২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে আমড়ার বাজার!

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৪৪, শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০২২, ৫ কার্তিক ১৪২৯

দেশে ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ জনপ্রিয় ফল আমড়ার বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৬৮ হাজার টন। বাজার ছাড়িয়েছে ২০০ কোটি টাকা। তবে তিন অর্থবছর ধরে উৎপাদন টানা কমছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা।

মহামারি করোনার বিরূপ প্রভাব ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের অভাবে এ পরিস্থিতি বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।

 

সুস্বাদু মিষ্টি আমড়া হিসেবে বরিশালের আমড়াই সবার কাছে বেশি পরিচিত। বেশির ভাগ ফলন হয় বিভাগটির পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলায়। পেয়ারার মতো এই এলাকার আমড়ার সুখ্যাতি দেশব্যাপী। এ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে আমড়ার আবাদ চলছে শত বছর ধরে।

দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় আমড়ার বাজার ঝালকাঠির সদর উপজেলার ভিমরুলি হাট। মৌসুম শুরু হওয়ায় প্রতিদিন পাইকাররা আমড়া কিনে নৌ ও সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সরবরাহ করছেন। জমজমাট এ হাটে প্রতি মণ আমড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে আমড়া যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

ভিমরুলি গ্রামের আমড়া চাষি ভবেন্দ্রনাথ হালদার বলেন, ‘আমার দুই একর জমিতে আমড়ার বাগান রয়েছে। ফলনও ভালো। স্থানীয় বাজারে আমড়া কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমড়া মহাজনদের কাছে বিক্রি করি। মহাজনরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেন। ’

ভিমরুলি গ্রামের আমড়ার আড়তদার (মহাজন) কালু হালদার বলেন, ‘ঝালকাঠির আমড়া সুস্বাদু ও গুণগত মান ভালো। সারা দেশে এখানকার আমড়ার চাহিদা রয়েছে। পাইকাররা এসে আমড়া কিনে নিচ্ছেন। ঝালকাঠিতে এক কুড়ি (২০ পিস) আমড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ঢাকায় এই আমড়াই বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়। ’

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. ফজলুল হক বলেন, ‘ঝালকাঠিতে যে পরিমাণে আমড়ার চাষ হয়, তা বিক্রি করে বছরে প্রায় ২৫ কোটি টাকা আয় হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা পেয়ারার পাশাপাশি আমড়া চাষে সফলতা পেয়েছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। ’

কৃষি বিভাগ জানায়, বাগান করার তিন বছরের মধ্যে আমড়ার ফলন পাওয়া যায়। একনাগাড়ে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত উৎপাদন হয়। বাগান পরিচর্যার সামান্য কিছু খরচ ছাড়া বাড়তি কোনো ব্যয় নেই। পুষ্টিগুণে তিনটি আপেলের চেয়ে বেশি মানসম্পন্ন একটি আমড়া। ভিটামিন বি ও সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, পেকটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ ফলটির বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৬৮ হাজার টন, যার বাজার প্রায় ২০০ কোটি টাকা। সারা দেশেই কমবেশি হলেও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতেই বেশি উৎপাদন হচ্ছে। তবে তিন অর্থবছর ধরেই ফলটির উৎপাদন কমতির দিকে রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে আমড়ার উৎপাদন ছিল ৪৮ হাজার ৮৭৪ টন। পরবর্তী সময়ে আমড়ার উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত বাড়ে। এই অর্থবছরে ছয় হাজার ২৭৮ হেক্টর জমিতে সর্বোচ্চ ৯৭ হাজার ৪৮১ টনে উন্নীত হয়। পরের চার অর্থবছরে আমড়ার উৎপাদন কমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছয় হাজার তিন হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ৮২ হাজার ৫৫৬ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ৬৭ হাজার ৭৯৮ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে আমড়ার উৎপাদন ছিল ৬৭ হাজার ৭৯৮ টন। এই অর্থবছরে উৎপাদন কমার গতি কিছুটা কমে এসেছে। প্রতি কেজি আমড়ার পাইকারি দাম ৩০ টাকা হিসেবে নিলে ফলটির বাজার ছাড়িয়েছে ২০০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম  বলেন, ফলটির বিপণন জটিলতার কারণে উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়টি গতি পাচ্ছে না। এ ছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীদের  দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এ প্রবণতা বেড়ে যায়। এতে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। ভোক্তাদেরও অনেক বেশি দাম দিতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তি বিপণন খাতের পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বিশেষ করে, গুরুত্ব্বপূর্ণ উৎপাদন এলাকার খামার থেকে ফল কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে বাজারজাতকরণে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। এটি কাঁচা খাওয়ার পাশাপাশি প্রক্রিয়াকরণ বিশেষ করে সুস্বাদু আচার, চাটনি ও জেলি  তৈরিতে উদ্যোগ নিতে হবে।

পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আকারে ছোট হলেও নানা ধরনের পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ফল আমড়া। আপেলের চেয়ে আমড়ায় প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রনের পরিমাণ বেশি। আমড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রক্তস্বল্পতা দূর করে, বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। আমড়ায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বক, চুল ও নখের সৌন্দর্য বাড়ায়। ১০০ গ্রাম আমড়ায় ভিটামিন সি পাওয়া যায় ২০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৭০ মাইক্রোগ্রাম, সামান্য ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম ৩৬ মিলিগ্রাম ও আয়রন চার মিলিগ্রাম। আমড়ায় যথেষ্ট পরিমাণ পেকটিন জাতীয় ফাইবার থাকে।

এ বছর করোনার সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসায় এবং পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বরিশাল বিভাগের আমড়া চাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। বিগত বছরগুলোর লোকসানের ক্ষতি পুষিয়ে এ বছর লাভবান হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী এ অঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সমন্বিত উদ্যোগ প্রত্যাশা করছেন চাষিরা।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article


রঙিন ফুলকপিতে সয়লাব কুমিল্লার ১৭ উপজেলা

গোপালগঞ্জে ৫ লাখ ২০ হাজার টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সেচ কার্যক্রম রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত চালানোর অনুরোধ

নাজিরপুরে জমে উঠেছে ভাসমান সবজির বাজার

৮৫ কোটি টাকার শিম রপ্তানি

কৃষিপণ্যের মধ্যস্বত্বভোগীদের ধ্বংস করা হবে : কৃষিমন্ত্রী

মেহেরপুরে রবিশস্য চাষে নতুনমাত্রা যোগ করেছে সূর্যমুখী

পিঁয়াজ রোপণে ব্যস্ত কৃষক

১৭৯ হেক্টর অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ বেড়েছে

‘কৃষি সেচে জ্বালানি তেল নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে’

গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজ চাষে লাভবান কৃষক

বৈচিত্র্যময় সবুজ ফসলের সমারোহ টাঙ্গাইলের যমুনার চরে