মাকে ঘর থেকে বের করে দেন চরমোনাই পীর ফয়জুল করিম!
চরমোনাই পীর ফয়জুল করিমের অত্যাচারে মা-বাবাও ছিলেন অতিষ্ঠ। ছেলের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ত্যাজ্যপুত্র করতেও বাধ্য হন বাবা। যদিও চাচার অনুরোধে রেহাই পান তিনি। কিন্তু বাবা ফজলুল করিমের মৃত্যুর পরই মাকে বের করে দেন কথিত এই পীর।
স্বঘোষিত চরমোনাই পীর সৈয়দ ফয়জুল করিম। যার বাইরের রূপে ভিন্নতা থাকলেও ছোটবেলা থেকেই ছিলেন বেশ উচ্ছৃঙ্খল। আর শৈশব-কৈশোর বয়সেই হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। তার অত্যাচারে মা-বাবাও ছিলেন অতিষ্ঠ। ছেলের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ত্যাজ্যপুত্র করতেও বাধ্য হন বাবা। যদিও চাচার অনুরোধে রেহাই পান তিনি। কিন্তু বাবা ফজলুল করিমের মৃত্যুর পরই মাকে বের করে দেন কথিত এই পীর। ছেলেকে নিয়ে এমনই রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছিলেন খোদ মা।
জানা যায়, চরমোনাই পীর ফয়জুল করিমের বয়স যখন ১৫ তখন দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার বাবা সৈয়দ ফজলুল করিম। কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ে মানতে পারেননি ফয়জুল। এ নিয়ে প্রায়ই ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙতেন। এমনকি মায়ের ওপরও চালাতেন নির্যাতন। এজন্য বাবা বলতেন- ‘হায় আফসোস! এ ছেলে কীভাবে আমার ঘরে জন্ম নিলো’। ফয়জুলের বয়স যখন ২২ তখন মারা যান চরমোনাইয়ের দ্বিতীয় পীর ফজলুল করিম। বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের ওপর অত্যাচার আরও বেড়ে যায়। শেষমেশ মাকেই বের করে দেন বাড়ি থেকে।
পীর ফয়জুল করিম খোঁজখবর নেন কিনা সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগী মা বলেন, নিজেকে পীর দাবি করলেও ইসলামে মায়ের মর্যাদা কী তা কখনো আমল করেননি ফয়জুল করিম। স্বামীর মৃত্যুর পর আমাকে তাড়ানোর জন্য খুঁজতে থাকেন বিভিন্ন কৌশল। কিন্তু গ্রামের নারীরা ফয়জুলকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এজন্য নারীদের আটকাতে ইট-পাটকেল, সাপ আর মলমূত্রও ছুঁড়ে মারতেন। রাতে আমার ঘরের সামনে তার দলের লোকেরা দলবেঁধে মলত্যাগও করতেন। একপর্যায়ে আমাকে বাড়িছাড়া করেন। তবে পেটের সন্তান না হলেও মা হিসেবে কখনো তাকে অভিশাপ দেইনি।
সূত্রমতে, স্বামীর ভিটা চরমোনাই ছেড়ে ঢাকায় এলেও থামেনি ফয়জুল করিমের অত্যাচার। সম্পত্তি-দরবার নিজের একক আধিপত্যের জন্য হত্যাচেষ্টাও চালানো হয়েছিল মায়ের ওপর। এসব নীপিড়ন সইতে না পেরে নিজ গ্রাম নোয়াখালীতে ফিরে যান ভুক্তভোগী মা। এরপরও ক্ষান্ত হননি কথিত পীর ফয়জুল করিম। বাবার করে যাওয়া অসিয়তনামার বিরুদ্ধেও মামলা করেছিলেন তিনি। কিন্তু অসিয়তনামা বহাল রাখেন আদালত।
‘ভণ্ড’ এই পীরের বেপরোয়া জীবনযাপন নিয়ে চরমোনাই ইউনিয়নের ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ বলেন, ফয়জুল করিম নিজেকে পীর দাবি করলেও গ্রামের অনেকেই তাকে ভন্ড পীর, এমনকি ইবলিসের বাবাও বলে থাকেন। নিজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক খুবই খারাপ। কেননা তিনি বাবা-মাসহ কাউকেই শান্তিতে থাকতে দেননি। তার অত্যাচারে গ্রামের অনেক লোকজনও বাড়িছাড়া হয়েছিলেন। ফলে নিজ গ্রামের অধিকাংশ লোকই তাকে ঘৃণা করেন। তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ সহজ-সরল মানুষদের ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে ‘ব্রেনওয়াশ’ করে মুরিদ বানান এই পীর।