বাংলাদেশের প্রতি 'জি-২০' ভুক্ত দেশগুলোর আগ্রহ, ইতিবাচক প্রাপ্তির খতিয়ান

দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর্জেন্টিনাসহ বেশ কিছু দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাইড লাইনবৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবাই বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়শী প্রশংসা করে আগামীর বাংলাদেশের পাশে থাকারও অঙ্গীকার করেন।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধিজনিত কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গন ও পরাশক্তি দেশগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে ভারতের আমন্ত্রণে 'জি-২০' সম্মেলনে যোগ দিতে সম্প্রতি নয়াদিল্লি যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে তিনি কৌশলী কূটনীতির সফল প্রয়োগ ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে পেয়ে 'জি-২০' ভুক্ত দেশগুলোর আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
দিল্লিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে বিশ্বের সংহতি শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা। দিয়েছিলেন বেশ কিছু প্রস্তাবও। আর এতেই সবার মন জয় করে নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
সম্মেলনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সেলফি তুলেছেন পরাক্রমশালী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই সেলফি ঢাকা-ওয়াশিংটনের চলমান রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে ঝালিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এছাড়া শেখ হাসিনার পাশে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক'র হাঁটু গেড়ে বসে কথা বলার বিষয়টিও বিশ্বব্যাপী তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার মর্যাদা অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সুযোগটির যথাযথ ব্যবহার করেছেন। সাইডলাইনে তিনি বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানদের সাথে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির পথকে আরও সুগম করার কৌশলী আলাপ চারিতা চালিয়ে যান, যাকে ‘গ্রেট ডিপ্লোমেসি' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর্জেন্টিনা ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বেশ কিছু উন্নত দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাইডলাইন বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে সৌদি যুবরাজ বাংলাদেশে বিভিন্ন সৌদি বিনিয়োগের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি সৌদিতে কর্মরত ২৮ লাখ বাংলাদেশির অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়া আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ নাহিয়ানও সাইডলাইন বৈঠকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করার নিশ্চয়তা দেন শেখ হাসিনাকে।
তাছাড়া আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ জানান, আর্জেন্টিনার ফুটবলকে সমর্থন জানানোর কারণে তার দেশের লোকের মন জয় করেছে বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য বাড়ানোর কথাও জানান তিনি।
পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়ুল ঢাকা-সিউলের মধ্যে সংস্কৃতি, ব্যবসা ও বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে সাইড লাইন বৈঠকে শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেন। এর বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পশ্চিমা অনেক দেশের প্রতিনিধিও বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে আগামীর বাংলাদেশের পাশে থাকারও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সম্মেলনে অংশ গ্রহণের অর্জন বস্তুগত নয়, পুরোটিই কৌশলগত। এই অর্জন ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে অনেক সুবিধা প্ৰদান করবে বলে মনে করেন তারা।