রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ন নিয়ে নেতিবাচক প্রশ্নের উত্তরে বিবিসি সাংবাদিককে যে মোক্ষম জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরের সময় আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন সাংবাদিক ইয়ালদা হাকিম। সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন তিনি। প্রায় আধঘণ্টার ওই সাক্ষাৎকারটি গত ১৬ মে, বিবিসির বাংলা বিভাগ প্রকাশ করে।
ইয়ালদা হাকিম প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, আপনি যখন ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, তখন পুরো বিশ্ব বাংলাদেশ ও আপনার প্রশংসা করেছে। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে সংখ্যাতিরিক্ত মানুষ বসবাস করছে, ক্যাম্পে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটছে, সহিংসতা হচ্ছে। তাদের আরেকটি দ্বীপে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে!
এর জবাবে উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বিবিবি সাংবাদিককে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি কি সেখানে গিয়েছেন? দেখেছেন দ্বীপের পরিস্থিতি?। তিনি বলেন, ‘সেখানে যারা গিয়েছে, তারা অনেক ভালো অবস্থায় বসবাস করছে। কারণ সেখানে এক লাখ পরিবারের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনাকে কে বলেছে সেটা বন্যা প্রবণ? বন্যা ঠেকাতে সেখানে সবকিছুই করা হয়েছে। সেখানে ভালো স্কুল, উন্নত স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। ক্যাম্পের চেয়ে সেখানে বসবাসের ব্যবস্থা অনেক ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন যেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ওই এলাকার পরিবেশ পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে। ওখানে গভীর জঙ্গল ছিল, সেটা এখন আর নেই। তারা এখন এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের সঙ্গে মারামারি করছে।এমনকি অস্রয়দাতা বাঙালিদের উপরও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে।তারা মানব পাচার, মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িয় হচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ করার আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গারা যাতে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা।’
কিন্তু রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া কি নিরাপদ? হাকিমের এমন প্রশ্নের জাবাবে শেখ হাসিনা বলছেন, ‘জাতিসংঘ এবং অন্য সংগঠনগুলোর সেজন্য ব্যবস্থা করা উচিত। তাদের (রোহিঙ্গাদের) নিজেদের দেশেই তাদের নিরাপদ থাকার কথা। এটা জাতিসংঘের নিশ্চিত করার দায়িত্ব, আমাদের না।’
এই বিষয়ে কি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বাংলাদেশ যথেষ্ট সমর্থন পাচ্ছে? জানতে চান বিবিসির ইয়ালদা হাকিম। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা সমর্থন করছে, আলোচনা করলেই তারা বলে, হ্যাঁ, তাদের ফিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু তারা ইতিবাচক কিছু করছে না। কেন? এটা আমার প্রশ্ন। মানবাধিকারের কথা চিন্তা করে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনিই বলুন, কোনো দেশ কীভাবে ১০ লাখের বেশি মানুষের বোঝা বহন করবে? কত দিন করবে? দিন দিন এটা আরও বড় হচ্ছে, আমরা এই বোঝা কত দিন টানবো? তাদের উচিত নিজেদের দেশেই ফিরে যাওয়া। তারাও সেটাই চায়। আর এজন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো বেশি এবং যথেষ্ট সমর্থন প্রয়োজন।’