সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প, সংখ্যা বৃদ্ধির আশা

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৭:৪৭, শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২, ১৪ শ্রাবণ ১৪২৯

রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দবনের গহীনে যার বাস। দিনের পর দিন শিকারিদের দৌরাত্ম্য এবং নানা কারণে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা সুন্দরবনে কমতে বসেছিল। কিন্তু সঠিক পদক্ষেপ, সুন্দরবনের বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্য কমায় বাঘের সংখ্যা সর্বশেষ জরিপে বেড়েছে। 

ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে ২০১৪-১৫ সালে বন অধিদপ্তর পরিচালিত জরিপে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর ২০১৭-১৮ সালের জরিপে ১১৪টি বাঘের সন্ধান পায় বন অধিদপ্তর। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়ে ৮ শতাংশ। চলতি বছর তৃতীয়বারের মতো ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে মাধ্যমে বাঘ গণনার  কাজ শুরু হচ্ছে। এর মাধ্যমে জানা যাবে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা কত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য সুন্দরবনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকাকে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহল ফাঁড়ি। পাশাপাশি চোরা শিকারিদের তৎপরতা বন্ধে চালু হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট পেট্রোলিং। বর্তমানে সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে বাঘ দেখতে পাচ্ছেন পর্যটকরা। এছাড়া বন বিভাগের কর্মকর্তারাও আগের তুলনায় বেশি বাঘ দেখছেন। সার্বিক বিবেচনায় বলা যায় বাঘের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে সঠিক জরিপের মাধ্যমেই উঠে আসবে আসলে কি পরিমাণ বেড়েছে বাঘের সংখ্যা।

বন বিভাগের তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালের জরিপে ৪২৫টি বাঘ পাওয়া যায়। এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার তথ্য পাওয়া যায়। ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। পরের বছর ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় পাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানান ধন বাহাদুর তামাং। ২০০৪ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ৪৪০টি। তবে তার আগে ১৯৯৬-৯৭ সালে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০ থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে পায়ের ছাপ দেখে বাঘ গণনা করা হতো।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা, বয়স ও লিঙ্গ অনুপাতে সুন্দরবনের কম বাঘ সম্পন্ন এলাকায় বাঘ স্থানান্তর, অন্তত দুটি বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার  স্থাপন ও মনিটরিং করা, বাঘের পরজীবীর সংক্রমণ ও অন্যান্য ব্যাধি এবং এর মাত্রা নির্ণয়, উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, সুন্দরবনের লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় নাইলনের রশির বেষ্টনী তৈরি করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় বন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে আগামী অক্টোবর থেকে সুন্দরবনে শুরু হবে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ। পাশাপাশি বাঘের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত সুন্দরবনে থাকা চিত্রা হরিণ ও শূকরের সংখ্যাও গণনা করা হবে।

বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা স্থানীয় জনগণকে যুক্ত করে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম করেছি। তারা সেখানে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে আমাদের সঙ্গে কাজ করেন। কোনো বাঘ যদি লোকালয়ে চলে আসে- তারা যাতে আমাদের খবর দেয়, গ্রামবাসী বাঘটাকে যেন মেরে না ফেলে সেই ভূমিকাটাও তারা পালন করেন। এই জনসম্পৃক্ততার কারণে বাঘ পিটিয়ে মারার ঘটনা কমে এসেছে।

তিনি বলেন, বাঘের সংখ্যা ২০১৮ সালে ১১৪টি পেয়েছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা আছে এবছর থেকে আমরা তৃতীয়বারের মতো ক্যামেরা ট্র্যাপিং শুরু করবো। সেটা করতে পারলে হয়তো বাঘের সংখ্যা জানা যাবে। এমনিতে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব পর্যটক সুন্দরবনে গেছেন তারা অনেকে বাঘ দেখেছেন, সেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে। কিন্তু তার ওপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি না বাঘের সংখ্যা বেড়ে গেছে । এটার একটা বৈজ্ঞানিক তথ্য লাগবে। এটা এ বছর শুরু করতে পারলে ২০২৩ সালে না হলেও ২০২৪ সালে আমরা হয়তো আরেকটি রেজাল্ট দিতে পারবো।

২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ সমৃদ্ধ ১৩টি দেশের সরকার প্রধানদের সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষণকে বেগবান করার জন্য এক ঘোষণাপত্র তৈরি হয়। তার আলোকেই প্রতি বছর ২৯ জুলাই ‘বিশ্ব বাঘ দিবস’ পালন করা হয়। তবে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফের তথ্য অনুযায়ী বাঘ সমৃদ্ধ ১৩টি দেশের মধ্যে কম্বোডিয়া, লাও পিডিআর এবং ভিয়েতনামে বাঘ স্থানীয়ভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

২৯ জুলাই বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হলেও প্রাকৃতিকভাবে বাঘ টিকে আছে এমন দেশগুলোতে গুরুত্ব সহকারে দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাঘ আমাদের অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’। এবছর বাঘ দিবস উপলক্ষে ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে বন অধিদপ্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় আলাদা চারটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article


মিয়ানমারের ২৮৮ সেনা ও বিজিপি সদস্যদের হস্তান্তর

কোনো প্রার্থীর প্রচারে থাকলে এমপিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

পাটশিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে : নানক

বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা

ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় ভারত

ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

র‌্যাবের ১২তম মুখপাত্র হলেন কমান্ডার আরাফাত ইসলাম

প্রচণ্ড গরমে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সতর্ক থাকার পরামর্শ

প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড যাচ্ছেন আজ

ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির

বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গঠন করা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী