নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত ৯০ শতাংশ ব্যক্তিরই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার প্ৰয়োজন নেই!
একটি দেশ কাকে ভিসা দেবে বা দেবে না, সেটা সব সময়ই সেই দেশটির নিজস্ব ও অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমরা জানি, উন্নত জীবন গড়তে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য অনেকেই ভিসার আবেদন করেন, কিন্তু সবাই ভিসা পান না। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি নতুন নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ভিসানীতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধা দেওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত করার সঙ্গে জড়িত বা দায়ী ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত ৯০ শতাংশ ব্যক্তিরই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার প্ৰয়োজন নেই এমনকি এতে সাধারণ মানুষেরও উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই বলেও জানান তারা।
তারা বলছেন, সাধারণত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সরাসরি নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকেন না। তারা শুধু আইন প্রয়োগ, নির্দেশনা প্রদান ও মনিটরিং করেন। কিন্তু সরাসরি প্রয়োগ করেন নিম্নপদস্থ কর্মকর্তারা। যেমন একজন বিচারক রায় ঘোষণা করেন কিন্তু তা প্রয়োগ বা কার্যকর করে থাকে প্রশাসন'র উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে বিচার প্রার্থী বা আসামিকে গ্রেফতারকারী বা শাস্তি প্রদানকারী জল্লাদ পর্যন্ত । বিচারক বা তার পরিবারের সদস্যরা প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়া বা বসবাসের কথা ভাবতেই পারেন। কিন্তু খুব কম সংখ্যক সাধারণ একজন আইনজীবী বা পুলিশ সদস্য যুক্তরাষ্ট্র যাওয়া বা বসবাসের চিন্তা করেন।
তেমনই পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যত সহজে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কথা খুব সহজেই ভাবতে পারেন, ভোট কেন্দ্র পাহারায় থাকা একজন সিপাহী তেমনটি ভাবতে পারেনা বা প্রয়োজনই মনে করেন না। আর এদের সংখ্যাই অনেক অনেক বেশি। বলা যায় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত এমন ব্যক্তিবর্গের সংখ্যা ৯০ শতাংশ, যারা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বা বসবাসের চিন্তাও করেননা। তাহলে ভিসার ভয় দেখিয়ে কি করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে যুক্তরাষ্ট্র? এছাড়া, নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
অন্যদিকে, যারা ভাবেন পড়াশোনার জন্য আমেরিকা যেতে হবে বা সেখানে গিয়ে প্রচুর অর্থ আয় করবেন, যাদের সেদেশে যাবার খরচ বহন করার সামর্থ আছে, তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়, যতটা বেশী মধ্যপ্রাচ্যের। কিংবা চাকরি থেকে অবসর নিয়ে শেষ জীবন বিদেশে কাটাবেন। অথবা যাদের পরিবার কিংবা সেখানে ব্যবসা রয়েছে এই শ্রেণিটা হচ্ছে এলিট শ্রেণী যাদের সংখ্যা অনেক কম। হতে পারে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলেন, গত নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪ জন পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্য ছিলেন ৬ লাখ ০৮ হাজার আর বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন প্রায় ৩ হাজারের মতো ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক লোকেরই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার দরকার পড়েছে। কাজেই এই ভিসানীতি নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত অধিকাংশ কর্মকর্তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে না। একই সাথে সাধারণ মানুষের ওপরেও এই ভিসানীতি কোনো প্রভাব ফেলবে না।
তবে নতুন মার্কিন নীতি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। নীতিটি ভালো, এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। নতুন মার্কিন ভিসানীতি উচচপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা বা রাজনৈতিক নেতাদের আমাদের নির্বাচনী বিধিমালা মানতে যেমন তাড়িত করবে তেমনই বিরোধী দলগুলোকেও নির্বাচন নিয়ে কোনো সহিংসতার বিষয়ে সতর্ক করবে। মার্কিন এই নীতির কারণে এখন বিএনপির নির্দলীয় সরকারের দাবি ও নির্বাচন প্রতিহত করার অবস্থানের যৌক্তিকতা থাকবে না বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।