপায়া ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন আরাকান রাজ্য দখল করেন। বোধাপায়ার সেনাবাহিনীর ভয়াবহ অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে তৎকালীন বৃটিশ শাসিত পালাংক্রি এলাকায় দলে দলে পালিয়ে আসে আরাকানের স্থায়ী বাসিন্দা রোহিঙ্গারা। প্রথম দিকে এ বাজারের নাম হয় কক্স সাহেবের বাজার। পরে সংক্ষিপ্ত রূপ নিয়ে তা কক্সেস বাজার বা কক্স’স (মানে কক্স-এর বাজার) হয়ে শেষতক এখন কক্সবাজার-এ রূপ নিয়ে। রোহিঙ্গাদের পূনর্বাসনের সময় ১৭৯৯ সালে কক্স মহাশয় ম্যলেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

তার স্ত্রী ম্যাডাম কক্স পিয়ার স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে যাবার জন্য বর্তমান ডুলাহাজারা ও খুটাখালীর মধ্যবর্তী এলাকার বড় খালে জাহাজ নিয়ে আসেন। ওই জাহাজে করে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের মৃতদেহ নিয়ে যান। সেই থেকে ওই এলাকার নাম ম্যাডাম কক্স পিয়ার তথা স্থানীয় লোকমুখে মেদাকচ্ছপিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

বর্তমানে ভবনটি কক্সবাজার জেলা পরিষদের ডাকবাংলো হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বদরুদ্দীন নামের এক বৃদ্ধ সেখানে কেয়ারটেকার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এতবড় একটি ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানে গত ২৫ বছর ধরে কাজ করলেও তিনি তা জানতেন না। এখন জেনে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করছেন।

রামুর চৌমুহনী স্টেশনে নেমে রামু অফিসের চর ডাকবাংলোর নাম বললেই যে কেউ রাস্তা দেখিয়ে দেবে। দুই কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে রাস্তার ডান পাশে যে নীরব-নিস্তব্ধ ব্রিটিশ নকশার বাড়ি দেখা যাবে, সেটিই হিরাম কক্সের বাংলো। বাংলোর চারপাশে শত শত মেহগনি আর কাঁঠালগাছ। বাংলোর ভেতরে বিশাল এক বারান্দা। হিরাম কক্স এখানে বসে অবসর সময় কাটাতেন। বারান্দার ডান পাশের ঘরে দুটি কাঠের খানদানি খাট। একটি সংযুক্ত টয়লেট। বারান্দার বাঁ পাশের ঘরটি বড়। এই ঘরে আছে একটি খাট আর সোফা।

স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি জেলা পরিষদ থেকে এসব আসবাব দেওয়া হয়েছে। হিরাম কক্সের সময়ের ভবনটি ছিল পুরো কাঠের তৈরি। জেলা পরিষদের মাধ্যমে নিয়মিত এই ভবনটি শক্তপোক্ত করা হচ্ছে। ডাকবাংলোর আসল কাঠের ভবনটি বর্তমান ভবনের মতোই দেখতে ছিল। দুঃখ একটাই। ঐতিহাসিক বাড়িটি এখনো পর্যটক টানতে পারছে না।

পারবে কী করে, এলাকার কোথাও কোনো পরিচিতি-সাইনবোর্ড নেই, কে জানবে এটা হচ্ছে সেই বাংলো, যে বাংলোয় থাকতেন হিরাম কক্স, যার নামে কক্সবাজারের নামকরণ হয়েছে? বাংলোর ছাউনি পরিবর্তন ছাড়া এ পর্যন্ত ঘরের সংস্কার হয়নি। টাঙানো নেই হিরাম কক্সকে নিয়ে কোনো সাইনবোর্ড কিংবা স্মৃতিফলক। বাংলোটি ‘হিরাম কক্স এর বাংলোবাড়ি’ হিসেবে খ্যাত হলে রামুর পর্যটনে যোগ হবে নতুন মাত্রা।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article