খাদ্য সংকট : বৈশ্বিক উদ্বেগ বাড়লেও ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ !
বিশ্বে খাদ্য সংকট নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। মহামারি করোনা অভিঘাতের পর চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি এখন সবার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।বাংলাদেশও এর বাইরে নয়,তবে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ।
সম্প্রতি বৈশ্বিক বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে বলেছে—বিশ্বের প্রায় সব দেশেই খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকির মাত্রা ভয়ানকভাবে বেড়েছে। কয়েকটি দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে খাদ্য দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে।
এর মধ্যে ৮৮ শতাংশ স্বল্প আয়ের দেশে, ৯১ শতাংশ মধ্য আয়ের দেশে ও ৯৩ শতাংশ উচ্চ আয়ের দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার এখন ৫ শতাংশর ওপরে রয়েছে। এসব দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। ইতোমধ্যে অনেক দেশে এ হার ডাবল ডিজিট অতিক্রম করেছে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা খাদ্য নিরাপত্তার বড় ঝুঁকিতে পড়েছে। তাদের ৭০ শতাংশ মানুষই তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলেও জানায় বিশ্ব ব্যাংক।
ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ :
বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে জানায়, সারা বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা থাকলেও এই মুহূর্তে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ধরনের ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ। এমনকি যেকোনো ধরনের খাদ্য সংকট এড়াতেও বাংলাদেশ অনেকটাই প্রস্তুত।
প্রথমত, বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে বিশ্বের তৃতীয় দেশ হলেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ থেকে চাল রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিপরীতে বাড়ানো হচ্ছে উৎপাদন। সেই সাথে ঝুঁকির আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংকটকালে এই চাল অনেকটাই সহায়ক হবে।
সর্বশেষ ২০২১-২২ বোরো মৌসুমে প্রথমবারের মতো চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দুই কোটি টনের বেশি নির্ধারণ করেছিল কৃষি মন্ত্রণালয়, যা ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে ১৬ লাখ টনের বেশি খাদ্যদ্রব্য মজুদ আছে। তাই এ মুহূর্তে দুর্ভিক্ষ হওয়ার হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই ।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশকে খাদ্য ঝুঁকিমুক্ত রাখতে ও উৎপাদন বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বীজ, সার থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। একই সাথে উৎপাদিত শস্যের সুষ্ঠু সরবরাহ এবং বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে কাজ করছে কৃষি অধিদপ্তর।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে সবজি, মাছ ও ধান উৎপাদন যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, তা ধরে রাখতে সঠিক সংরক্ষণ ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৯৬টি খাদ্য গুদাম প্রস্তুত করছে খাদ্য অধিদপ্তর। এর ফলে খাদ্য সংকট নয়, উল্টো নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে খাদ্য রফতানিকারক দেশ হতে পারে বাংলাদেশ।