চরমোনাই পীরের যত ভণ্ডামি
- পীরের মহত্ত্ব বাড়াতে নিজেকে ‘নবীর সমতুল্য বলেও দাবি করেছিলেন ফয়জুল করিম।
- মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম ব্যবসাকেও স্বার্থ হাসিলে রাসুলের (স.) এর সুন্নাত বলে চালিয়ে দিতেন তিনি।এমএলএম কোম্পানি 'এহসান গ্রুপে'র জালিয়াতি প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত এই কোম্পানিতে অর্থ লগ্নি করা সুন্নত বলেও ফতোয়া দিয়েছিলেন তিনি।
ধর্মের টোপে কিছু মুরিদ বানিয়েই কথিত ‘চরমোনাই পীর’ বনে যান মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম। মাদরাসা শিক্ষা হাতেখড়ি হলেও রপ্ত করেন কুফরি কিংবা শিরকি কিছু কৌশল। আর এসব পুঁজি করেই নিজের দরবারে ভেড়াতে থাকেন অতি সাধারণ কিছু ধর্মপ্রিয় মুসলমানদের। ওয়াজ-মাহফিলের নামে খুলে বসেন নাচানাচির মঞ্চও। এভাবেই জমে ওঠে তার ‘পীর ব্যবসা’। চরমোনাই পীরের ভণ্ডামির শতশত নমুনা থাকলেও মূর্খ বানিয়ে রেখেছেন অন্ধ মুরিদদের। তবে তার এসব অপকর্ম নিয়ে সরব রয়েছেন দেশের শীর্ষ আলেমরা।
জানা গেছে, ‘পীরের’ সাইনবোর্ড লাগিয়ে একাধিক ভুয়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ফয়জুল করিম। তার প্রতিষ্ঠানে অর্থ বিনিয়োগ করলে সহজে ‘জান্নাত’ মিলবে বলে আশ্বাস দিতে থাকেন এক শ্রেণির লোকদের। পীরকে বিস্বাস করে অনেকেই খাটান মূলধন। কষ্টার্জিত সঞ্চয়ের টাকা ভেঙেও ফয়জুলের ব্যবসায় নাম লিখিয়েছেন অনেক দিনমুজর। মুরিদদের দিয়ে প্রচারণার পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলেও নিজের ব্যবসা ‘হালাল’ বলে তুলে ধরতেন কথিত এই পীর। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম ব্যবসাকেও স্বার্থ হাসিলে রাসুলের (স.) সুন্নত বলে চালিয়ে দিতেন তিনি। এমএলএম কোম্পানি 'এহসান গ্রুপে'র জালিয়াতি প্রকাশের আগ পর্যন্ত এই কোম্পানিতে অর্থলগ্নি করা সুন্নত বলেও ফতোয়া দিয়েছিলেন তিনি।
চরমোনাইয়ের এই পীরের রয়েছে কবরের ব্যবসাও। মুসলমানের শেষ ঠিকানা কবরের জায়গা বেচেও কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। কবরের ওপর সোলার প্যানেল বসিয়ে শিল্প কারখানা বানানোরও স্বপ্ন দেখেন তিনি। এভাবে ব্যবসার মাধ্যমে হাজারো মানুষকে ঠকালেও যেন অর্থের লোভ ছাড়তে পারেননি এই ভণ্ড পীর। ধর্মের দোহাই আর দরবারের নামে বাগিয়ে নিয়েছেন অনেকেরই জমি। এই তালিকায় বাদ পড়েননি নিজের আত্মীয়-স্বজন কিংবা মুরিদরাও। এখানেই শেষ নয়, দেশের একমাত্র হক্কানি পীর বলেও দাবি করেন ফয়জুল করিম। যদিও বাবার অসিয়ত অনুযায়ী বড় ছেলে সৈয়দ রেজাউল করিম বর্তমান পীর। অথচ নিজের আপন ভাইসহ অন্যসব হক্কানি পীরদেরও ভণ্ড বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
তথ্যমতে, পীরের মহত্ত্ব বাড়াতে নিজেকে ‘নবীর সমতুল্য' বলেও দাবি করেছিলেন ফয়জুল করিম। এই জমানায় কোরআন অবতীর্ণ হলে তার দাদা ইসহাক ও বাবা ফজলুলের নাম উল্লেখ থাকতো বলেও মনে করেন তিনি, যাকে এ দেশের আলেম সমাজ সম্পূর্ণ শিরক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তার ওয়াজ-মাহফিলে জিকিরের নামে চলে লম্ফঝম্প ও নাচানাচি, যাকে দেশের আলেম সমাজ বেদায়াত বললেও কথিত এই চরমোনাই পীর একে আল্লাহ ও রাসূলের এশক বলে জায়েজ হিসেবে চালিয়ে আসছেন।
অন্যদিকে, তার বিপুল অর্থসম্পদের উৎস নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। আত্মীয় স্বজনসহ এলাকার লোকজন, এমনকি নিজের মুরিদদের জায়গা জমি, অর্থ আত্মসাৎ ও জবরদখল করে শতশত কোটি টাকা কামিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এলাকার অনেক ভুক্তভোগী। যারা এই কথিত পীরের ভয়ে এখন এলাকা ছাড়া।
এছাড়া বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলে কোরআন-হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা দেন এই পীর। ভোটের মাঠে নেমেও থেমে নেই পীরের ধর্ম ব্যবসা। সাম্প্রতিক বিসিসি নির্বাচনে নিজের প্রতীক হাতপাখায় ভোট দিলে নাকি জয়ী হবে ইসলাম বা আল্লাহর নবী এবং তাকে ভোট দিলে জান্নাত পাওয়া যাবে বলেও ভোটারদের গ্যারান্টি দেন তিনি।
ফয়জুল করিমের প্রতারণা থেকে রেহাই পাননি নিজের মেয়ের শ্বশুরও। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে বেয়াই’র টাকা দিয়েই আয়োজন করেন মেয়ের অলিমা বা বিবাহ ভোজ। অথচ এ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল ছেলের বাড়িতে।
সমালোচকরা বলছেন, সৈয়দ ফয়জুল করিম মূলত উত্তরাধিকার সূত্রে চরমোনাই'র পীর হয়েছেন। কিন্তু একজন হক্কানি পীরের যে বৈশিষ্ট ও গুণাবলী থাকার কথা তার লেশ মাত্রও নেই তার মাঝে। তিনি মূলত ধর্মের নামে সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্ল্যাকমেইল করে নিজের পীর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য।