কালাজ্বরের মহামারিকে পুঁজি করে কোটি টাকা লোপাট করে পিনাকি
২০০৭-২০০৮ সালের কথা। ওই সময় সারাদেশে প্রায় ৫ হাজার মানুষ কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়, যার অর্ধেকই ময়মনসিংহে। মহামারি রূপে দেশজুড়ে ছড়াতে থাকে কালাজ্বর। ফলে এপ্রিলে কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় সরকার ওষুধ কেনার পরিকল্পনা করে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সাড়ে ৪ কোটি টাকায় সেই কাজ পায় পিনাকি ভট্টাচার্যের পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস। এরপর মে মাসেই তড়িঘড়ি করে ওষুধ বাজারে ছাড়ে তারা। পরবর্তীতে সেসব ওষুধকে মানহীন বলে ঘোষণা করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু ততদিনে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে যায় পিনাকি চক্র।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রাণরক্ষাকারী এসব ঔষধ প্রয়োগের আগে পরীক্ষামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়। কিন্তু তা না করেই সব প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি এই ওষুধ মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছিল। এটি আইনের লঙ্ঘন।
মহাখালী ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির একজন কর্মকর্তা জানান, কালাজ্বরের ওষুধটি যে ভালো সেই সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য অর্ধকোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। ওষুধ প্রশাসন পরিদফতর এবং ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির লোকজনও এর সাথে জড়িত। প্রথমের নমুনায় ঠিকই ছিল। কিন্তু অভিযোগ ওঠার পর আবারো নমুনা পরীক্ষা করতে চাইলে কোম্পানির পক্ষ থেকে রাজি হয়নি।
মূলত, কালাজ্বর নির্মূলে মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট 'মিলটেফোসিন' এর মান নিয়ে প্রশ্ন তোলে ঢাকার বিশ্বব্যাংকের দফতর। এরপর তারা স্বাস্থ্য অধিদফতরে সেই অভিযোগ জানায়। অধিদফতরের পক্ষ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত পরীক্ষাগারে সেই ওষুধের নমুনা পাঠানো হয়। পরীক্ষাগারের প্রতিবেদনে ওষুধগুলোর মান জিরো বা নিম্নমানের বলে প্রতীয়মান হয়। এরপর মাঠপর্যায় থেকে সেই ওষুধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
১৮ অক্টোবর ২০০৮ সালের দৈনিক সমকাল পত্রিকায় এই সংবাদ প্রকাশ হয়। জানা যায়, দেশীয় ওষুধ প্রস্তুকারক সংস্থা পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস প্রথমে ৩৮ লাখ টাকার ওষুধ সরবরাহ করে ময়মনসিংহ অঞ্চলে। কিন্তু জার্মানির একটি কোম্পানি সেই ওষুধ কানাডার ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর জানায় যে, এই ওষুধে কোনো রোগপ্রতিরোধক উপাদান নেই। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংক এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও ওষুধের গুণাগুণ পরীক্ষার আহ্বান জানায়। এরপর অধিদফতরের পক্ষ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত পরীক্ষাগারে সেই ওষুধের নমুনা পাঠানো হয়। পরীক্ষাগারের প্রতিবেদনে ওষুধগুলোর মান জিরো বা নিম্নমানের বলে প্রতীয়মান হয়। এই ওষুধের নমুনা পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের কর্মকর্তাদের সামনেই সংগৃহীত হয়েছিল।
পরবর্তীতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা শওকত আলী এসব অনিময়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্তে উঠে আসে পিনাকি গংদের সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির তথ্য। মহামারির মধ্যে সাধারণ মানুষকে গুণগতমানহীন ওষুধ সরবরাহ করে কয়েক কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে গেছে এই পিনাকি চক্র। এই ঘটনা কালাজ্বরের ওষুধ কেলেংকারী বলে পরিচিত লাভ করে দেশজুড়ে।