সংবাদ প্রকাশের প্রক্রিয়ায় কার দায় কতটুকু?

জাকির নামের দিনমজুর দ্রব্যমূলের দাম নিয়ে প্রকাশ করা ক্ষোভ শিশু সবুজের ছবির নিচে বসিয়ে দেয়ার নাম কারসাজি।
প্রথম আলোর প্রতিবেদক শিশুটিকে উৎকোচ প্রদান ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ছবি তুলেছিলেন,যা ছিল শিশু নির্যাতন বা প্রতারণার মতো অপরাধ।
একটি জাতীয় পত্রিকায় সাংবাদিকের তুলে আনা সংবাদকে ছাপার উপযোগী করে সাজিয়ে এবং ছবিসহ নানাভাবে দৃষ্টিনন্দন ও সঠিক বার্তা প্রদান করতে বিভিন্ন ধাপে কাজ করেন সহ-সম্পাদক, বার্তা-সম্পাদক, পৃষ্ঠাসজ্জাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সংবাদ কর্মীরা।কিন্তু মাঠের প্রতিবেদকের সংগৃহিত তথ্যের উপস্থাপন যদি ভুল বার্তা দেয় পাঠকদের, তাহলে সেই দায় কার?
অন্যদিকে মাঠের প্রতিবেদক যদি মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন,সেটি পত্রিকা অফিসে বসে যাচাইয়ের উপায় থাকে না। তবে সম্পাদকদের ক্ষমতা রয়েছে সেই তথ্যটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা,যাতে সমাজে বিভ্রান্তি না ছড়ায়।অথবা প্রতিবেদকের সঠিক তথ্যকে ভুল উপস্থাপনের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর ক্ষমতাও রয়েছে সম্পাদকের।আর পাঠকের কাছে ভূল বার্তা পৌঁছানো একটি গুরুতর অপরাধ। গত ২৬ মার্চ নানান মাত্রায় এমন অপরাধটিই করেছে দৈনিক প্রথম আলো।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো যে সংবাদটি প্রকাশ করেছে সেখানে তথ্যগত ভুলের চেয়ে ছাপার কারসাজিই বেশি ছিলো। সেদিন জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে সবুজ নামের শিশুটি ফুল বিক্রি করছিলো এটি সত্য এবং জাকির নামের দিনমজুর দ্রব্যমূলের দাম নিয়ে যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলো সেটিও সত্য। কিন্তু জাকিরের কথাটি শিশু সবুজের ছবির নিচে বসিয়ে দেয়া ছিলো 'ইনহাউজ টেকনিক' বা কারসাজি যা করেছিলেন পৃষ্ঠাসজ্জার বা সম্পাদনার দায়িত্বে কর্মরত ব্যক্তি।
এটি নিশ্চিত, যে দিন মজুর জাকির এর কথাগুলো যদি ৭ বছর বয়সী ফুল বিক্রেতার মুখ দিয়ে বের হয় তাহলে সংবাদটি আরো চমৎকার হয় এবং পাঠকের মনে তা ব্যপক প্রভাব বিস্তার করে। প্রচ্ছন্নভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে স্বাধীনতাকেই দায়ী মনে হয়। মূলত এই চিন্তাধারা থেকেই কারসাজি টি করেছে প্রথম আলো।
তবে প্রতিবেদক তথ্য সংগ্রহ করতে যেয়ে যদি কোনো অসৎ উপায় বা প্রতারণার আশ্রয় নেন সেটির জন্য তিনি অবশ্যই দায়ী থাকবেন।আর এ ক্ষেত্রে প্রথম আলোর প্রতিবেদক শিশুটিকে উৎকোচ প্রদান ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ছবি তুলেছিলেন,যা ছিল শিশু নির্যাতন বা প্রতারণার মতো অপরাধ।বিশেষ করে আন্তর্জাতিক শিশু সনদের পরিষ্কার লঙ্ঘন।
এছাড়া ফটো ফিচার বা ছবির নীচে ছাপার অক্ষরে লিখা ক্যাপশনটি যারা সম্পাদনা করেছেন তারা প্রত্যেকেই ভুল বার্তা ডেলিভারির জন্য দায়ী সমানভাবেই।এক্ষেত্রে মাঠের প্রতিবেদককে দায়ী করা যায়না।
সর্বোপরি প্রতিটি সংবাদের জন্য চুড়ান্তভাবে দ্বায়বদ্ধ থাকেন পত্রিকার সম্পাদক। সম্পাদকের নিজের বিচার বিবেচনায় একটি সংবাদ চুড়ান্তভাবে পত্রিকায় স্থান পায়। এ ক্ষেত্রে প্রথম আলোর সম্পাদক এই নিউজের সর্বোচ্চ দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।চূড়ান্ত শাস্তির যোগ্য প্রাপক তিনিই।