বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন পিটিআই, পাকিস্তানের স্বৈরতন্ত্র কবুল!

প্রতিবেদন ছাপতেই সরব হয়ে উঠেছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। ভারতের সরকারের ইন্ধনেই এ ধরনের খবর ছাপানো হয়েছে বলে গুজব ছড়াচ্ছেন তারা। তবে পিটিআই বা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ায়’ বাংলাদেশকে নিয়ে মনগড়া প্রতিবেদনটি ছাপানোর ঘণ্টা কয়েক পরই নজরে আসে ভারতীয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সংবিধান মেনেই দ্বাদশ নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত শাসকদল। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া ভোটে অনীহা বিরোধী মহলের। এ নিয়ে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। এছাড়া নির্বাচন, গণতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা-সমালোচনায় যখন সরব রাজনৈতিক অঙ্গন, এর মধ্যেই ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র’ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রতিবেদন ছেপেছে ‘প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া’ বা পিটিআই। এরপরই ভারতের সরকারি এই সংবাদ সংস্থার বরাতে খবর ছাপে দেশি-বিদেশি কিছু গণমাধ্যম। এ নিয়ে গুজবও ছড়াচ্ছেন সরকারবিরোধী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। তবে বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও গণতান্ত্র ইস্যুতে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান'র বিষয়ে নীরব সংবাদ সংস্থাটি। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে পিটিআই কি পাকিস্তানের স্বৈরতন্ত্র কবুল করেছে?
পিটিআই’র ওই খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করছে একটি গোষ্ঠী, যদিও এ বিষয়ে কোনো ক্লু বা তথ্য দিতে পারেনি। একটি গোষ্ঠী সরকারের কাছ থেকে সুবিধা ভোগ করছে এমন গড়পড়তা মন্তব্যপূর্ণ রিপোর্ট করে সংস্থাটি; যা মোটেই কোয়ালিটি রিপোর্ট নয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি পত্রিকাগুলো বিভিন্ন সময় অনেক সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারলেও পিটিআই কেন দিতে পারেনি সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
সংস্থাটি বাংলাদেশের বিচারিক আদালত নিয়ে ড. ইউনূসের পক্ষে বিবৃতির সুরে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে ড. ইউনূস হয়রানি হচ্ছেন বলে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনের এই অংশটি ড. ইউনুসের পক্ষে বিশ্ব নেতাদের চিঠির 'কপি পেস্ট' বলে মনে হতে পারে যে কারো কাছেই। তবে প্রশ্ন জেগেছে পিটিআই ভারতীয় সরকারি সংবাদ সংস্থা হয়েও কেন এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করলো; যা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।
সূত্রমতে, পিটিআই সরকারি সংবাদ সংস্থা হলেও স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায় তারা অনেক সময় 'পেইড নিউজ' প্রকাশ করে। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর মতো সেটির পাশে কোনো নোট দেয় না। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক বিজয় যোশি হলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত একজন ভারতীয়। তিনি নিজে ইন্টারভিউ নেয়ার সুবাদে তার সঙ্গে ড. ইউনূসসহ বেশ কয়েকজন নোবেলজয়ীর সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।
অন্যদিকে কিছুদিন আগে তার সঙ্গে কথিত মোসাদ এজেন্ট ও ইসরায়েলি ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির প্রভাবশালী নেতা মেন্দি এন সাফাদি দুই ঘণ্টা গোপন বৈঠক করেছিলেন বলে জানা যায়। এই মেন্দির সঙ্গে বিএনপি নেতা তারেক ও নুরুল হক নুরেরও নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। অথচ এই প্রতিবেদন ছাপতেই সরব হয়ে উঠেছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। ভারতের সরকারের ইন্ধনেই এ ধরনের খবর ছাপানো হয়েছে বলে গুজব ছড়াচ্ছেন তারা। ‘জি-২০’ সম্মেলনে শেখ হাসিনার পাশে মোদিকে দেখা গেলেও তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে নেই; এমন গুজবও ছড়াচ্ছেন কেউ কেউ।
উল্লেখ্য, পিটিআই বা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ায়’ বাংলাদেশকে নিয়ে মনগড়া প্রতিবেদনটি ছাপানোর ঘণ্টা কয়েক পরই নজরে আসে ভারতীয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের। এরই মধ্যে এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় নজর পড়ার সঙ্গে সঙ্গে খবরটি মুছে ফেলে পিটিআই। আর এ থেকেই বোঝা যায় অর্থ বিনিময় বা প্রভাবিত হয়ে এমন সংবাদ ছেপেছে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে প্রমাণিত হয় এর সঙ্গে সরকারের কোনো হাত নেই। এছাড়া শুধুমাত্র ‘পেইড নিউজই’ যেকোনো অনলাইন গণমাধ্যম থেকে সরানো হয় নির্দিষ্ট সময়ের পর।
বাংলাদেশি সংবাদ বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে এখনো গণতন্ত্র চর্চা চলছে। নিজেদের অধিকার আদায়ে মিছিল-সমাবেশ করতে পারেন যেকোনো নাগরিক। এমনকি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজপথে আন্দোলন করছে সরকারবিরোধী মহল। এরপরও বাংলাদেশের সরকারকে নিয়ে ডাহা মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ ছেপেছে পিটিআই। কিন্তু প্রতিবেশী পাকিস্তানে গণতন্ত্রের নামে সামরিক শাসন চললেও মাথাব্যথা নেই প্রতিষ্ঠানটির। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদনও চোখে পড়েনি।কাজেই কোনো প্রভাবশালী মহলের প্রভাব বা ফুটনোট অথবা পেইড নিউজ হিসেবেই যে পিটিআই এ নিউজটি চেপেছে তা সহজেই অনুমেয়।