আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচারিক আদালতকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টা বিপদজনক লক্ষণ!

একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে সংবিধান এবং আইন দ্বারা গঠিত বাংলাদেশসহ প্রত্যেকটি দেশের আদালত। প্রচলিত আইন অনুযায়ী দেশের যে কোনো নাগরিক আইন লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে সাজা প্রদান করে আদালত। এমতবস্থায় দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সংবিধান, আইন, বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কেউ বক্তব্য কিংবা বিবৃতি প্রদান করলে তা হয়ে ওঠে দেশটির জন্য চরম অবমাননাকর, পাশাপাশি বিচারিক আদালতকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টাও ‘বিপদজনক লক্ষণ’ যা সাম্প্ৰতিক সময়ে প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশের আদালতে আলোচিত ও সমালোচিত ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন, অর্থ আত্মসাত, কর ফাকিসহ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন। এরপরই দেশের আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং বিশ্বনেতাদের দিয়ে বিবৃতি খেলায় মেতেছেন ইউনূস। যার প্রেক্ষিতে গত ২৭ আগষ্ট ড. ইউনূসের বিচার স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ১৬০ বিশ্বনেতা খোলাচিঠি দিয়েছেন এবং বিচার স্থগিতের আহবান জানানো হয়েছে।
অপরদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও উভয়কে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত। এর আগে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে ২০১৩ সালে আদিলুর এবং নাসির উদ্দিনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। তারা দুই জনই জামিনে ছিলেন। কিন্তু গত ১৪ সেপ্টেম্বর আদালতে তাদের রায় হওয়ার পরেই সরব হয়ে ওঠে বৈশ্বিক চিহ্নিত কিছু সংস্থা।
এরই ধারাবাহিকতায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায়ের নিন্দা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওয়েবসাইট এবং ঢাকা ও ব্রাসেলসের কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে এ ধরনের পদক্ষেপ একটি স্বাধীন দেশের বিচারিক আদালতের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের শামিল বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, অধিকার, আদিলুর, এলান বা ড. ইউনুস সংক্রান্ত যা হয়েছে সবই উম্মুক্ত আদালতে দীর্ঘদিন যাবৎ নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংগঠিত হয়েছে এবং চলমান আছে। তারা সকল প্রকার আইনি সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে আদালতে লড়েছেন। যখন বিচার কাজ শুরু হয়েছিল দীর্ঘসময় যাবৎ কেউ কোনো কথা বলেনি, বিচার পর্যবেক্ষণে আসার সুযোগ থাকলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তা করেনি। কিন্তু রায়ে দোষী সাব্যস্ত হবার পর বিচার কার্যের কোনো ত্রুটি বা অনিয়ম প্রদর্শন না করেই, একটি দেশের 'আদালতের রায় মানিনা' বলার এখতিয়ার কি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আছে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, আদিলুর, এলান বা ড. ইউনুস কেউই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয় বা রাজনৈতিক মামলায়ও অভিযুক্ত নন। এটির সাথে সরকারের সম্পর্ক বা রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত নয়। কাজেই দেশের বিচারিক আদালতের রায়ে তারা দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি বা এখতিয়ার বহির্ভুত প্রস্তাব উত্থাপন করা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং আদলত অবমাননা বা বিচারিক আদালতকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো একটি দেশের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
কেননা কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলেই তার পক্ষে কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি, রাষ্ট্র বা সংস্থা বিবৃতি দেয়ার চর্চা অব্যাহত থাকলে দেশের আদালত দুর্বল হয়ে পড়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গাটি নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়া আদালতের ভাবমূর্তি সংঘাতিকভাবে বিনষ্ট হতে পারে এবং সর্বোপরি বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। কাজেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ড. ইউনুস ও আদিলুরের পক্ষে নেমে দেশের বিচার ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টির অপকৌশল গ্রহণ করেছে কিনা বা তাদের উদেশ্য কি তা এখনই খতিয়ে দেখার উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিচার কার্য বা নথিপত্র পর্যবেক্ষন করতে পারে বলেও মনে করেন তারা।